দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা ও গুণী মানুষের হাত ধরে প্রায় ২৭ বছর আগে যাত্রা করেছিল ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড প্রেসিডেন্ট ও উপাচার্য ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। বর্তমানে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তাদের সঙ্গে আরো ১৩ জন স্বনামধন্য বোর্ড সদস্য মিলে প্রাচ্যের মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সঙ্গে পাশ্চাত্যের উদ্ভাবনের মিশেলে এক ব্যতিক্রমী উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। এখানে তুলনামূলক কম খরচে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা পাওয়া যায়। একই সঙ্গে টিউশন ফি থেকে অর্জিত আয়গুলো বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় হয়।
দৃষ্টিনন্দন স্থায়ী ক্যাম্পাসে রয়েছে ৩৪ ফুট উঁচু ও নান্দনিক শহীদ মিনার। রয়েছে সুন্দর অডিটোরিয়াম, উন্নতমানের লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র। এছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম, প্রশস্ত স্টাডি রুম, অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী। সব মিলিয়ে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নত এক পরিবেশ রয়েছে স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৫টি স্নাতক ও ১৪টি স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অর্জনের পাল্লাও বেশ ভারী। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস গোল্ড মেডেল, ইউজিসি বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য জার্নালগুলোয় নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। ইস্ট ওয়েস্টে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় লেদার অ্যান্ড ফুটওয়ার প্রোগ্রাম পরিচালনা হচ্ছে, যা দেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিশেষ অবদান রাখছে।
দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবস্থান বেশ ভালো। অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে বিভিন্ন স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি ও এমএস করছেন। গুগল, ইন্টেল, মাইক্রোসফটের মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাকরি করছেন। দেশেও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কলকারখানায় চাকরি করছেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।
শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যায় পাশে থাকতে দেখা যায়। করোনাকাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সবার জন্য ২০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর আমরা ১১ কোটি টাকার অধিক বৃত্তি দিই। উল্লেখযোগ্য বৃত্তির মধ্যে রয়েছে মেরিট স্কলারশিপ, মেধা লালন ফান্ড, ফ্রিডম ফাইটার স্কলারশিপ ইত্যাদি। মেরিট স্কলারশিপে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা দিয়ে এ বৃত্তি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। আর মেধা লালন ফান্ডে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের পাশাপাশি তাদের জীবনযাপনের খরচও বহন করে।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। বলতে গেলে দেশের মধ্যবিত্ত পরিবার আর নারী শিক্ষার্থীদের প্রধান আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠার আড়াই দশক পর দেশ ও সমাজের কল্যাণে আরো বেশি ভূমিকা রাখছে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দেশের আর্থসামাজিক কল্যাণে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে হাত দিয়েছেন তারা। এদেশে প্রতি বছর লাখ লাখ নতুন গ্র্যাজুয়েট শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু সে তুলনায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। আবার গ্র্যাজুয়েটরা চাকরি করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুনের মধ্যে নিজেদের ধারণ করা আইডিয়াগুলো বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। ফলে তারাও উৎসাহ হারাচ্ছেন, দেশও বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ আজকের পশ্চিমের বড় বড় জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় এ স্টার্টআপগুলো এমন তরুণদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেসব স্বপ্নবান তরুণের জন্য ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। এর প্রধান উদ্দেশ্য সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল উদ্যোক্তা তৈরি করা, যারা শুধু ব্যবসায়িক উদ্যোগই প্রতিষ্ঠা কিংবা স্বকর্মসংস্থান করবে না বরং বাংলাদেশের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এক বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম চালু করেছে। এই কোর্সের আওতায় আগ্রহী গ্র্যাজুয়েটরা তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রশিক্ষণ পাবেন এবং অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার তাদের গাইড করবে। এখানে দেশের প্রতিষ্ঠিত উদোক্ত্যরা এবং পারিবারিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত সফল উৎপাদন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা ক্লাস নেবেন, দেবেন প্রশিক্ষণও। যেখানে তারা ব্যবসা শুরু থেকে পরিচালনার বিভিন্ন ধাপ, প্রতিবন্ধকতা এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ দেবেন। এ কোর্সের ক্লাস হবে ছুটির দিনে, ফলে চাকরিজীবীরাও কোর্সটি করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে কোর্স শেষে সেরা স্টার্টআপগুলোর জন্য প্রারম্ভিক মূলধন সহায়তা দেবে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।
অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর এমএম শহিদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা এ সেন্টারের মাধ্যমে আমরা ভালোমানের উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারব। একই সঙ্গে এ ধরনের কোর্সের মাধ্যমে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সামাজিক উন্নয়নেও সম্পৃক্ত হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক অগ্রগতির উত্থান ও টেকসই স্থিতিশীলতার জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে উদ্যোক্তা চিহ্নিতকরণ, প্রশিক্ষণদান, স্টার্টআপে সহায়তা ও পথনির্দেশনা, প্রযুক্তি ও সরবরাহ চেইনে উত্কৃষ্ট বিপণন ও সামগ্রিকভাবে চৌকস বিশ্বমানের শ্যুম্পিটারিয়ান (প্রখ্যাত অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদ জোসেফ শ্যুম্পেটার) সৃষ্টি করা হবে। সোনার বাংলা কল্যাণ রাষ্ট্র ও সোনার মানুষ গঠনে এ কোর্স অবদান রাখবে বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।’