কম খরচে আন্তর্জাতিক মানের সেবা মেলে এনাম ক্যান্সার হাসপাতালে

১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ছয় বেডের এনাম ক্লিনিক থেকে ধীরে ধীরে এখন এক হাজার বেডের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ২০০৩ সালে এনাম মেডিকেল কলেজের যাত্রা, ২০০৪ সাল থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করা হয়। আমরা দেখলাম দেশের অনেক ক্যান্সার রোগী চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা চেষ্টা করছি সকল রোগীকে সব ধরনের সেবা দিতে। ২০১৭ সালে এনাম ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মোহাম্মদ এনামুর রহমান এমপি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যান্সার হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যেসব উইং থাকা দরকার আমরা চেষ্টা করেছি সেই উইংগুলো রাখার জন্য। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যান্সার হাসপাতাল করার জন্য যা থাকা দরকার, আমরা সেগুলো রেখেছি। অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন চলমান অবস্থাতেই রোগীর টিউমারের টিস্যু বা সেল নিয়ে আধাঘণ্টার মধ্যে আমরা পরীক্ষা করে শনাক্ত করতে পারি, এটার মধ্যে ক্যান্সার আছে কিনা, যাকে বলা হয় ফ্রোজেন সেকশন বায়োপসি। এতে লাভ যেটা হয় যে, সার্জন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ওই টিউমার পুরোটা কাটবে নাকি আংশিক কাটবে, মার্জিনটা কতটুকু ক্লিয়ার করবে। পাশাপাশি একটি ভালো ক্যান্সার হাসপাতাল চালু করার জন্য দরকার ভালো মানের সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ল্যাবরেটরিএগুলো আমরা চালু করেছি বহু আগেই। রয়েছে সব ধরনের অনকোলজিক্যাল সার্জারি। সব ধরনের সার্জারি করার জন্য আমাদের গাইনোকলজিক্যাল অনকোলজি সার্জন, জেনারেল সার্জন, নিউরো সার্জন, হেড-নেক সার্জনসহ সবকিছুর সমন্বয়ে একটি টিউমার বোর্ড অনকোলজি সার্জিক্যাল বোর্ড রয়েছে; যারা ধরনের অপারেশনে অত্যন্ত পারদর্শী। ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি হিস্টোপ্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অত্যন্ত শক্তিশালী ডিপার্টমেন্ট, যেখানে আমাদের দেশের সেরা সেরা প্যাথোলজিস্টরা কাজ করেন। পাশাপাশি আমরা স্থাপন করেছি লিনিয়াক এক্সিলারেটর মেশিন। ২০১৭ সালে দুটি মেশিন রেডিওথেরাপির জন্য স্থাপন করা হয়। আমাদের এখানে প্রথম থেকেই ট্রিপল এনার্জি লিনিয়ার এক্সিলেটর দিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। একটি ক্যান্সার হাসপাতাল স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় তখনই যখন পূর্ণাঙ্গ ব্র্যাকিথেরাপি, রেডিওথেরাপি কেমোথেরাপি সংযোযিত হয়। প্রথম থেকেই রেডিওথেরাপির জন্য যা কিছু দরকার সবকিছু নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার জন্য সিটি সিমুলেশনের প্রয়োজন হয়। আমরা জার্মানির সিমেন্স কোম্পানির বিগ বোর ১২৮ স্লাইস সিটি স্ক্যান দিয়ে সিটি সিমুলেশন করে থাকি। ল্যাপ ল্যাজারের মাধ্যমে ক্যান্সারটাকে মার্ক করে টিপিএস (ট্রিটমেন্ট প্ল্যানিং সিস্টেম)-রুমে গিয়ে আমাদের চিকিৎসকরা কনট্যুরিং করে থাকেন এবং ফিজিশিয়ানরা প্ল্যানিং করে তারপর লিনিয়ার এক্সিলেটর রুমে পাঠিয়ে দিয়ে চিকিৎসা করেন। আমাদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেশের সেরা বহু ক্যান্সার চিকিৎসক কাজ করেন, যারা ৩৬৫ দিনই সকাল-বিকাল দুই বেলা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। ইনডোরে পেলিয়েটিভ কেয়ার থেকে শুরু করে পেইন ম্যানেজমেন্ট এবং আমাদের অনকোলজিক্যাল রোগীদের জন্য স্পেশাল আইসিইউর ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ক্যান্সার রোগীদের সব ধরনের কেমোথেরাপি দেয়া হয়। অনেক ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার জন্য ট্রান্সফিউশন মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট দরকার হয়, কখনো কারো সাদা রক্ত লাগে, লাল রক্ত লাগে, আমাদের এখানে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। অর্থাৎ যখন এনাম মেডিকেল যাত্রা শুরু করে তখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েই যাত্রা শুরু করে।

আমাদের দেশের অনেক রোগীই হতদরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের। আবার যাদের আর্থসামাজিক অবস্থা ভালো তারা সবাই দেশের বাইরে যায় চিকিৎসার জন্য। তাই আমরা চিকিৎসার মান রেখেছি আন্তর্জাতিক মানের কিন্তু খরচ অত্যন্ত কম। আমাদের এখানে যে খরচে রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারে তার চেয়ে আরো গুণ বা ১০ গুণ বেশি খরচ লাগে বাংলাদেশের অন্যান্য ক্যান্সার হাসপাতালে। আমরা যে পরিমান খরচ নেই তা সরকারি হাসপাতালের সমপরিমান বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি। প্রতিনিয়তই আমরা হাসপাতালে ভর্তুকি দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছি। মাত্র ৩০ হাজার টাকায় সিমুলেশন, প্ল্যানিং, কনট্যুরিং এবং তার পরিপূর্ণ চিকিৎসা পাচ্ছে রোগীরা। এটি কোনো সরকারি হাসপাতালেও সম্ভব না, ৩০ হাজার টাকায় একটি প্যাকেজ করে দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়াও কোন রোগী যেন টাকার অভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত না হয়, বিষয়টাও আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখি।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসার মান বিশ্বমানের। এর পেছনে একটি কারণ হলো ভালো মানের সিটি স্ক্যান, এমআরআই, লিনিয়ার এক্সিলারেটর, এক্সরে, ল্যাবের সরঞ্জাম, ওটি টেবিল, ওটি লাইট, মাইক্রোস্কোপসহ পৃথিবীর সেরা মেশিন আমরা নিয়ে এসেছি। মেশিনগুলো চালানোর জন্য দেশী-বিদেশী ম্যান বিহাইন্ড দ্য মেশিন হায়ার করা হয়। বাংলাদেশের যারা সেরা ফিজিশিয়ান সার্জন তাদের আমরা হায়ার করে থাকি। বাংলাদেশে এমবিবিএসের পর পোস্ট গ্রাজুয়েশন, এফসিপিএস, এমএস, এমডি, এমআরসিপি, এফআরসিএস, এমআরসিএসএসব ডিগ্রি করা ২২৭ জন কনসালটেন্ট রয়েছেন; যারা সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক অধ্যাপক হিসেবে এখানে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এনাম মেডিকেল কলেজ কখনোই কোনো অনৈতিক কাজ সমর্থন করে না এবং প্রশ্রয়ও দেয় না, যে কারণে চিকিৎসকরা কাজ করতে অনেক স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তারা মায়া মমতা আন্তরিকতার সঙ্গেই রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন।

দেশের ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ রোগীর চিকিৎসা প্রাইভেট সেক্টর করে থাকে। প্রাইভেট সেক্টরে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে আর হেলথ কেয়ার সেক্টর অনেক বেশি ব্যয়বহুল। দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে অনেকগুলো মেশিন রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়। কিছু পার্টস রিপ্লেস করতে হয়, যা অনেক ব্যয়বহুল। সারা পৃথিবীতে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। সেই তুলনায় বাংলাদেশে কম। বিদেশে গিয়ে যদি কোনো অপারেশন করা হয়, দেখা যাবে দেশের চেয়ে বহুগুণ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের রোগীদের আর্থসামাজিক অবস্থা বেশি ভালো নয়, তাই তাদের ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থাটাও অনেক জরুরি। বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে ক্যাটাগরিওয়াইজ করে স্বাস্থ্য সেক্টরের চিকিৎসার ব্যয় একটি সুন্দর জায়গায় নিয়ে আসার জন্য এবং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজের জন্য। আমরা আশা করছি অচিরেই এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। আমরা ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন