একটি ইউনিক হাসপাতাল এনাম ক্যান্সার সেন্টার

বাংলাদেশে মুখগহ্বরের ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বেশি, এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ধূমপান। ধূমপান ছাড়া কি জেনেটিক বা লাইফস্টাইলের কারণে মুখগহবরের ক্যান্সার হতে পারে?

মুখগহ্বর বা মুখবিবরের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে ধূমপান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে আমরা মূলত মনোযোগ দিই টোব্যাকো গ্রহণের দিকে। সেটা ধূমপান আকারে হতে পারে আবার চিউইং আকারেও হতে পারে। অনেকে গুল ব্যবহার করে পরে সেটা মুখবিবরের নানা স্থানে রেখে দেয়। এগুলোই মুখগহ্বর বা মুখবিবরের ক্যান্সার তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া পুওর ওরাল হাইজিন মানে যারা মুখের যত্ন খুব কম করে, যাদের মুখের ভেতরে অনেক রকমের ময়লা জমে থাকে সেসব ধীরে ধীরে রোগীকে ক্যান্সারের দিকে ধাবিত করতে পারে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রকম ভাইরাস। যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, যেটা অনেকভাবেই মুখগহ্বরের ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত। সব ধরনের ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ হলো বংশগত অথবা জেনেটিক কারণ। ক্যান্সারের উত্পত্তিই হয় জেনেটিক মিউটেশনের কারণে। ফলে এর সঙ্গে জেনেটিক বিষয়টা অনেক সম্পৃক্ত।

অসুস্থতার কোন পর্যায়ে রোগীরা আপনাদের কাছে আসছেন?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীরা একটু দেরি করে আমাদের এখানে আসেন। এই দেরি করার পেছনে বেশকিছু কারণও আছে। ফুসফুস ক্যান্সারে কেউ আক্রান্ত হলে তার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে কাশি দেখা দেয়। কাশি অনেক কারণেই রোগীদের হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীরা অনেক দেরি করেন। অনেকে ভিন্ন মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করেন এবং যখন রোগটা তাদেরকে প্রকট আকারে আক্রান্ত করে তখন আমাদের কাছে আসেন। কাজেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীরা স্টেজ দুই বা তিনের আগে আমাদের কাছে আসেন না। অনেক ক্ষেত্রে চতুর্থ স্টেজে আমাদের কাছে আসেন।   

শেষ পর্যায়ে এলে চিকিৎসা কতটা জটিল হয়?

ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ,,, চারটি স্টেজ রয়েছে। তৃতীয় স্টেজ পর্যন্ত রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। আর যারা চতুর্থ স্টেজে আসেন তখন দেখতে হয় রোগ কতদূর ছড়িয়েছে, সেটার ওপর ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, রোগের ভবিষ্যৎ কী, চিকিৎসা কী এবং ভবিষ্যতে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপনের সম্ভাবনায় কতটুকু প্রভাব করতে পারি? স্টেজ , , ফুসফুস ক্যান্সারে অপারেশনের ভূমিকা আছে, রেডিওথেরাপি কেমোথেরাপির ভূমিকা আছে, আরো অনেক কিছুর ভূমিকা আছে। তবে রোগ যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যায় চিকিৎসা তত সহজ। রোগ যত বেশি অ্যাডভান্সড, তার চিকিৎসার ধরন তত বেশি জটিল।

উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা ওবেসিটি ফুসফুস ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সারকে কতটুকু প্রভাবিত করছে?

ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপ যদি কারো থেকে থাকে তাহলে সাধারণত তা ক্যান্সার তৈরিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। স্থূলতা বা ওবেসিটি টুকটুক সব ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে ফুসফুস ক্যান্সারের সঙ্গে ওজনের সম্পৃক্ততা খুবই কম। একজনের ক্যান্সারের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য রোগ যেমন কিডনি, ডায়াবেটিস, প্রেসার বা স্থূলতা থাকলে তা চিকিৎসার জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেকে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, রেডিয়েশন থেরাপি নিচ্ছেন তাদের চিকিৎসাসংক্রান্ত জটিলতাগুলো বাড়তে পারে। তবে এসব মূল ক্যান্সার তৈরিতে কোনো প্রভাব ফেলে না, পরবর্তী সময়ে চিকিৎসার যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে সেগুলো বাড়িয়ে দিতে পারে।

চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কী ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে?

ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সব ধরনের চিকিৎসা রয়েছে বাংলাদেশে। তবে সীমাবদ্ধতা রয়েছে সচেতনতার। হয়তো রোগী ওইভাবে সচেতন হচ্ছেন না বা আমরা সচেতন করতে পারছি না। কারণ ক্যান্সার চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল, রোগীর সংখ্যা বেশি, জনগণের সংখ্যা বেশি। যখনই রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে তখন তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা বেড়ে যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় সচেতনতা সর্বপ্রথম চিকিৎসা যেটা ভবিষ্যৎ সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।

ক্যান্সারবিষয়ক তথ্যের জন্য আমরা কেন এখনো কোনো সংস্থা বা পরিসংখ্যান তৈরি করতে পারিনি? এখানে কী ঘাটতি রয়েছে বলে আপনার মনে হয়?

এখানে আমাদের সরকারিভাবে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, বেসরকারিও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এনাম ক্যান্সার হাসপাতালের ক্ষেত্রে অলরেডি একটা পপুলেশন রেজিস্ট্রি আছে, যেখানে প্রতিটি ক্যান্সারের রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে থাকে। সরকারিভাবে যদি এটা আরো সুসংহত করা যায়, প্রতিটি জেলা, প্রতিটি এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা রাখা যায় তাহলে জিনিসটা সুন্দরভাবে গোছানো সম্ভব। যেহেতু ক্যান্সার চিকিৎসার সেন্টারের সংখ্যা খুব কম, চিকিৎসকের সংখ্যা খুব কম সে তুলনায় রোগীর সংখ্যা খুব বেশি আমার মনে হয়, সেটাই একটি সুন্দর ক্যান্সার রেজিস্ট্রি তৈরি করার ক্ষেত্রে বড় বাধা।

আপনাদের ক্যান্সার হাসপাতালের বিশেষত্ব সম্পর্কে আমাদের জানাবেন

প্রথমেই বলি, ক্যান্সার চিকিৎসা হচ্ছে সম্মিলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপির ভূমিকা, সঙ্গে সব ধরনের সাপোর্টিভ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এনাম ক্যান্সার সেন্টার শুধু ক্যান্সার রোগীদের নিয়ে চিকিৎসা করে না, এসব রোগীদের কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ছাড়াও অপারেশন, রিহ্যাবিলিটেশন, চিকিৎসাসংক্রান্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এই হাসপাতালে বিদ্যমান। এখানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। অত্যন্ত দক্ষ রেডিও অনকোলজিস্ট আছে। সব মিলিয়েই এনাম ক্যান্সার হাসপাতাল বাংলাদেশে একটি ইউনিক হাসপাতাল।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন