ভিটামিন ডি

শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য জরুরি ভিটামিন ডি

ছবি: পজিফিটিভি

মা নব শরীরের জন্য ভিটামিন ডি একটি অপরিহার্য অনুপুষ্টি। শরীরকে সুস্থ রাখতে এটি খুবই প্রয়োজনীয়। সেই সঙ্গে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার ক্ষেত্রেও বেশ গুরুত্ব বহন করে এ উপাদান। ভিটামিন ডির সবচেয়ে ভালো উৎস সূর্যালোক। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলেই এ ভিটামিনের চাহিদা অনেকখানি পূরণ করা যায়, যা শরীরকে ভিটামিন ডির ঘাটতিজনিত নানা সমস্যা থেকে মুক্ত করে। 

ভিটামিন ডি প্রোহরমোনের একটি গ্রুপ, যা শরীরকে আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফেট শোষণে সহায়তা করে। সূর্যের আলো থেকে তো বটেই বিভিন্ন খাবারে ও প্রাকৃতিকভাবেও পাওয়া যায় ভিটামিন ডি। দুই ধরনের ভিটামিন ডি রয়েছে। তার একটি হলো ভিটামিন ডি২, যা গাছপালা থেকে তৈরি, একে ইংরেজিতে এরগোক্যালসিফেরল বলে। আর অন্যটি হলো ভিটামিন ডি ও, যাকে কোলেক্যালসিফেরল বলে। ত্বকে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এটি উৎপাদিত হয়। 

নানা বয়সী মানুষের মধ্যে ভিটামিন ডির ঘাটতি দেখা যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, যেসব মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করান, কিডনি ও লিভারের রোগী, ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু, যারা সূর্যের সংস্পর্শে কম আসেন যেমন বয়স্ক মানুষ, শহরের অধিবাসী, পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের মধ্যে এ ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়ার প্রবণতা বেশি পাওয়া যায়।

আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা পরবর্তী সময়ে হাড়ের ঘনত্ব, পেশির কর্মক্ষমতা, স্নায়ুতন্ত্রের কাজ এবং কোষের সার্বিক কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে প্রথম ২০১১-১২ সালে জাতীয় অনুপুষ্টি সংক্রান্ত তথ্য নেয়া (The National Micronutrient Survey) হয়। এ জরিপ করা হয় রক্তে ভিটামিন ডির ঘনত্ব অনুসারে, যা করা হয় শুধু প্রি-স্কুল, স্কুলগামী শিশু ও নারীদের (যারা গর্ভবতী বা স্তন্য দানকারী নন) মধ্যে। স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ডি ঘাটতির ব্যাপকতা ৪৫ দশমিক ৫, প্রি-স্কুল শিশুদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ভিটামিন ডির ঘাটতি বেশি পাওয়া গেছে বস্তিতে বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে। ভিটামিন ডির ঘাটতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে নারীদের মধ্যে (৭১ দশমিক ৫ শতাংশ), যা অত্যন্ত ভয়াবহ। সবচেয়ে বড় কথা, গর্ভবতী নারীদের জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুপুষ্টি। দ্বিতীয় National Micronutrient Survey করা হয় ২০১৯-২০ সালে। এ জরিপ মোতাবেক ৫-৫৯ মাস বয়সী ২১ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু ভিটামিন ডির ঘাটতিতে ভুগছে। 

আমাদের শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখার জন্য ভিটামিন ডি বা সানশাইন ভিটামিন জরুরি। ভিটামিন ডির সবচেয়ে ভালো উৎস সূর্যালোক। বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে সূর্যের রশ্মিতে ভিটামিন ডি সবচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু সূর্যের আলোর সংস্পর্শে না আসার কারণেই মূলত এর ঘাটতিটা তৈরি হয়। আমাদের নাতিশীতোষ্ণ দেশেও এ ভিটামিনের ঘাটতির হার ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ। ভিটামিন ডির ঘাটতির কারণ হিসেবে আমরা আরো দায়ী করি স্থূলতাকে, কারণ এটি দেহে রক্তপ্রবাহ ধীর করে দেয়। যাদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ৩০-এর বেশি হয়, তাদের পাচন প্রক্রিয়া ভিটামিন ডি ঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। তাছাড়া ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করলে এর ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

ভিটামিন ডির অভাব হলে কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সেগুলো হলো বিষণ্নতা, বয়স্কদের মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়ে, শিশুদের হাঁপানি রোগের প্রবণতা, কার্ডিওভাসকুলার রোগে মারা যাওয়ার আশঙ্কা, হাড়ের রোগ, রিকেট (শিশুদের), বন্ধ্যত্ব, প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওমেলেসিয়া। 

ভিটামিন ডির ঘাটতির কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হলো ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট, অবসাদ, ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘুম, হাড়ে ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা, পেশির দুর্বলতা, হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, ক্ষুধামান্দ্য, অতিরিক্ত ঘাম, অনিদ্রা, চুলপড়া।

শরীরে ভিটামিন ডি বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত রোদ পোহানোর বা শরীরে রোদ লাগানোর চেষ্টা করুন। তাতে  দেহে ভিটামিন ডি বাড়বে। ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার, যেমন গরু ও খাসির মাংস, ডিমের কুসুম, দুধ, দই, পানির, কলিজা, মাশরুম, স্যামন মাছ, টুনা মাছ, সয়ামিল্ক, সিরিয়াল ইত্যাদি খেতে পারেন। কিছু ফল, যেমন কমলা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদিতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। নিয়মিত শরীর চর্চা ও সূর্যের আলো গ্রহণের অভ্যাস করুন। তার পরও যদি ভিটামিন ডির অভাব হয় তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

ভিটামিন ডির অভাব দেখা দিলে কিছু চিকিৎসা নিতে হয়। ভিটামিন ডির অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া ঠিক হবে না। নিয়মিত যোগব্যায়াম করুন। 

রোজ সকালে হাঁটার চেষ্টা করুন। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড খাবার গ্রহণ করুন। 


নুর জাহান সিমি 

পুষ্টিবিদ, এমবিবিএস, এমপিএইচ (কমিউনিটি নিউট্রিশন), 

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন