বীমা নীতি বাস্তবায়নের সময়সীমা নতুন করে নির্ধারণ করা যেতে পারে

একটি বীমা কোম্পানিকে আমরা তখনই ভালো বলতে পারব, যদি দেখি যে এর জীবন বীমা তহবিল উত্তরোত্তর বাড়ছে। ব্যবসা বাড়বে সঙ্গে জীবন বীমা তহবিলও বাড়তে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনেক বীমা কোম্পানি ভালো করতে পারছে না। তাদের জীবন বীমা তহবিল বাড়ছে না। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক।

নতুন বীমা কোম্পানি তাদের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত জীবন বীমা তহবিল বাড়তে থাকে। কারণ সময়ে খুব বেশি বীমা দাবি পরিশোধ করতে হয় না। এর পর থেকেই কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায়। একদিকে আপনাকে বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে জীবন বীমা তহবিলের আকারও বাড়াতে হচ্ছে, এটিই প্রকৃত চ্যালেঞ্জ। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের এখানে কিছু বড় কোম্পানির জীবন বীমা তহবিলের আকার ক্রমেই কমছে। বিভিন্ন কারণে কিছু কোম্পানি পথে বসে গেছে। তাদের গ্রাহকরা অর্থ পাচ্ছে না। বিষয়গুলো যদি সমাধান করা না যায়, তাহলে বীমা খাতের উন্নতি হবে না।

দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে, শিক্ষার হার বাড়ছে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। এর সবই কিন্তু জীবন বীমা খাতের জন্য ভালো নির্দেশক। কিন্তু আমরা সুযোগকে কাজে লাগাতে পারছি না। পাঁচ বছর ধরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বীমা খাতের অবদান পয়েন্ট করে কমছে। বীমা খাতের প্রতি মানুষের আস্থার বিষয়টি খুব খারাপ পর্যায়ে আছে বলে আমার কাছে মনে হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা চেষ্টা করছে, সরকারেরও নির্দেশনা আছে, ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনও চেষ্টা করছে। তার পরও ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারছি না। অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মের কারণে টাকা চলে গেছে। ভালো জায়গায় বিনিয়োগ করতে না পারায় তাদের রিটার্ন নেই।

বীমা করার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। বৈচিত্র্য আনতে হবে বীমা পণ্যে। স্বাস্থ্য খাতে মানুষের ব্যয় বাড়ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা ভালো সমাধান হতে পারে। সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালুর চেষ্টা করছে। বীমা কোম্পানিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা উচিত। প্রচলিত জীবন বীমার ক্ষেত্রে আমরা এখনো এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছি। কিন্তু চ্যানেলটি খুবই ব্যয়বহুল। বিভিন্ন দেশে কিন্তু এর বিকল্প চ্যানেল আসছে। এর মধ্যে অন্যতম সফল ব্যাংক-ইন্স্যুরেন্স চ্যানেল। অর্থাৎ ব্যাংক একটি বীমা কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে তার গ্রাহকের কাছে বীমা পলিসি বিক্রি করবে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে এটা একটি সফল মডেল হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও এটি চালু করার চেষ্টা চলছে। আমরা বর্তমানে ব্যক্তি এজেন্টের মাধ্যমে কাজ করি। করপোরেট এজেন্টের বিষয়টিও চালু করা যেতে পারে। এছাড়া এনজিওগুলোকেও সঙ্গে নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। দুর্ঘটনা বীমা নিয়েও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। শস্য বীমাও চালু করা যেতে পারে।

সরকার দেশের বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য ২০১৪ সালে জাতীয় বীমা নীতি প্রণয়ন করেছিল। এতে ৫০টি অ্যাকশন প্ল্যান ছিল। কী করা হবে, কারা এগুলো বাস্তবায়ন করবে, সেগুলো নির্ধারণ করে দেয়া ছিল। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল এতে। ২০২১ সালে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। অথচ এর অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও এতে বীমাসংক্রান্ত সব সমস্যাই উঠে এসেছিল। কীভাবে সমাধান হবে সেটিও বলা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন আমরা করতে পারিনি। যদিও সময় শেষ হয়ে গেছে, তবু নতুন করে আমরা এটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারি।

গ্রাহককে বীমা কোম্পানির সক্ষমতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য বেশকিছু নির্দেশক রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে বীমা কোম্পানির সক্ষমতা পরিমাপ করা যায়। এর একটি হচ্ছে সলভেন্সি মার্জিন। আমার যে সম্পদ রয়েছে সেটি দিয়ে যদি দায় মেটাতে পারি, তাহলেই আমি সলভেন্ট। ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বোঝা যায়, যদি রেটিং সঠিক হয়ে থাকে। বীমা দাবি কত বাকি আছে এবং নিষ্পত্তির হার কেমন, সেটি দিয়েও সক্ষমতা পরিমাপ করা যায়। আরেকটি বিষয় দেখা যেতে পারে; বীমা দাবি কতদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি বছর ব্যবসা বাড়ছে কিনা, সম্পদ বাড়ছে কিনা, লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়ছে কিনাএগুলোও দেখা যেতে পারে। সব মিলিয়ে এসব নির্দেশকের মাধ্যমে একটি বীমা কোম্পানি ভালো নাকি খারাপ, সেটি পরিমাপ করা সম্ভব।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন