সিএসই, বিএমবিএ ও ডিবিএর বাজেট প্রস্তাব

পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চাইছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এ সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সিএসইর বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট হারে কর প্রদানসাপেক্ষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না তোলার বিধানটি চালু করা যেতে পারে। বিধানটি রাখা হলে বিভিন্ন শ্রেণীর করদাতা তাদের বৈধ উপায়ে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি টাকা পাচারের ঝুঁকিও কমবেবলে মনে করছে সিএসই।

অপ্রদর্শিত অর্থের বিষয়ে বিএমবিএর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৫ শতাংশ হারে কর  দিয়ে শুধু পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য আরো এক বছর সুযোগ দেয়া হলে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অন্যথায় অপ্রদর্শিত অর্থ অপব্যবহারের সুযোগ থেকে যায়। এ অপব্যবহারের সুযোগ বন্ধের লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য একটি সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বিএমবিএ। ডিবিএও পুঁজিবাজারে শর্তহীনভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছে।

লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর প্রত্যাহারের জন্যও দাবি জানিয়েছে সিএসই ও বিএমবিএ। এ বিষয়ে সিএসই বলছে, লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানি তার মুনাফার ওপর কর দেয়। পুনরায় লভ্যাংশ বিতরণের সময় কর কর্তন করার কারণে দ্বৈত করের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের উৎসে কর পরিহার করা হলে অধিকতর লভ্যাংশ বণ্টনের সুযোগ তৈরি হবে এবং এক স্তর কর কাঠামোর ফলে কর আহরণ প্রক্রিয়া সহজতর হবে বলে মনে করছে সিএসই।

লভ্যাংশের ওপর করের বিষয়ে বিএমবিএ বলছে, করপোরেট কর কর্তনের পর লভ্যাংশ দেয়া হয়। লভ্যাংশ দেয়ার সময় ১০-১৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর কর্তন করা হয়। পরবর্তী সময়ে আবার লভ্যাংশগ্রহীতার ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্নের সময় তার ওপর প্রযোজ্য হারে কর দিতে হয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ গ্রহণ না করে রেকর্ড ডেটের আগেই শেয়ার বিক্রি করে দেন এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করেন না, যা পুঁজিবাজারকে অস্থির করে। পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনার জন্য লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বিএমবিএ।

করপোরেট করহার পুনর্বিন্যাসেরও দাবি জানিয়েছে সিএসই ও বিএমবিএ। এক্ষেত্রে সিএসই বলছে, একক লেনদেন ও নির্ধারিত নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগসীমা প্রতিপালনসাপেক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য বিদ্যমান করহার ২০ শতাংশ ও ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করহারের পার্থক্য বাড়লে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত হবে, যা পুঁজিবাজারকে সমৃদ্ধ করবে এবং স্বচ্ছ করপোরেট রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়াতে সহায়তা করবে বলে মনে করছে এক্সচেঞ্জটি।

তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যকার বিদ্যমান ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করহারের পার্থক্য বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে বিএমবিএ। এ বিষয়ে সংগঠনটির যুক্তি হচ্ছে বিদ্যমান ৭ দশমিক করহারে পার্থক্য দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। দেশে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা দুই লাখ হলেও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ৩৫৪, যা অত্যন্ত নগণ্য। করহারের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারলে পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে বিএমবিএ।

সিএসইর অন্যান্য বাজেট প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত করমুক্ত নগদ লভ্যাংশের সীমা ৫০ টাকা নির্ধারণ, জিরো কুপন বন্ডের অন্যান্য বন্ড যেমন করপোরেট বন্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ থেকে উদ্ভূত আয়কে কর অব্যাহতি দেয়া, এসএমই কোম্পানিগুলোর জন্য তালিকাভুক্তির প্রথম তিন বছর শূণ্য করহার এবং পরবর্তী বছরগুলোয় ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ, নির্ধারিত বার্ষিক মোট নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগের সীমা ৩৬ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৭২ লাখ টাকা নির্ধারণ, ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করা, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে আয়কর কর্তনের হার আগের মতো শূন্য দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করে এ কর্তিত করকে ধারা ৮২সির অধীনে ব্রোকারেজ ব্যবসা থেকে উদ্ভূত সমুদয় আয়ের জন্য চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করা, বন্ড লেনদেনের ওপর কর প্রত্যাহার করা, সিএসইর পরামর্শ সেবা, কারিগরি সেবা ও সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স ফির ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ হারে উৎসে করের পরিবর্তে ৫ শতাংশ নির্ধারণ ও আমদানীকৃত সেবার ওপর প্রযোজ্য বিদ্যমান ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) কমিয়ে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ এবং অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মতো সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করেছে সিএসই।

বিএমএবির অন্যান্য বাজেট প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকের বিদ্যমান করপোরেট করহার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য মূসকের বিদ্যমান হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।

ডিবিএর অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর প্রদত্ত অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বিদ্যমান শূন্য দশমিক শূন্য ৫ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ করা, লভ্যাংশ আয়ের ওপর করমুক্ত সীমা বিদ্যমান ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা, ব্যক্তির ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের ওপর অগ্রিম আয়কর পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত নিষ্পত্তিসাপেক্ষে ১০ শতাংশ করা, প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের ওপর অগ্রিম আয়কর পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত নিষ্পত্তিসাপেক্ষে বিদ্যমান ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা, দ্বৈত কর প্রদান রহিত করা, বিনিয়োগ ভাতার সর্বোচ্চ সীমা মোট করযোগ্য আয়ের শতকরা ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ ভাগ অথবা প্রকৃত বিনিয়োগ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি কম সেটি নির্ধারণ করা এবং মূলধন আয়ের ওপর কর বিদ্যমান ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব0 দিয়েছে সংগঠনটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন