রাষ্ট্রের উঁচুমানের কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি দেয়ার ক্ষমতা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি

নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক . আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  আইবিএর স্বনামধন্য শিক্ষক, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ এবং একই সঙ্গে একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থাপনা, মুক্তবাজার অর্থনীতি, ব্র্যান্ডিং, প্রোডাক্টিভিটি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন প্রতিভাবান শিক্ষক এবং দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ঢাবির আইবিএতে অধ্যাপনা করছেন। সম্প্রতি  নর্দান ইউনিভার্সিটির নানা বিষয় নিয়ে বণিক বার্তা সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রাস্টি 

বাংলাদেশের পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্ম অভিজ্ঞতা এবং সেই ধারাবাহিকতায় খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে আমরা আপনাকে পেয়েছি আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে। দেশের একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাই।

৩০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএতে, সেই ধারাবাহিকতায় চার বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছি খুলনা নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে।

আমার দায়িত্বকালীন সময়ে আমি চেষ্টা করেছি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি শক্তিশালী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে আমি তা করতে পেরেছি এবং অঞ্চলের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সমর্থ হয়েছি। কাজে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি ৪৫০টিরও বেশি কলেজের মেধাবী শিক্ষকদের। এসব কলেজের মেধাবী প্রতিভাবান শিক্ষক, যারা গবেষণা করতে আগ্রহী, তাদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে তাদের গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। বহির্বিশ্বের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ এবং সংশ্লিষ্টতা রয়েছে আমরা চেষ্টা করি এসব শিক্ষক সেখানে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা পিএইচডি করার সুযোগ পান।

বর্তমানে প্রায় ২০ বিঘা জায়গাজুড়ে আধুনিক সব শিক্ষাসামগ্রী নিশ্চিত করে স্থায়ী ক্যম্পাস অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। আশা করি, দুই বছরের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান করছেন। পাশাপাশি দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সামগ্রিক অর্থে কোনো মিল বা অমিল চোখে পড়েছে কি?

একজন একাডেমিশিয়ান হিসেবে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, একটি রাষ্ট্রে পাবলিক-প্রাইভেট বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়। আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্রসংখ্যা বেশি। আগে যারা ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় যেত, তারা এখন দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আস্থা রাখছে। সত্যিকার অর্থেই তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা পাচ্ছে। এতে দেশের টাকা দেশের ভেতরেই থাকছে। স্বাভাবিক কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিঃসন্দেহে দারুণভাবে সহায়ক।

করপোরেট চাকরি-সংক্রান্ত সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যান বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করপোরেট চাকরিতে অংশগ্রহণ অনেক বেশি। যেহেতু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও অবদান রাখছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব, লাইব্রেরির মান উন্নয়ন শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। রাষ্ট্রের কাছে একটি অনুরোধ, দেশের শিক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করা হোক। পৃথিবীর মধ্যে শিক্ষায় সবচেয় কম বাজেট বাংলাদেশে, মাত্র দশমিক শতাংশ। পাশের দেশগুলোর মধ্যে দশমিক শতাংশ শ্রীলংকায়, দশমিক ৭৫ শতাংশ ভারতে, দশমিক ৭৫ শতাংশ ভুটানে, এমনকি আফগানিস্তানেও আমাদের চেয়ে বাজেট বেশি। আবার বাজেট থেকে বড় বড় সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তা বিদেশে ডিগ্রি নিতে যান। শিক্ষা খাতে আমাদের আরো বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। এটা সময়ের দাবি।

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগোপযোগী আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

অবশ্যই আমরা একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিতে চাই। বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চা অন্যান্য বড় প্লাটফর্মের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখছি। আধুনিক মার্কেটিংয়ের জনক প্রফেসর ফিলিপ কটলারের বিশ্বমানের প্লাটফর্মগুলোতে আমরা যুক্ত রয়েছি। আমরা তিন বছর ধরে ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং সামিট পরিচালনা করছি শিক্ষার্থী এবং প্রফেশনাল জনবলকে আধুনিক মার্কেটিং সম্পর্কে বিশদ জ্ঞানী করার জন্য। আধুনিক মার্কেটিংয়ের জনক প্রফেসর ফিলিপ কটলারের বিশ্বমানের প্লাটফর্মগুলোতে আমারা জনযুক্ত রয়েছি। আমরাও প্রশিক্ষিত হচ্ছি যাতে আগামীতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো বড় পরিসরে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি।

শিক্ষা ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

বর্তমানে আমাদের চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি দেয়ার প্রচলন রয়েছে। শিক্ষা পদ্ধতির প্রচলন হয় ২০০-২৫০ বছর আগের। আগামী ১০-২০ বছরের মধ্যেই শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন চলে আসবে। শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ সময়কে শ্রেণীকক্ষে ব্যয় করবে তা কোনোভাবেই দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ গুণী হয়ে ওঠা এখন সময়ের দাবি। একজন শিক্ষার্থী যিনি আর্কিটেকচার পড়ছেন তার ইতিহাস সাহিত্য পড়ার বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রচলিত থাকলেও আধুনিক বিশ্বে শিল্পজগতে তাল মিলিয়ে থাকতে এমন শিক্ষা কার্যক্রম অতিসত্বর নিজ প্রয়োজনে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শিক্ষা হবে বাস্তব জ্ঞানসম্মত দক্ষতানির্ভর। কারণ, এখন শ্রেণীকক্ষের বাইরের শেখার জায়গাটা রয়েছে, যা ৩০-৪০ বছর আগে ছিল না। তাই চার বছরের স্নাতক এখন দুই বছরে দেয়া বিশ্বব্যাপী শিক্ষাবিদদের আলোচনার শীর্ষে রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন