দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো অবস্থান তৈরি করব

প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীর পরিবার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছেন দেড় শতাধিক। এর মধ্যে পিএইচডিধারী ৬০ জন। সম্প্রতি বণিক বার্তা সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য আবুল কাশেম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স প্রায় দুই দশক হতে চলল। সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন সম্পর্কে জানতে চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ২০ বছরেরও কম। এরই মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। আমাদের অর্জনের পেছনে অনেক কারণের অন্যতম স্বচ্ছতা। যেমন কোনো শিক্ষার্থী বৃত্তি পাওয়ার যোগ্য হলে তাকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করতে বিভিন্ন সময় বরাদ্দ দেয়া হয়। নিয়মিত ল্যাব উন্নয়ন ছাড়াও আগামী পাঁচ বছরে গবেষণার জন্য আমাদের গ্রুপ থেকে ১০ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। তবে আরেকটি বিষয় আমাদের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছে। সেটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি থেকে আমাদের ওপর চাপ না থাকা। এতে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি। আমাদের পথচলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কী কী সুবিধা ভোগ করছে?

শিক্ষার্থীদের যেসব সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার সবই আমরা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য অনেক রাত পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা রাখা হয়। গ্রুপ স্টাডির জন্য সবসময় স্টাডি রুম খোলা থাকে। শরীরচর্চার জন্য ছাত্র ছাত্রীদের আলাদা সময়সূচিতে জিমনেশিয়াম খোলা থাকে। আবার খেলাধুলার জন্য খেলার মাঠ আছে। এছাড়া সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। যেখানে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধাকে বিকশিত করতে পারছেন। আর গবেষণা পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ তো আছেই।

আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোন প্রোগ্রামে বেশি পড়তে আগ্রহী? কেন?

আমাদের সব বিভাগই ভালো। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসই) দিকে বেশি ঝুঁকছে। বিষয়টির অনেক চাহিদা রয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রোগ্রামগুলোকেও শিক্ষার্থীরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবে সিএসইতে বেশি ভর্তি হওয়ার কারণ হলো আমাদের শিক্ষকরা দক্ষ। এর মধ্যে অনেকের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। চলমান বিষয়াবলির ওপর প্রচলিত গবেষণায় তারা অংশ নিচ্ছেন। ব্যবসায় অনুষদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) অর্থনীতির মতো অন্যান্য প্রোগ্রামের অবস্থাও ভালো।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন তাদের বর্তমান অবস্থান কেমন? ক্যারিয়ারে কতটুকু ভালো করতে পারছেন?

আমাদের যে গ্রেডিং সিস্টেম তাতে পাস করে বের হওয়া একটু কঠিন। পাস করার পর যারা ভালো গ্রেড নিয়ে বের হয় তাদের অনেকে ভালো জায়গায় পিএচিডি করেছেন। এজন্য অধ্যয়নকালীন সময়ে প্রচণ্ড চাপ থাকলেও পাস করার পর তার গুরুত্ব শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেন। দয়াবশত শিক্ষার্থীদের আগে বের করে দিলে আমাদের মনে হতে পারে এটা তাদের জন্য ভালো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটা তাদের জন্যই অকল্যাণকর হবে। অর্থাৎ শিক্ষার পরিপূর্ণতার জন্য একটু কষ্ট আমরা দিতে চাই যাতে তারা পঙ্গু হয়ে না বের হয়।

আগামীতে সিএসই বা তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত চাকরির বাজার কেমন হতে পারে?

কম্পিউটার সামনের দিনগুলোয় আরো বেশি জনপ্রিয় হবে। শুধু কম্পিউটার নয় বরং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে গ্যাজেট কিংবা যানবাহন সব জায়গায় সফটওয়্যারের সঙ্গে হার্ডওয়্যারের ব্যবহার হবে। এজন্য সিএসইর সঙ্গে চাহিদা বাড়বে ইইই গ্র্যাজুয়েটদেরও। আমরা বিষয়টি বিবেচনা করে চার বছর পর পর আমাদের কারিকুলাম হালনাগাদ করি। কারণ নতুন অনেক টুলস বাজারে আসছে, এগুলো সম্পর্ককে শিক্ষার্থীরা জানলে পাস করে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা চাকরিতে ঢুকে যেতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই।

ইউআইইউকে চার-পাঁচ বছরের মধ্যে এক নম্বর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটা ভালো অবস্থান তৈরি করার জন্য যা যা করা দরকার তাই করব। প্রথম দরকার দক্ষ অভিজ্ঞ শিক্ষক। তার সঙ্গে দরকার ভালো শিক্ষার্থী। কেননা ইনপুট যদি ভালো না হয় তাহলে ভালো আউটপুট তৈরি হবে না। এজন্য ভালো ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষিত করার চেষ্টা করব। দ্বিতীয়ত, ভালো শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো শিক্ষক দরকার। শিক্ষকদের জন্য গবেষণা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই যেন শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারে তার জন্য উপযোগী করে তুলতে হবে এজন্য প্রশাসন, শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।

কী কারণে শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে?

আমি প্রথম যেটা বলব সেটা হলো পরিবেশ। দেখতে সুন্দর হতে হবে বিষয়টি এমন নয়। শিক্ষার্থীরা এসে বুঝবে এখানে সত্যিকারার্থে আমরা ভালো শিক্ষা দিই কিনা। কেউ যদি মনে করে সহজভাবে একটা সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়ে যাবে তাহলে এটা তাদের জন্য নয়। যারা সত্যিকারার্থে কিছু শিখতে চায় তাদের জন্য প্রতিষ্ঠান। শুধু শিক্ষা নয়, সঙ্গে খেলাধুলাসহ সহশিক্ষা কার্যক্রম করতে পারবে। যার কারণে তার সামাজিকীকরণ ঘটবে। আমরা আকর্ষণীয় শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকি। দরিদ্র শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমরা বৃত্তি দিই। এর পরও কেউ যদি সেমিস্টার ফি বা অন্য জায়গায় টাকার জন্য আটকে যায়, তাদের ঋণের ব্যবস্থা করে দিই। ফলে আমরা চেষ্টা করি শিক্ষার্থীরা যাতে অর্থনৈতিকভাবে একটা ভালো অবস্থানে থাকতে পারে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ কী?

আমি সবসময় ইতিবাচকভাবে ভাবি। এজন্য চ্যালেঞ্জকে অপরচুনিটি মনে করি। বেশকিছু জায়গায় পড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা আসলেই মেধাবী। তাদের সুযোগ করে দিলে তারা অনেক ভালো করতে পারবে। আমরা চাই তারা বিশ্বমানের হয়ে গড়ে উঠুক। আমাদের কাজ শুধু সুযোগ করে দেয়া। সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে না রেখে ছেড়ে দিন। স্বাধীনতা আন্দোলনের মতো আন্দোলন আমাদের স্বকীয়তার পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট। আমরা নিজেরা চলতে পারি। শুধু দরকার বাঁধনমুক্তি। হ্যাঁ, আমাদের মান নিয়ন্ত্রণের দরকার আছে। তবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখা নয় যারা খারাপ করছে তাদের দেখে রাখুন। তবে যারা ভালো করছে তাদের ছেড়ে দিন। তারা আরো ভালো করবে।

 

অনুলিখন: মেহেদী মামুন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন