ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে রোগ নির্ণয় হয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে

রাজধানীর গ্রিন রোডে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার ছবি: সালাহউদ্দিন পলাশ

ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল চেষ্টা করে বিশ্বমানের সেবা সবার কাছে পৌঁছে দিতে। হাসপাতালে রয়েছে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি। উন্নত প্রযুক্তি আন্তরিক সেবার মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় প্রতিটি রোগীকে  সর্বাধিক স্বাচ্ছন্দ্য দেয়ার। জেনে নিন হাসপাতালে থাকা বিভিন্ন অত্যাধুনিক সেবা সম্পর্কে।

কেমোথেরাপি ডে-কেয়ার ইউনিট

রোগীদের সুষ্ঠুভাবে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে রয়েছে ডে-কেয়ার ইউনিট। কোনো রোগীর যদি কেমোথেরাপির প্রয়োজন পড়ে এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন না থাকে, তাহলে এখানে তিনি দিনে দিনে থেরাপি নিয়ে বাসায় ফিরতে পারবেন।

রেডিওথেরাপি

ইংরেজি রেডিয়েশন থেরাপি শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ রেডিওথেরাপি। কোনো রোগের চিকিৎসায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাধ্যমে থেরাপি দেয়া হয়। এটি মূলত ক্যান্সার চিকিৎসার একটি পদ্ধতি। এতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এক্স-রে ব্যবহার করা হয়। কাজের জন্য ব্যবহূত হয় লিনিয়ার এক্সেলেটর যন্ত্র। রোগীর শরীরে এটি প্রয়োগে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করা হয়। ফলে রোগটি আর ছড়িয়ে পড়তে পারে না। এটি ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, যেন ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের আশপাশে থাকা সুস্থ কোষ ধ্বংস না হয়। তবে থেরাপির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সুস্থ কোষগুলো থেরাপি বন্ধ করলে আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে থেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। অত্যাধুনিক ট্রুবিএম রেডিওথেরাপি মেশিনের মাধ্যমে রেডিওথেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

রেডিও ডায়াগনস্টিক    

রেডিও ডায়াগনস্টিকের মাধ্যমে রোগীর শরীরের অভ্যন্তরের ছবি তোলা হয়। একজন রেডিওলজিস্ট সেই ছবি বিশ্লেষণ করে রোগের অবস্থার প্রতিবেদন তৈরি করেন। এটির মাধ্যমে এক্স-রে, আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি, ম্যামোগ্রাফি এবং অন্য আরো কিছু পদ্ধতিতে রোগের অনুসন্ধান করা হয়।

সিটি সিমুলেশন

সিটি সিমুলেশন করা হয় টিউমারের প্রকৃত অবস্থান এবং আকার শনাক্ত করার জন্য। এটি মূলত রেডিওথেরাপি দেয়ার আগে করা হয়। পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে ল্যাবএইড হাসপাতালে। তাছাড়া রয়েছে প্ল্যানিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন কক্ষ।

আল্ট্রাসাউন্ড

আল্ট্রাসাউন্ড বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি একটি ইমেজিং পদ্ধতি। এর মাধ্যমে গলা, বুক, পেটসহ বিভিন্ন অঙ্গে তরঙ্গের মাধ্যমে ছবি তোলা হয়। পদ্ধতিতে শরীরের নির্দিষ্ট ওই অঙ্গের অবস্থা বোঝা যায়। এতে লাইভ-থ্রিডির মাধ্যমেও রোগের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের কারণে অঙ্গের কোনো ধরনের পরিবর্তন বা গঠন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার কারণে রোগীর শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। পরীক্ষাও ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে রয়েছে।

ইলেকট্রো কার্ডিওগ্রাম (ইসিজি)

ইসিজি হূদযন্ত্রের ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্টিভিটি সংরক্ষণ করে। এর মাধ্যমে হূিপণ্ডের স্পন্দন হার নির্ণয় করা হয়। আধুনিক ইসিজি মেশিনগুলোতে তাত্ক্ষণিকভাবে একটি ডিসপ্লেতে ইসিজি গ্রাফ পর্যবেক্ষণ করা যায়। গ্রাফ দেখেই চিকিৎসক বুঝে নেন রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না বা হার্টের নিয়মিত ছন্দ ঠিক আছে কি না। পরীক্ষা করার জন্য একটি সমতল বিছানায় রোগীকে শুইয়ে হূিপণ্ডের কাছাকাছি ছয়টি নির্ধারিত স্থানে ইলেকট্রোড বা তড়িত্দ্বার লাগানো হয়। পরীক্ষাটি সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত এবং কোনো পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। শুধু বুকে ব্যথা শ্বাসকষ্টের অভিযোগ নিয়ে আসা রোগীর ক্ষেত্রেই নয়, বয়স্ক রোগীর অপারেশনের পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবেও ইসিজি করা হয়। তাছাড়া ইসিজি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষারও একটি অংশ। তবে ইসিজি করলেই হূদরোগ ধরা পড়ে না। এক্ষেত্রে ইটিটি, ইকোকার্ডিওগ্রাম করোনারি এনজিওগ্রাম পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

থেরাপি

ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে রয়েছে শল্য চিকিৎসা (সার্জারি), কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ইত্যাদি।

ভ্যাকসিন

ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে অত্যাধুনিক ভ্যাকসিন সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-, টাইফয়েড ভ্যাকসিন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন, নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন, চিকেনপক্স ভ্যাকসিন, মিজেলস রুবেলা ভ্যাকসিন, মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন, ইয়েলো ফিভার ভ্যাকসিন, র্যাবিক্স ভ্যাকসিন, ডায়রিয়া ভ্যাকসিন, কলেরা ভ্যাকসিন, টিটেনাস ভ্যাকসিন, ট্র্যাভেলার্স ভ্যাকসিন এবং নারীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা রয়েছে।

স্ক্রিনিং প্যাকেজ

তিন ধরনের ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্যাকেজ রয়েছে ল্যাবএইড হাসপাতালে। তার মধ্যে হাজার টাকায় সার্ভিক্যাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্যাকেজে থাকছে এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট, পিএপি স্মেয়ার, কমপ্লিমেনটারি ব্রেকফাস্ট, ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন বাই ডক্টর ইত্যাদি।

টিউমার প্রোফাইল স্ক্রিনিং (মহিলা) প্যাকেজে হাজার ৮০০ টাকায় থাকছে সিএ-১২৫, সিএ-১৫., সিএ-১৯., পাপ স্মেয়ার, ওবিটি (স্টুল ওকাল্ট ব্লাড) টেস্ট, পিবিএফ (ব্লাড ফিল্ম), কারসিনো এমব্রায়োনিক এন্টিজেন (সিইএ), আলফা ফেটো প্রোটেইন (এফপি), কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট, ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন বাই ডক্টর ইত্যাদি সুবিধা রয়েছে।

টিউমার প্রোফাইল স্ক্রিনিং (পুরুষ) প্যাকেজে হাজার টাকায় থাকছে পিএসএ, পিবিএফ (ব্লাড ফিল্ম), সিএ-১২৫, সিএ-১৫., সিএ-১৯., ওবিটি (স্টুল ওকাল্ট ব্লাড) টেস্ট, কারসিনো এমব্রায়োনিক এন্টিজেন (সিইএ), আলফা ফেটো প্রোটেইন (এফপি), কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট, ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন বাই ডক্টর ইত্যাদি।

ব্রেস্ট হেলথ স্ক্রিনিং প্যাকেজ পাওয়া যাবে হাজার ২০০ টাকায়। প্যাকেজে থাকছে ম্যামোগ্রাফি অব বোথ ব্রেস্ট, ইউএসজি অব ব্রেস্ট (বোথ)+ এক্সিলা, ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন বাই ডক্টর।

স্মোকার স্ক্রিনিং (নারী-পুরুষ) প্যাকেজে থাকছে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি), সেরাম লিপিড প্রোফাইল, ইউরেয়া সেরাম, এএলটি (এসজিপিটি) সেরাম, এলকালাইন পসপাটাস, ক্রিয়েটিনাইন সেরাম, সেরাম ইলেকট্রোলাইটস, সেরাম বিলিরুবিন, সেস্ট এক্স-রে, পি/ ভিউ, পিএফটি (স্পিরোমেট্রি), কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট, ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন বাই ডক্টর ইত্যাদি।

এছাড়া কম্প্রিহেনসিভ কার্ডিয়াক চেকআপ প্যাকেজ, ডায়াবেটিকস স্ক্রিনিং প্যাকেজসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে মোট ২৭টি প্যাকেজের মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন