এভারকেয়ারে গুরুত্ব পায় স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল

ড. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

সিনিয়র কনসালট্যান্ট, রেডিয়েশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল অনকোলজি, এভারকেয়ার হাসপাতাল

বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল, কেন?

ক্যান্সার চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। এর কারণ রোগটা ঠিকভাবে ডায়াগনসিস করার জন্য অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। তাছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপির ওষুধগুলো অনেক দামি। ক্যান্সার চিকিৎসায় অনেক ডিপার্টমেন্টের সম্পৃক্ততা থাকে। কোনো সেবাই বিনামূল্যে নয়। সবকিছু মিলে খরচটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে।

ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য অনেক রোগী দেশের বাইরে চলে যায়। দেশে চিকিৎসা থাকার পরও এমনটা কেন হচ্ছে? 

সত্যি বলতে এখনো অনেক রোগী বিদেশে চলে যায়। তবে সংখ্যা এখন অনেক কমে গিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, আজ থেকে ১০ বছর আগে আমাদের দেশে ক্যান্সার সঠিকভাবে নিরূপণের সুবিধাগুলো ছিল না, কিন্তু এখন এ সুবিধাগুলো আছে। বিদেশে যে টাকায় ক্যান্সারের চিকিৎসা হয় দেশে তার ৪ ভাগের ১ ভাগ খরচে চিকিৎসা করা সম্ভব। আমাদের দেশে চিকিৎসা খুব যে ব্যয়বহুল বিষয়টি তা নয়, বরং তা অনেকটাই যুক্তিসংগত।

বিদেশে না গিয়ে দেশে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে গুণগত মান কতটুকু নিশ্চিত হচ্ছে?

ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাদের নিজের মতো করে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক কিছু মানদণ্ড আছে, কোন পর্যায়ে ক্যান্সারটা আছে, এটার চিকিৎসা কী হবে—সেগুলো অনুসরণ করেই চিকিৎসা করতে হবে। এভারকেয়ারের কথা যদি বলি, ডায়াগনসিস নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা যে চিকিৎসা দিই, সেটি বিদেশে গেলে পরিবর্তন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা যে চিকিৎসা দিচ্ছি তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে দিচ্ছি।

ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সচেতনতার দিকটা নিয়ে কিছু বলবেন?

ক্যান্সার আক্রান্ত হলে রোগী তো দুর্ভোগ পোহানই, পারিবারিক এবং সামাজিক দুর্ভোগও অনেক থাকে। যেহেতু চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল সেহেতু আমরা যদি এগুলো এড়িয়ে যেতে চাই, এক্ষেত্রে স্ক্রিনিংয়ের বিকল্প নেই। এ স্ক্রিনিংটা হচ্ছে অল্প কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে তার অসুস্থতার ইতিহাস জেনে একটা সম্ভাব্য অল্প পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া। স্ক্রিনিংয়ের সুবিধা হচ্ছে, এতে করে খুব প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। বেশির ভাগ ক্যান্সারই নিরাময়যোগ্য। আমাদের দেশে বেশির ভাগ রোগীই যখন ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে তখন ডাক্তারের কাছে আসে। এর কারণ সচেতনতার অভাব। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, অনেকেই হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করা, ডাক্তার দেখানোকে ঝামেলা মনে করে। তাছাড়া খরচের একটা বিষয় তো আছেই। তাই সচেতনতা বাড়াতে হবে।

আপনারা এভারকেয়ারে কোন ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করেন?

আসলে ক্যান্সার চিকিৎসার অনেক দিক থাকে। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে গুরুত্ব পায় স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল। এক্ষেত্রে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিউমার বোর্ড গঠন করা হয়, সেখানে থাকে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, হিস্টো প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, সার্জন, গাইনোকোলজিস্ট। এ বোর্ডের মাধ্যমে একটা চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হয়, যা আমাদের হাসপাতালে নিয়মিতই হচ্ছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় শুরুতেই যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে পুরো চিকিৎসা পদ্ধতিই ভুল হয়ে যায়। কারণ এ চিকিৎসা নির্ভর করে বায়োপসি প্রতিবেদনের ওপর, তার স্টেজের ওপর। আমাদের এখানে কোনো রোগী এলে আমরা প্রথমে বায়োপসি করানোর পরামর্শ দিই। তারপর আমরা তা টিউমার বোর্ডে নিয়ে যাই, সবাই মিলে ঠিক করি তার চিকিৎসা ব্যবস্থা কী হবে। আমাদের এখানে দক্ষ ক্যান্সার সার্জন আছেন। কারণ সাধারণ সার্জারি আর ক্যান্সার সার্জারি কিছুটা ভিন্ন। থেরাপি প্রয়োজন হলে আমাদের এখানে অত্যাধুনিক একটি ডে-কেয়ার রয়েছে। উন্নত সব ওষুধের চিকিৎসা, কেমোথেরাপি, ইমিউনো থেরাপি, হরমোন থেরাপি, টার্গেট থেরাপি সবকিছু আমাদের এখানে হয়। এখানে বাইরের কোনো অজানা ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। সব মিলেই মান নিশ্চিত করা হয়।

সাধারণ মানুষের ক্যান্সার সচেতনতায় বা ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রাথমিক অবস্থায় কী পদ্ধতিতে এগোনো উচিত?

প্রথমত, ক্যান্সার আক্রান্ত হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সব চিকিৎসা আমাদের দেশেই রয়েছে। ক্যান্সার হলেই অনেকে দেশে খোঁজ না নিয়ে আগে বিদেশে খোঁজ নেন। ক্যান্সার হলেই বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা কেন খরচ করবেন? এ ভাবনাটা একটু পরিবর্তন করতে হবে। আগে দেশে খোঁজ নিতে হবে। তারপর যদি কোনো কারণে মনে হয় সন্তুষ্ট না, তাহলে বিদেশ যেতে পারেন। ক্যান্সার চিকিৎসায় সচেতনতা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্ক্রিনিং প্রোগ্রামগুলোয় চেক-আপগুলো করান। আমাদের হাসপাতালে অনেক স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চলে। ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম রয়েছে, সার্ভিক্যাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং, হেডনেক স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম সবই আছে। একটা নির্ধারিত বয়সের পর স্ক্রিনিং প্রোগ্রামগুলো নিয়মিত করেন। যাতে ক্যান্সারে যদি আপনি আক্রান্ত হয়ে থাকেন সেটা যেন শেষ পর্যায়ে গিয়ে ধরা না পড়ে। ক্যান্সার চিকিৎসা করে মানুষ ক্যান্সারমুক্ত হবে চিকিৎসক হিসেবে আমার এটাই কামনা।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন