সাশ্রয়ী খরচে মানসম্পন্ন শিক্ষায় উত্তরা ইউনিভার্সিটি

ফিচার প্রতিবেদক

সাশ্রয়ী খরচে মানসম্পন্ন শিক্ষা স্লোগানে ঢাকার উত্তরায় উচ্চশিক্ষার পাদপীঠ হিসেবে উত্তরা ইউনিভার্সিটির যাত্রা ২০০৩ সালে। লক্ষ্য সাশ্রয়ী খরচে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান। শুরুতে দুটি অনুষদের অধীনে তিনটি বিভাগ নিয়ে এর শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি অনুষদের অধীনে ১৪টি বিভাগে ৩৫টি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। শুরু থেকেই প্রফেশনাল চাকরিসংক্রান্ত প্রোগ্রামের ওপর গুরুত্ব দেয়ায় আইনবিষয়ক প্রোগ্রাম, টিচার্স টেনিং প্রোগ্রাম, শারীরিক শিক্ষা প্রোগ্রাম, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম, ফ্যাশন ডিজাইন প্রোগ্রাম ইইইর মতো প্রোগ্রাম চালু করে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা যেন প্রতিযোগিতায় নিজেদের চৌকস প্রমাণ করতে পারে সেজন্য শুরু থেকে মানসম্পন্ন শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। উত্তরা ইউনিভার্সিটি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে সাতটি সমাবর্তন। মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে আগত ছাত্রছাত্রীদের সাশ্রয়ী খরচে উচ্চশিক্ষা প্রদান করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক . এম আজিজুর রহমান জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একজন খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ অর্থনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল ইকোনমিকস বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিভাগ থেকে মাস্টার অব সায়েন্স ডিগ্রিও লাভ করেন। বিশ্বব্যাংকের বৃত্তি নিয়ে তিনি আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালে আমেরিকার ভ্যান্ডারভিল্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তিনি ২৫ বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯৮৯-৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইউএস অ্যাম্বাসির ইউএসএইডে ইকোনমিকস অ্যাডভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। . এম আজিজুর রহমান উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য। বর্তমানে তিনি চতুর্থবারের মতো উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন।

শিক্ষা গবেষণা

বর্তমানে উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে ১৪টি বিভাগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণার কাজও চলছে সমানতালে। স্থাপন করা হয়েছে ইনস্টিটিউট অব পলিসি রিসার্চ। সম্প্রতি ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) গঠনের মাধ্যমে শিক্ষার অভ্যন্তরীণ গুণগতমান উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থী।

উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রতিটি বিভাগই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষকদের গবেষণা প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে দেশী আন্তর্জাতিক জার্নালে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষদ থেকে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে জার্নাল। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে বিজনেস রিভিউ, আইন বিভাগ থেকে জার্নাল।

বিশ্ববিদ্যালয়টি যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ড শ্যায়ার ইউনিভার্সিটি অরচেস্টার ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সহযোগিতার স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া কানাডার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, আসাম কলকাতায় বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনেরও আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আয়োজিত বিজনেস কনফারেন্সে আমেরিকা, জাপান ভারতসহ দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদরা অংশগ্রহণ করেছেন নিয়মিত।

সৃজনশীলতায় এগিয়ে শিক্ষার্থীরা

উত্তরা ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের ছাত্ররা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট গণিত অলিম্পিয়াড ২০১৪, ২০১৫ ২০১৬ সালে অংশগ্রহণ করে সব সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় একাধিকবার প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ সপ্তম স্থান অর্জন করে। শারীরিক শিক্ষা বিভাগের কৃতী ছাত্রী মাহফুজা খাতুন শীলা জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা ২০১৬ সালে জোড়া স্বর্ণপদক বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মিনিতা সুপ্রিয়া মিজান ত্রপী ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সপ্তম আন্তর্জাতিক কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৬ সালে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছেন। ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান শরীফ তেল গ্যাসবিহীন একটি মোটরযান উদ্ভাবন করেছেন, যা সোলার এনার্জিতে মাত্র ১০ টাকা খরচে সারা দিন চালানো যায়। প্রায় সব অনুষদ এবং বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী নানা সৃজনশীল কার্যক্রম লক্ষ করা যায়। এসব সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শিক্ষার পরিবেশকে এক আনন্দঘন পরিবেশে পৌঁছে দিয়েছে উত্তরা ইউনিভার্সিটি।

যত অর্জন

মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি বেশকিছু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হংকংয়ের দ্য বিজ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮, দিল্লির এডুকেশন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১২, সিঙ্গাপুরের এশিয়াস বেস্ট বিজনেস অ্যাওয়ার্ড-২০১৩, মুম্বাইয়ে এশিয়ান সিইএফ বিজনেস স্কুল অ্যাওয়ার্ড ২০১৪, ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড ২০১৪ ২০১৫ (আইন বিভাগ) অন্যতম। এছাড়া ষষ্ঠ জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দ্বিতীয় স্থান লাভ করে।

স্থায়ী ক্যাম্পাস

উত্তরা ইউনিভার্সিটির একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে, এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিভাগগুলো স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে উত্তরা ইউনিভার্সিটির পাঁচটি বিভাগের কার্যক্রম চালু রয়েছে। উত্তরা মডেল টাউনের থার্ড ফেজ সংলগ্ন/সেক্টর ১৬ সংলগ্ন মৌজা, ভাটুলিয়ার দশমিক ২৪ একর জমির ওপর স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই অত্যাধুনিক স্থায়ী ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবযাত্রা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন