বীমা খাতের
সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে
চাই?
বীমা খাতের
সঙ্গে আমি
৩৭ বছর
ধরে জড়িত।
শুরুর দিকে
কোম্পানিগুলো নিয়ম-নীতি
ও আদর্শ
নিয়ে পরিচালিত
হয়নি। সে
সময় কোম্পানিগুলোকে
দেখারও কেউ
ছিল না।
আইডিআরএ ছিল
না, সরকারি
নজরদারিও সেভাবে
ছিল না।
পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর
পর্ষদও সেভাবে
দায়িত্ব বোধ
করেনি। বর্তমানে
মানুষ বীমা
করতে এগিয়ে
আসছে। এতে
প্রতিটি কোম্পানি
সতেজ হয়েছে
এবং নিয়ম-নীতি
মানার চেষ্টা
করছে। অতীতে
বিভিন্ন কারণে
বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি
হয়েছে, কিন্তু
২০১০ সালে
আইডিআরএ প্রতিষ্ঠার
পর নিয়ম-নীতির
মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর
কার্যক্রম পরিচালনার
উদ্যোগ নেয়া
হয়েছে। কিছু
সমস্যা থাকলেও
বর্তমানে যেভাবে
চলছে তাতে
আমি মনে
করি সামনের
দিনগুলোয় বীমা
শিল্পের সামগ্রিক
উন্নতি হবে।
বীমার পরিমাণ বাড়ার কারণেই কি আপনি
এ আশাবাদ ব্যক্ত করছেন?
এটিই একমাত্র
কারণ নয়।
মানুষের মধ্যে
ধীরে ধীরে
বীমার প্রতি
আগ্রহ বাড়ছে।
কিছু কিছু
ক্ষেত্রে মানুষ
বীমার অর্থ
পাওয়ার ক্ষেত্রে
প্রতারিত হয়েছে,
হয়রানির শিকার
হয়েছে এটা
ঠিক; কিন্তু
এর বিপরীতে
অনেকেই বীমার
কারণে উপকৃতও
হয়েছেন। তবে
যারা বীমা
দাবির অর্থ
ঠিকমতো পরিশোধ
করে না
তাদের কারণে
কিন্তু পুরো
খাতের বদনাম
হয়। আগের
যেকোনো সময়ের
তুলনায় বর্তমানে
বীমা খাতের
পরিধি বেড়েছে।
সরকারও এ
খাতের উন্নয়নে
উদ্যোগী হয়েছে।
আইডিআরএও চেষ্টা
করছে। পাশাপাশি
মানুষও বীমার
বিষয়ে সচেতন
হয়েছে। ফলে
সব মিলিয়েই
আমি মনে
করি যে
আগামী দুই-তিন
বছরের মধ্যে
বীমা খাতের
আরো উন্নতি
আমরা দেখতে
পাব।
আপনার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে
জানতে চাই—বীমা খাতে
কোন জিনিসের অভাব বোধ
করছেন?
বিশেষ করে
জীবন বীমা
কোম্পানি পর্ষদের
মানবিক দিক
থাকতে হবে।
এটি কিন্তু
ব্যবসার চেয়েও
সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
কোম্পানি উদ্যোক্তারা
যদিও সুচারুভাবে
এর কার্যক্রম
দেখছেন না।
প্রিমিয়ামের অর্থ
কীভাবে খরচ
করা হচ্ছে,
কোথায় বিনিয়োগ
করা হচ্ছে
সেটি দেখতে
হবে। অনেক
কোম্পানি ব্যবসা
করছে কিন্তু
তাদের কাছে
টাকা নেই।
অনেকেই ১০০
টাকা প্রিমিয়াম
আনতে গিয়ে
১৫০ টাকা
খরচ করে।
অনেকে আবার
গাড়ি-অফিস
বিভিন্নভাবে খরচ
করে ফেলে।
এক্ষেত্রে কোম্পানির
পর্ষদ ও
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
দুজনেরই দায়
রয়েছে। বিশেষ
করে পর্ষদ
যদি কোনো
অনিয়মের সঙ্গে
জড়িয়ে যায়
সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক
সংস্থাকে বিষয়টি
জানানোর দায়িত্ব
ব্যবস্থাপনা পরিচালকের।
আইডিআরএকেও এ
খাতের সার্বিক
বিষয়ে নজরদারি
করতে হবে।
সরকারেরও এক্ষেত্রে
দায়িত্ব রয়েছে
কারণ বীমা
শিল্পের সঙ্গে
তিন কোটি
মানুষ জড়িত।
একচুয়ারি বা
বীমা-গাণনিক
বলে দেবে
কত টাকা
প্রিমিয়াম এলে
কত টাকা
খরচ করতে
হবে। কিন্তু
অনেকেই এ
নীতি অনুসরণ
করে চলছে
না। বীমা
কোম্পানির ক্ষেত্রে
একচুরিয়াল নীতি
অনুসারে পরিচালনা
করতে হবে।
পর্ষদ ও
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে
এ বিষয়ে
নজর দিতে
হবে। প্রতিষ্ঠানের
অন্যান্য কর্মী
যারা রয়েছেন
তাদেরও যথাযথ
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
দক্ষতা বাড়াতে
হবে। অনেকেই
বলেন যে
একদিনের মধ্যে
বীমা দাবির
অর্থ পরিশোধ
করে দেবেন।
আইনে কিন্তু
এটি বলা
নেই। এক্ষেত্রে
বীমা দাবির
ক্ষেত্রে আইনানুগ
সব প্রক্রিয়া
অনুসরণ করে
নির্ধারিত সময়ের
মধ্যে পরিশোধ
করতে হবে।
বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে
বীমা খাত
ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বাংলাদেশে এ
ধরনের ব্যবস্থা বিস্তার লাভ
করছে না কেন?
এটি খুবই
বাস্তব কথা।
জীবন বীমার
চেয়েও স্বাস্থ্য
বীমার গুরুত্ব
বেশি। কারণ
মানুষের জীবদ্দশায়
এর সুফল
পাওয়া যায়।
যদিও আমাদের
এখানে পুরোপুরি
স্বাস্থ্য বীমা
চালু রাখাটা
কষ্টকর। এক্ষেত্রে
প্রিমিয়াম নির্ধারণ
করাটা বেশ
চ্যালেঞ্জিং। ধনীদের
ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম
বেশি হলেও
সমস্যা নেই।
কিন্তু সাধারণ
জনগণের ক্ষেত্রে
প্রিমিয়ামের টাকা
যথাসম্ভব কম
নির্ধারণ করতে
হবে। অন্যদিকে
বীমা কোম্পানির
টিকে থাকার
জন্য একটি
যৌক্তিক পরিমাণে
প্রিমিয়াম নির্ধারণ
করতে হবে।
আবার চিকিৎসাসেবা
নিশ্চিত করার
জন্য হাসপাতালও
থাকতে হবে।
স্বাস্থ্য বীমা
অবশ্যই প্রয়োজন।
কেউ কেউ
এরই মধ্যে
শুরু করেছেন।
আমরাও করছি।
তবে বিদ্যমান
বাস্তবতায় এটি
বেশ চ্যালেঞ্জিং।
আশা করছি
দ্রুতই এটি
আরো বড়
পরিসরে শুরু
করা সম্ভব
হবে।
নতুন কোন
কোন খাতে
বীমা ব্যবসার সুযোগ রয়েছে?
বাংলাদেশে কিন্তু
প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের
ঘটনা ঘটে।
অথচ আমাদের
এখানে অধিকাংশ
ভবনেরই বীমা
করা নেই।
সরকারি ভবনেরও
বীমা নেই।
গাড়ির বীমাও
সেভাবে হচ্ছে
না। সীমিত
কিছু খাতে
সাধারণ বীমা
কোম্পানিগুলো ব্যবসা
করছে। এ
খাতের প্রতিষ্ঠানের
কমিশনের ক্ষেত্রে
সমস্যা রয়েছে।
এটি যদি
সমাধান হয়ে
যায় তাহলে
প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা
অনেক কমে
যাবে। জীবন
বীমা খাতে
অনেকেই না
বুঝে পলিসি
করে থাকেন।
এজন্য জীবন
বীমা খাতে
প্রত্যেক কর্মীকে
প্রশিক্ষণ দেয়ার
মাধ্যমে বোঝাতে
হবে যে
যিনি পলিসিটি
চালাতে পারবেন
তাকেই যেন
বীমার আওতায়
আনা হয়।
পাশাপাশি পলিসিহোল্ডারদেরও
সচেতন হতে
হবে।
বীমা খাতের
উন্নয়নে কোন
বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত
বলে মনে
করেন?
কোম্পানির পর্ষদকে
গ্রাহকের স্বার্থরক্ষার
বিষয়ে সচেতন
থাকতে হবে।
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে
তাদের দায়দায়িত্ব
পালনে সচেষ্ট
থাকতে হবে।
কোম্পানির পুরো
লাইফ ফান্ডের
দায়িত্ব কিন্তু
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের
কাছেই থাকে।
সততা-নিষ্ঠার
সঙ্গে মানুষকে
বীমা পলিসি
করতে আগ্রহী
করে তুলতে
হবে। এক্ষেত্রে
কোনো ভাঁওতাভাজি
করা যাবে
না। নিয়মকানুন
অনুসরণ করে
কোম্পানিগুলো চলছে
কিনা সেটি
আইডিআরএকে দেখতে
হবে। এজন্য
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির
সক্ষমতা বাড়ানোর
উদ্যোগ নেয়া
জরুরি। এ
বিষয়গুলো নিশ্চিত
করা সম্ভব
হলে বীমা
খাতের উন্নতি
হবে। দেশের
বীমা খাতে
একটি বিদেশী
কোম্পানি কিন্তু
নিয়মতান্ত্রিক ও
সুসংগঠিতভাবে ব্যবসা
পরিচালনা করে
লাভবান হচ্ছে।
আমাদেরও সেভাবে
প্রতিষ্ঠান পরিচালনায়
নজর দিতে
হবে।
সামনের দিনগুলোয় বীমা খাত
কোন অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছেন?
বিভিন্ন সময়ে অনেকে বীমা খাতে প্রতারিত হয়েছেন। আবার অনেকে উপকৃতও হয়েছেন। এসব অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করে মানুষ সচেতন হয়েছে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাও সচেতন হয়েছে। ফলে এখন আগের মতো অনিয়ম করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ কমে গেছে। আমার দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় হয়তো কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে। কিন্তু কেউ বলতে পারবে না যে আমরা কখনো মানুষের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করিনি। আইনে নির্ধারিত শর্তানুসারে সরকার আমাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। অথচ আমরা সেটিই অনুসরণ করছি না। তাই সবার আগে এসব শর্ত ও নিয়নকানুন অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারলে দেশের বীমা খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে।