বিভাগীয় শহরগুলোয় ক্যান্সার সেন্টার তৈরির কাজ চলছে

বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩-১৫ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতি বছর গড়ে দুই লাখের মতো নতুন শনাক্ত হচ্ছে। এক লাখের মতো মানুষ মারা যাচ্ছে। দিন দিন রোগ বৃদ্ধির প্রধান কারণ অধিক জনসংখ্যা। ১২ কোটি জনসংখ্যা হলে ক্যান্সারের হার যা থাকবে, ২০ কোটি হলে তা অনেক বেড়ে যাবে। এরপর শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে সচেতনতাও বাড়ছে। মানুষ সচেতন হওয়ায় পরীক্ষা করছে, ক্যান্সার ধরাও পড়ছে। এখন মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হলে ঘরে বসে মৃত্যুবরণ করে না। আগে দেখা যেত একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে ঘরেই বিনা চিকিৎসায় মারা যেত। আমরা জানতেও পারতাম না তার মৃত্যুর কারণ। এগুলোই মূলত পরিসংখ্যানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। এছাড়া মানুষ উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক ফাস্টফুড খাচ্ছে, পোড়া মাংস খাচ্ছে, ভাজাপোড়া খাচ্ছে। এসব কারণে নানা ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। খুব কম বয়সেই অনেকের শরীরে ক্যান্সার দেখা দিচ্ছে।

অন্যদিকে যান্ত্রিকতার কারণে মানুষ শারীরিক পরিশ্রম করছে না। অনেকে হাঁটেন না, ব্যায়াম করেন না। ফলে শরীরের ইমিউনিটি কমে যাচ্ছে। যার কারণে শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধছে। পরিবেশ দূষণও এর একটি কারণ। বায়ুদূষণ, কারখানার বর্জ্য তো আছেই। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল, ফরমালিন ইত্যাদি। হোটেল- রেস্টুরেন্টে খাবারের নিম্নমানও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কারণ। এসব কারণে কিডনির সমস্যা হচ্ছে, লিভার ক্যান্সার হচ্ছে, ফুসফুসের ক্যান্সার হচ্ছে। আবার অনেকের ব্যক্তিগত কিছু অভ্যাসের কারণেও ক্যান্সার হচ্ছে, যেমন ধূমপান। ৭০ ভাগ ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ ধোঁয়া। অন্যদিকে তামাক পণ্য সিগারেট ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এরপর রয়েছে পান পাতা, জর্দা, সাদাপাতা, গুল, তামাক পাতা ইত্যাদি গ্রহণ করা।

পুরুষের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। নারীর ক্ষেত্রে জরায়ু ব্রেস্ট ক্যান্সার, কিন্তু নারী-পুরুষ মিলে যদি ধরি তাহলে মুখ বা গলার ক্যান্সারই মানুষের সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ তামাক বা ধোঁয়া। পুরো হেডনেক ক্যান্সারটাকে আমরা ১৫ ভাগে আলাদা করে বিশ্লেষণ করি, কিন্তু যদি এটা না করে শুধু হেডনেক ক্যান্সারটাকে বিশ্লেষণ করি দেখা যাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে হেডনেক ক্যান্সার। এর অন্যতম কারণ ধোঁয়া। আবার অনেকে মুখমণ্ডলের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে খুব একটা সচেতন না। এখনো অনেকে ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে ব্রাশ করে না। রাতে দাঁত পরিষ্কার করার নিয়ম কিন্তু সেটিও অনেকে করে না। নারীর জরায়ু ক্যান্সারও হচ্ছে অপরিচ্ছন্নতার কারণে। অনেকেই জানে না কীভাবে পিরিয়ডের সময় পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি অনেকেই সঠিকভাবে সেবন করে না, অনেকেই জানে না জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি কতদিন পরপর বদলাতে হয়, এর সঠিক নিয়মও জানে না। এটিও জরায়ু ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। আবার সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রে ক্যান্সার তৈরি করে। অনেকেই রোদের মধ্যে মাঠে কাজ করে খালি গায়ে, অনেকে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করে না। সরাসরি প্রখর রোদে থাকে। সমুদ্রের পাড়ে বালির মধ্যেও রেডিয়েশন পাওয়া যায়। এগুলো স্কিন ক্যান্সারের কারণ।

আবার জেনেটিক কারণেও ক্যান্সার হতে পারে। যেমন বংশের অন্য কারো আছে, সেক্ষেত্রে আপনারও ঝুঁকি থাকে ক্যান্সার হওয়ার। এসব ক্ষেত্রে জেনেটিক স্ক্রিনিং করার প্রয়োজন পড়ে। এখন অনেক সচেতন পরিবারে বিয়ের সময় এসব পরীক্ষা করানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য একটি ক্যান্সার সেন্টার থাকতে হবে। লিনিয়াক মেশিন, ব্র্যাকি থেরাপি মেশিন, কেমোথেরাপি বিভাগ, সার্জারি বিভাগ থাকতে হবে। একদম ন্যূনতম যদি হয় তাহলে এগুলো থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা যদি হয় ২০ কোটি তাহলে আমাদের ক্যান্সার সেন্টার থাকা প্রয়োজন দুই হাজার, কিন্তু সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩০টি সেন্টারও নেই মুহূর্তে। সরকার এরই মধ্যে আটটি বিভাগীয় শহরে আটটি রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টার তৈরির কথা ভাবছে। সেখানে ক্যান্সারের পাশাপাশি কিডনি হূদরোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে।

আমাদের জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে চারটি অপারেশন সেন্টার থেকে আটটি করা হয়েছে। ৩০০ বেডের হাসপাতালটিকে ৫০০ বেডে রূপান্তর করেছি আমরা। লোকবল বাড়েনি, কারণ এটি আমরা নিজ উদ্যোগে করেছি। এখন জনবল দরকার। সরকারেরও পরিকল্পনা আছে, জনবল পরিপূর্ণ করে দেবে। আমাদের এখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার খরচ অনেক কম। যেখানে অন্য হাসপাতালে ১৫ হাজারে চিকিৎসা হচ্ছে, আমাদের এখানে হাজার হাজার ৫০০ টাকায় হয়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন