নৈতিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক . আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী দায়িত্ব পালন করছেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক শিক্ষার মান পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তা সঙ্গে

দেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীরা কেন আপনার প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেবেন?

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সুপরিসর প্রাকৃতিক পরিবেশে জ্ঞান আহরণ, চর্চা, গবেষণা জ্ঞান সৃজন। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে মানসম্পন্ন জ্ঞান অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে আসবে। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। গবেষণার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য, নিয়মিত গবেষণা জার্নাল বই প্রকাশ ছাড়াও জাতীয় আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে নিয়োজিত হয়। অবকাঠামো উন্নয়ন জোরদারের পাশাপাশি একাডেমিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত করেছি।

কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আইআইইউসি আলাদা?

বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি জ্ঞান সৃষ্টিকেও সমানতালে গুরুত্বপূর্ণ দিতে হয়। আইআইইউসির শিক্ষকরা আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞান বিতরণে সক্ষম। এখানকার শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা এরই মধ্যে দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়েছে। আইআইইউসিতে শতাধিক পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক রয়েছেন, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। সাড়ে চারশর কাছাকাছি শিক্ষক, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, নারীদের জন্য পৃথক একাডেমিক জোনসহ আলাদা বেশকিছু সুযোগ-সুবিধার কারণে আইআইইউসিকে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা হিসেবে দেখবে।

ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কিংবা সেমিস্টার অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি আপনার বিশ্ববিদ্যালয় মেনে চলে কি? সর্বশেষ সেশনে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি কেমন ছিল?

আইআইইউসিতে বছর নতুন একাধিক বিষয়ে পাঠদান চালু হয়েছে। বিএ অনার্স ইন ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, বিএসসি ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ ইন ফাইন্যান্স, এমবিএ ইন ফাইন্যান্স, মাস্টার অব ফার্মেসি এমএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম চালু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০২২ সালের বসন্তকালীন শীতকালীন সেমিস্টারে অনার্স প্রোগ্রামে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল হাজার ২৫২। যদিও ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা তালিকার ভিত্তিতে মোট হাজার ৯৭২ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। শুধু মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর ফলে ইউজিসিসহ সরকারি সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

আইআইইউসিতে নিয়মিত পাঠক্রমের বাইরে শিক্ষার্থীদের জন্য অন্য কোনো ইভেন্ট চালু আছে কি?

আইআইইউসি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিবেশ শুধু শ্রেণীকক্ষের পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি। শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের হিসেবে গড়ে তুলতে নানামুখী সহপাঠক্রমের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে এখানে। আইআইইউসি ডিবেটিং সোসাইটি, ফটোগ্রাফি সোসাইটি, হাল্টপ্রাইজসহ প্রতিটি বিভাগে ক্লাব তৈরির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু আছে। সাংস্কৃতিক ক্রীড়া আয়োজন ছাড়াও সব জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয় আইআইইউসিতে। বার্ষিক ক্রীড়া, নাট্যোৎসব, ক্যারিয়ার মেলা, বইমেলা, শীতকালীন উৎসব, শিক্ষা সফর, ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, সামাজিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, স্টাডি ক্যাম্প ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

গবেষণা কার্যক্রমে আইআইইউসি কতটা সক্রিয়? গবেষণা খাতে বার্ষিক কত ব্যয় করা হয়? বছরে আন্তর্জাতিক জার্নালে কী পরিমাণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে?

গবেষণা কার্যক্রমে আইআইইউসি বেশ সক্রিয়। শুধু এক বছরেই আন্তর্জাতিক জার্নালে আইআইইউসি সংশ্লিষ্টরা ২৩০টি স্কুপাস-ইনডেক্সড আর্টিকেল প্রকাশ করেছে। ২০২২ সালে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্কুপাস জার্নাল অনুযায়ী আইআইইউসি দেশের শীর্ষ ১৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণায় পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। এক বছরে আইআইইউসির সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন (সিআরপি) থেকে ছয়টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সিআরপি থেকে প্রতি বছর তিনটি পিয়ার রিভিউড জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। গত এক বছরে আইআইইউসি গবেষণা খাতে প্রায় কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।

দেশে বেসরকারি খাতের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আইআইইউসির স্থায়ী ক্যাম্পাস সবচেয়ে নান্দনিক। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর যানবাহন সুবিধা কিংবা আবাসন সুবিধা কীভাবে দেয়া হয়?

আইআইইউসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দেশের সবচেয়ে প্রাকৃতিক নান্দনিক পরিবেশে স্থাপিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হলেও নিজস্ব যানবাহন সুবিধার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসেই আবাসন সুবিধা রাখা হয়েছে। আবাসিক হল ছাড়াও ১০০টিরও বেশি বড় যানবাহনের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আনা-নেয়া করা হয়। তাছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সন্নিকটে ক্যাম্পাস হওয়ায় আইআইইউসির নামে একটি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামীতে দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চট্টগ্রাম শহর থেকে শাটল ট্রেন সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব সুবিধা চালু হলে আইআইইউসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নতুন উচ্চতায় উঠে আসবে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এখানকার পাঠদানের সঙ্গে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য কী?

আইআইইউসির সঙ্গে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য হলো এখানে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষাকেও প্রাধান্য দেয়া হয়। কারিকুলামের নিয়মিত কার্যক্রমের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের জ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। শিক্ষাকে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলের বাইরে চিন্তা করে এখানকার আয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অধিকতর জ্ঞান সৃজনে ব্যয় করা হয়, যা বেসরকারি খাতের বিশ্ববিদ্যালয় হলেও আইআইইউসি অন্যদের থেকে ভিন্ন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন