কেমোথেরাপি দেয়া হয় অ্যাডভান্সড স্টেজের রোগীদের

ডা. ফেরদৌস শাহরিয়ার সাইদ

সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর, মেডিকেল অনকোলজি
এভারকেয়ার হাসপাতাল

ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি কী এবং এটা কেন দেয়া হয়?

ক্যান্সার রোগীদের জন্য কেমোথেরাপি একটা প্রাচীন চিকিৎসা। এটা শুরু হয়েছিল পঞ্চাশের দশকের দিকে। ষাট-সত্তর দশকের দিকে এটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। নব্বইয়ের দশক থেকে এর ব্যবহার অনেক বাড়তে থাকে। তারপর অনেক চিকিৎসাপদ্ধতি আসতে থাকে, যেমন হরমোন থেরাপি, স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার হয়। টার্গেটেড থেরাপি ব্যবহার হয় অনেক ক্যান্সারের চিকিৎসায়। তারপর এল ইমিউনো থেরাপি। আমাদের দেশেও তা এসেছে পাঁচ-ছয় বছর হয়ে গেল, বিভিন্ন পর্যায়ের রোগীর জন্য এ থেরাপি ব্যবহার করা হয়। এটি অনেক ব্যয়বহুলও, তাই সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না। এগুলো সবই আমরা এভারকেয়ারে মেডিকেল অনকোলজির অধীনে করতে পারছি। রোগীরা যখন ব্যয় বহন করতে পারে, তখন যাকে যেটা দরকার সেটা দেয়া যায়। ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশের যে ডাটা তা বিদেশের সঙ্গে মিলে যায়। তখন আমরাও বুঝতে পারি চিকিৎসাটা ঠিকঠাক হয়েছে। কিন্তু এগুলো সব করা যায় যখন অর্থনৈতিক বিষয়টা সংকুলান করা যায়।

কেমোথেরাপি রোগীর কতটা কাজে লাগে?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি দেয়া হয় অ্যাডভান্সড স্টেজের রোগীদের। চতুর্থ স্টেজ বা পঞ্চম স্টেজের রোগীদের। ব্রেস্ট ক্যান্সার এখন ছয় রকমের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্লি ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসাও কেমোথেরাপি দিয়ে শুরু হচ্ছে। তারপর অপারেশন হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা হচ্ছে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য এক ধরনের কেমোথেরাপি প্রয়োজন, রক্ত রোগের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপিটাই প্রধান চিকিৎসা। দীর্ঘ সময় ধরে রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। আবার দেখা যায় অপারেশন হয়েছে, রোগীর ফিরে আসার সম্ভাবনা কম, তখন আমরা কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি যেন লম্বা সময় পায়, রোগী স্বাভাবিক থাকতে পারে। যার ফিরে আসার ফিরে আসবে, ফিরে আসলে তখনকার জন্য যা প্রযোজ্য সেটা দেয়া হবে। তিনটা কারণে কেমোথেরাপি দেয়া হয়। রোগটাকে সহনীয় করার জন্য, রোগটাকে দমিয়ে রাখার জন্য আর রোগটাকে একেবারে নির্মূল করার জন্য।

কেমোথেরাপি রোগীদের দেয়ার পদ্ধতিগুলো কী?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি স্যালাইনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে পুশ করা হয়। আর কিছু কিছু আছে মুখের মাধ্যমে দেয়া হয়, এগুলোর সংখ্যা কম। এগুলো খুব কমসংখ্যক রোগের জন্য ব্যবহার হয়, আবার পরিমাণেও কম। বেশির ভাগই হলো স্যালাইনের মাধ্যমে রক্তে, শিরাতে দিচ্ছি। আমরা এটাকে আইভি থেরাপি বলি।

কেমোথেরাপি কীভাবে রোগীর শরীরে কাজ করে?

আমরা দুই বা ততধিক রকমের কেমোথেরাপি দিচ্ছি। একই সময়ে দিচ্ছি, একটার পর একটা দিচ্ছি দিনে অথবা দুই দিনে। এটা একটা যুদ্ধের মতো। আমরা যখন দুই বা ততধিক কেমোথেরাপি দিই, তখন এগুলো বিভিন্নভাবে কাজ করে। উদ্দেশ্য একটাই ক্যান্সার সেলকে ধ্বংস করা। অনেক কেমোথেরাপি যখন দেয়া হচ্ছে, তখন একেকটা জিনিস একেকটা জায়গায় গিয়ে একেকটা ক্যান্সার সেল ধ্বংস করছে। থেরাপি দেয়ার পর ক্যান্সার আর ছড়াতে পারে না, ক্ষতিকর সেলগুলো তখন মরে যায়।

কেমোথেরাপির কোনো ক্ষতিকর দিক আছে? 

থেরাপি দেয়ার সময় আক্রান্ত সেল আর সুস্থ সেল আলাদা করা যায় না। নরমাল সেলের মধ্যে যেগুলো খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এগুলোও কিন্তু অনেক নষ্ট হচ্ছে, অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন চুল, ত্বক ইত্যাদি। থেরাপি দিলে এগুলোর সবই আক্রমণ করে। তখন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অল্প দুই-তিনটা কেমোথেরাপিতে চুল পড়ে না, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চুল পড়ে। তবে থেরাপি দেয়া শেষ হওয়ার আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত চুল আবার আগের মতো গজাবে। নরমাল সেলের সঙ্গে ক্যান্সার সেলের বড় তফাত, নরমাল সেল ক্ষতিগ্রস্ত হলে আবার সুস্থ হয়ে যায় নিজে থেকে, কিন্তু ক্যান্সার সেল আর রিকভারি করতে পারে না। এ আইডিয়াটাকেই ব্যবহার করে কেমোথেরাপি দেয়া হয়। থেরাপি দিলে ক্ষুদামন্দা হয়, নিজেকে অসুস্থ মনে হয়, দুর্বল মনে হয়। হাড়ের যে মজ্জা, সেখানে কোটি কোটি সেল প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে আবার নতুন তৈরি হচ্ছে। কেমোথেরাপি সেখানে গিয়ে আক্রমণ করে। অনেক সেল যেমন, শ্বেত রক্তকণিকা, রক্তের প্লাটিলেট এগুলো কমে যায়। তখন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েই থেরাপিটা দেয়া হয়। কিছু কিছু কেমোতে হাত-পা কালো হয়, ডায়রিয়া হয়, মুখে ঘা হয়। এমন অনেক আনকমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। সর্বোপরি থেরাপি দেয়ার সময় এবং দেয়ার পর চিকিৎসার কারণে কিছু কিছু সমস্যা হয়। যেগুলো খুব সহজে প্রতিরোধ করা যায়।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন