শিক্ষার্থীরা সময়োপযোগী ও দক্ষ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে তৈরি হচ্ছে

প্রফেসর . মো. জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্ব পালন করছেন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগংয়ের (ইউএসটিসিউপাচার্য হিসেবে। এর আগে চট্টগ্রাম প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য পদেও ছিলেন। ইউএসটিসিসহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা গবেষণার মান নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তা সঙ্গে

শুরুতেই ইউএসটিসির শিক্ষা গবেষণা কার্যক্রম বিষয়ে বলুন।

ইউএসটিসি দেশের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। চট্টগ্রামে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষার পথ দেখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে এখানকার শিক্ষার পরিবেশ খুবই চমৎকার। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলেও এখানকার শিক্ষার মান সুযোগ-সুবিধা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই। ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন চিকিৎসাসেবার উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে। একটি আদর্শ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে উন্নত মানের শিক্ষার প্রয়োজন ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষকের মান, শিক্ষার্থীর মান এবং শিক্ষা গবেষণার পরিবেশ। শ্রেণীকক্ষ, লাইব্রেরি, বিভিন্ন ধরনের ল্যাব, গবেষণাগার, খেলাধুলা  পর্যাপ্ত উপকরণ স্থান, প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর মতো প্রয়োজনীয় কক্ষ ইত্যাদি হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ভৌত অবকাঠামোর উদাহরণ। ইউএসটিসিতে এর সবই রয়েছে।

আপনাদের প্রোগ্রামগুলো বিষয়ে বিস্তারিত যদি বিস্তারিত বলতেন।

আমাদের মেডিকেল ফ্যাকাল্টির পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উত্কর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ, প্রকৌশল, ব্যবসায় প্রশাসন, বায়োকেমিস্ট্রি বায়োটেকনোলজি, ইংরেজি বিভাগের মান খুবই উন্নত মানের। ইউএসটিসির যে কয়েকটি ভিশন রয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো অ্যাক্টিভ লার্নিং অ্যান্ড টিচিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কার্যকরী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রদান করে উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা এবং দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা। তেমনিভাবে ব্যবসায় প্রশাসন, ইংরেজি বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীরাও হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করে সময়োপযোগী দক্ষ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে বের হচ্ছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ল্যাবরেটরি না থাকার একটি অভিযোগ রয়েছে। যদিও শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখানোর জন্য এর গুরুত্ব অনেক। এক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থান কী?

আপনি ঠিকই বলেছেন। শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হাতে-কলমে শেখানোর কোনো বিকল্প নেই। ইউএসটিসিতে উন্নত মানের বেশকিছু ল্যাব রয়েছে। আমাদের একটি গবেষণা সেল রয়েছে, যা ইউআরসি নামে সুপরিচিত। গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা প্রধানত গবেষণা করে এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেন। শিক্ষার্থীরা সরাসরি গবেষণায় সম্পৃক্ত থেকে শিক্ষকদের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে ডা. নুরুল ইসলাম গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ডসহ আর্থিক সম্মাননা আনোয়ারা ইসলাম সিলভার মেডেল অ্যাওয়ার্ডসহ আর্থিক সম্মাননা দেয়া হয়।

তথ্যপ্রযুক্তির উত্কর্ষের কারণে প্রতিনিয়তই চাকরির বাজারেও পরিবর্তন আসছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাক্রম পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনাও জরুরি। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে সিলেবাস হালনাগাদ না করার একটি অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাদের পর্যবেক্ষণ পদক্ষেপ কী ধরনের?

বিশ্বব্যাপীই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তন ঘটছে সর্বত্রই। পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি তাদের সিলেবাস নিয়মিত আপডেট না করে তাহলে সেখানকার শিক্ষার্থীরাও নবতর জ্ঞান অর্জন থেকে পিছিয়ে পড়বে। আউটকাম বেজড কারিকুলামের পাশাপাশি বর্তমানে আমরা ফিউচার রেডি কারিকুলাম নিয়ে কাজ করছি।

দেশের সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়নে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স সেল (আইকিএসি) গঠন করা হয়েছে। ইউএসটিসির শিক্ষা গবেষণার মানোন্নয়নে আইকিউএসি কতটুকু সক্রিয়?

আইকিউএসির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কনফারেন্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর প্রায় সব বিভাগই বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। বিশ্বমানের শিক্ষা গবেষণা নিশ্চিত করাই ইউএসটিসির একমাত্র উদ্দেশ্য। সাম্প্রতিক সময়ে ইউএসটিসি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি পেট্রোনাসের (ইউটিপি) যৌথ উদ্যোগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রথম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ওপর দুদিনব্যাপী ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করা হয়।

শিক্ষার্থী অভিভাবকের উদ্দেশে কিছু বলবেন?

ইউএসটিসিতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি হয় সুনিপুণভাবে। এক বছরের শিক্ষা কার্যক্রম আগে থেকেই নির্ধারিত করা থাকে। শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার অনুযায়ী পুরো বছরের ক্লাস রুটিন যখন পায় তখন পরীক্ষার রুটিনও পেয়ে যায় এবং সে হিসেবেই তারা প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রতিটি ক্লাসরুমই মাল্টিমিডিয়া সুবিধাসমৃদ্ধ। ক্লাসরুমসহ পুরো ক্যাম্পাসকে ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে। লাইব্রেরিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই। সেসব বই মানের দিক থেকেও অনেক উন্নত। আর ইউএসটিসির মূল্যবোধই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কার্যকরী শিক্ষায় শিক্ষিত করা। কাজের মাধ্যমে, হাতে-কলমে শিক্ষা নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জন করে। বছরজুড়ে বিভাগ অনুযায়ী অনেক সেমিনার, ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। সব মিলিয়ে এখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গবেষণার পাশাপাশি খেলাধুলা সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পায়।

দীর্ঘদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। চুয়েটের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।   

একটা সময় ছিল দেশে শিক্ষার হার অনেক কম ছিল। তবে গত কয়েক বছরে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। তবে ব্যাপক আকারে প্রসার ঘটাতে গিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত মানের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলিত ছিল। আমার মতে, এখন শিক্ষা গবেষণার মানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি কারিগরি প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন