আধুনিক প্রযুক্তিতে দেয়া হয় রেডিয়েশন থেরাপি

ক্যান্সারকে ব্যয়বহুল চিকিৎসা বলাই যায়। এটা রোগী তার পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সরকার থেকে এখন কিছু অনুদান দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ক্যান্সার চিকিৎসা সেন্টারও তাদের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়েছে। তবে সরকারি সহযোগিতার পরিমাণ বাড়লে রোগীরা আরো বেশি উপকৃত হবে। আমাদের দেশে আগের তুলনায় ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে। তবে সব স্তরেই আমাদের দরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়ানো, যাতে ঠিক সময়ে রোগটিকে শনাক্ত করা যায়। জায়গায় আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। 

মোটামুটি সব ক্যান্সারের জন্যই কোনো না কোনো সময়ই রেডিয়েশনের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব ক্যান্সারের জন্য এটির প্রয়োজন হয় সেগুলো হলোব্রেইন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার, সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার। এসব রোগীরা যদি সার্জারি স্টেজে থাকে, তাহলে সার্জারির পর প্রায় সবারই রেডিয়েশন লাগে। সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রেডিয়েশনের সঙ্গে কেমোথেরাপিও দেয়া হয়।

ক্যান্সার শরীরের কোথায় হয়েছে আর রোগী কোন স্টেজে আছে তার ওপর নির্ভর করে রেডিয়েশন থেরাপি দিতে হয় এবং চিকিৎসা কতদিন চলবে। চিকিৎসা অনুশীলনকারী চিকিৎসকরাই কেবল জানেন যে রোগীর ধরন, ক্যান্সারের হিস্টোলজি, সাইট অনুযায়ী ডোজ ভিন্ন দিতে হয়। এছাড়া ডোজের ওপর নির্ভর করে দুই থেকে সাত সপ্তাহ পর্যন্ত থেরাপি দিতে হতে পারে। আমরা যদি চিন্তা করি আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও বাংলাদেশ রেডিয়েশন এত উন্নত ছিল না, যা এখন অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। এক সময় মানুষ দেশে চিকিৎসা নিতে চাইত না এবং বেশির ভাগই বিদেশে চলে যেত। এখন অধিকাংশ রোগী দেশেই চিকিৎসা নিচ্ছে। আমাদের সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপ্রতুলতা আছে কিন্তু সেই অপ্রতুলতা দেশের প্রাইভেট সেক্টর পূরণ করে দিচ্ছে। আধুনিক বিশ্বের সমমানের রেডিয়েশন ব্যবস্থা আমাদের অনেক প্রাইভেট হাসপাতালেই রয়েছে। আমাদের সেন্টারেও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রেডিয়েশন থেরাপি দেয়া হচ্ছে। থ্রিডিসিআরটি, আইএমআরটিসহ সবগুলো প্রযুক্তিই আমাদের এখানে অ্যাভেইলেবল হচ্ছে। ইভিআরটি এক্সটার্নাল বিম রেডিয়েশন থেরাপিসহ ব্রাকি থেরাপিও, যা জরায়ু ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য দরকার হয় সেটাও এখানে রয়েছে।

রেডিয়েশন দেয়ার আগে অনেকেই ধারণা নেন এটি আসলে কীভাবে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে আমরা স্ক্যান নেই, তখন অনেক রোগীই মনে করে স্ক্যান মানে সিটি স্ক্যান। তাহলে কেন এত বেশি সময় ব্যয় হবে এখানে? আসলে রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে যে স্ক্যান করা হয় তাকে বলা হয় সিটি সিমুলেশন। রোগীদের নির্দিষ্টভাবে ইমোবালাইজ বা ফিক্স করা হয়, এর জন্য কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে স্ক্যান নেয়া হয়। ওই স্ক্যানের উপরে প্রতিটায় ধরে ধরে রোগের জায়গাটা একে দিতে হয়। একই সঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানের সঙ্গে শরীরের নরমাল অর্গানগুলোও একে দিতে হয়। এসব কিছুর পরেই আমাদের ফিজিসিস্টরা রোগীদের রেডিয়েশন দেন। আর রেডিয়েশন শেষে চিকিৎসকদের দেখানো হয় যে টিউমারটা এবং নরমাল টিস্যু কতটুকু ডোজ পাচ্ছে। প্রতিটা ক্যান্সারের জন্যই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডোজ লিমিট ঠিক করা হয়। ফিজিসিস্টরা ওই ডোজটা অ্যাচিভ করে আমাদেরকে জানান।

আবার রেডিয়েশন যখন দেয়া হবে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে, এমন নয়। বাসায় বা হাসপাতালের আশপাশে থেকেও নিয়মিত এসে থেরাপি নিতে পারেন। সাধারণত সপ্তাহে পাঁচদিন রেডিয়েশন দেয়া হয় এবং দুদিন বন্ধ থাকে। সারা বিশ্বেই নিয়ম অনুসরণ করা হয়।

পাঁচ বছর আগের এবং এখনকার বাংলাদেশের কথা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যেহেতু আমাদের নির্দিষ্ট কোনো রেজিস্ট্রি নাই, সেজন্য কত শতাংশ বা প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। তবে মোটামুটি ফুসফুস, ব্রেস্ট বা সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীই বেশি চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদেশের প্রেক্ষিতে আমরা দেখছি, রোগীরা তাদের রোগের শুরুতে আসছেন না। অ্যাডভান্স লেভেলে বা ছড়িয়ে গেলেই কেবল রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসেন। অথচ ক্যান্সারের প্রথমদিকে এলে এটা পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। 

শরীরের যেকোনো জায়গাতেই ক্যান্সার হতে পারে আর এক ক্যান্সারের রয়েছে অনেক ধরন। যেমন ব্রেস্ট ক্যান্সারেরই অনেক ধরন আছে। হিস্টোলজিক্যালি একেক ধরনের হতে পারে। এরকমভাবে শরীরের বিভিন্ন জায়গার জন্যই ক্যান্সারের নানা রকম হিস্টোলজি থাকে। রেডিয়েশন নিয়ে আগে হয়তোবা এত কাজ হতো না তবে এখন অনেক কাজ হচ্ছে। রোগীদের কী কী জটিলতা হচ্ছে এর উপরে ফলোআপে রাখা হয়। রোগের সিম্পটম অনুসারে তিন থেকে ছয় মাস পর পর ফলোআপে রাখা হয়। সময়ে রোগীদের দরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমরা করতে দিই। এছাড়া এসব তথ্য গবেষণার কাজেও ব্যবহার করছি আমরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন