ক্যান্সার চিকিৎসা উন্নত হলে বাঁচবে দেশের বিপুল টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্যান্সার নির্ণয়ে দেশেই উন্নত প্রযুক্তির মেশিনে হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ক্যান্সার হলো একটি বৃহৎ রোগের সমষ্টি, যা শরীরের যেকোনো অঙ্গ বা টিস্যুতে শুরু হতে পারে। সাধারণত অস্বাভাবিক কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে স্বাভাবিক সীমার বাইরে গিয়ে রক্ত বা লিম্ফ সিস্টেমের মাধ্যমে দেহে ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলেছে, ক্যান্সারের শতাধিক ধরন রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর নামকরণ করা হয়, যে অঙ্গ বা কোষ থেকে শুরু হয়েছে সে অনুযায়ী। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ ক্যান্সার। ২০১৮ সালেও সারা বিশ্বের ৯৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে। পুরুষের মধ্যে ফুসফুস, প্রোস্টেট, পাকস্থলী, লিভার এবং নারীর মধ্যে স্তন, জরায়ু, ফুসফুস, থাইরয়েড ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয়। বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার বেড়ে যাওয়ায় ব্যক্তি থেকে শুরু করে সামষ্টিকভাবে আর্থিক মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশে ঠিক কত সংখ্যক মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর এতে মৃত্যু হচ্ছে তার সরকারি হিসাব নেই। তবে গ্লোবাল ক্যান্সার ইনসিডেন্স, মর্টালিটি অ্যান্ড প্রিভিলেন্স (গ্লোবোক্যান) পরিসংখ্যানের আলোকে ডব্লিউএইচওর অধীন ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) একটি হিসাব রাখছে। তাদের সর্বশেষ হিসাব মতে, বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত লাখ ৭১ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ২০২০ সালে শনাক্ত হয়েছিল লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে লাখ হাজারের মতো ক্যান্সার রোগীর। তবে দেশে মুহূর্তে ১৫ লাখের বেশি ক্যান্সারের রোগী রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি। ক্যান্সার রোগতত্ত্ব জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যদিও বলছেন, দেশে বছরে অন্তত তিন থেকে চার লাখের মতো মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে দেড় লাখ। হিসাব কোথাও তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। প্রাক্কলিত রোগীর সংখ্যার চেয়ে কয়েক গুণ ক্যান্সার রোগী বছরে রোগ শনাক্তের বাইরে থেকে যায়। কেননা রোগীর তুলনায় দেশে সরকারি বা বেসরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল।

স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে মূলত ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু হয় ১৯৫৮ সালে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেডিওথেরাপির মাধ্যমে। এরপর বিভিন্ন সময় চিকিৎসা রোগ নির্ণয়ের পরিসর বাড়লেও সব ক্যান্সার রোগীর জন্য সেবা নিশ্চিত করা যায়নি। সব মিলিয়ে ৩০টির মতো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারের একমাত্র ক্যান্সার চিকিৎসার বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ) ব্যয়বহুল চিকিৎসায় সরকারি সুবিধা তেমন একটা বাড়েনি বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি।

বাংলাদেশে চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকে ক্যান্সারের ওষুধ প্রস্তুত শুরু করে দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান বীকন। বর্তমানে ১২টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন করে দেশী-বিদেশী বাজারে ছাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ক্যান্সারের ওষুধের স্থানীয় বাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো। যদিও এর পাঁচ গুণ টাকা প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। তবে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোয় সরকারের পক্ষ থেকে যৌক্তিক সুবিধা বাড়ালে ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশের বাজার বড় হবে। একই সঙ্গে বন্ধ হবে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করানোর হার। বাঁচবে বিপুল অংকের টাকা। কেননা দি অ্যাপারেল নিউজের ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর সাত লাখ বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে যায়। এতে ব্যয় হয় দশমিক বিলিয়ন ডলার। যদিও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রায় ২০ লাখের মতো বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর বিদেশে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন