প্রযুক্তি খাতের আয় দ্রুত পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ

বণিক বার্তা ডেস্ক

গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ছবি: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস

কভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্বের ছোট-বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো মুনাফা অর্জন করেছে। সে সময় বিক্রিও ছিল অনেক। তবে এর পরের বছর ২০২২ সালে চিপ সংকট, মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি গ্রাহক চাহিদা ও ব্যয় কমায় প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমতে থাকে। আয় ও ব্যয়ে সামঞ্জস্য আনতে কর্মী ছাঁটাইও শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো ২০২৩ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও আয় প্রতিবেদন ভিন্ন কথা বলছে। শিগগিরই এ খাতের আয় পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। খবর রয়টার্স।

অ্যাপল থেকে শুরু করে, গুগল ও অ্যামাজন ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে যে আয় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ তৈরি করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোয় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চাহিদা, উচ্চসুদহার এবং জানুয়ারিতে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন সামনে আনছে। নাসসেন্ট জানায়, চীনে গ্রাহক ব্যয় পুনরুদ্ধার হতে থাকলেও সেটি সামগ্রিক অবস্থা পরিবর্তনে যথেষ্ট নয়।

বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলেরও আশা ভঙ্গ হয়েছে। মূলত আইফোনের বিক্রি কমে যাওয়া এবং চীনে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়া এর মূল কারণ। অ্যামাজন জানায়, গ্রাহক চাহিদা কমে যাওয়ায় চলতি প্রান্তিকে পরিচালন মুনাফাও কমবে। অন্যদিকে আলফাবেটের অনলাইন বিজ্ঞাপনদাতারাও তাদের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। চতুর্থ প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারমূল্য অনেক কমেছে। গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের বাজার মূল্য ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২৩ সালে এসঅ্যান্ডপি৫০০-এর ব্রড মার্কেটে নেতৃত্ব দিয়েছে। সূচকটি ৯ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে অ্যামাজনের ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অ্যাপল, স্টারবাকসসহ অন্য বেলওয়েদারদের কাছ থেকে কিছু বিনিয়োগকারী সিলভার লাইনিং দেখতে পেয়েছেন। সিলভার লাইনিং হচ্ছে একটি ব্যবসায়িক পদ্ধতি। যেখানে ১ লাখ থেকে ২ লাখ ডলার মুনাফা অর্জন ছোট প্রতিষ্ঠানের কিছু দিক নির্ধারণ করে থাকে। এর মধ্যে ব্যবসায়িক মডেল, এক বছরের আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ, লক্ষ্য পূরণে কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও জবাবদিহিতার বিষয়টি অন্তর্গত। প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, চীনে কভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে আরোপিত লকডাউনের কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। 

রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক বলেন, ‘‌ডিসেম্বরে চীনে সবকিছু যখন খুলে দেয়া শুরু হয় তখন আমরা স্টোরগুলোয় নভেম্বরের তুলনায় গ্রাহকের সংখ্যা বাড়তে দেখেছি। তিনি জানান, চীনের লকডাউনের কারণে চাহিদা-উৎপাদন দুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও মার্কিন ডলারের উত্থান-পতনের কারণে কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খেতে হয়েছে।

অ্যারিজোনার ল্যাফার টেংলার ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী ন্যান্সি টেংলার বলেন, ‘‌মুদ্রার দরে উত্থান-পতন অব্যাহত ছিল। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তা নিম্নমুখী থাকবে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ চেইন বেশি সমস্যা তৈরি করেছে।’

স্টারবাকস জানায়, দ্রুত বর্ধনশীল বাজার হলেও ২০২২ সালে চীনে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি ২০২১ সালে ২৯ শতাংশ কমেছে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেখানে ভোক্তার আশানুরূপ উপস্থিতি দেখা গেছে বলে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মিশ্র চিত্র প্রকাশ করেছে। কনজিউমার স্ট্যাপল জায়ান্ট ক্লোরক্স জানায়, ২০২২ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে কোম্পানির চারটি ব্যবসায়িক বিভাগের তিনটিতে পণ্যের পরিমাণ কমেছে। অন্যদিকে গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফোর্ড জানায়, সামনের বছর আরো কঠিন হবে। এসব প্রতিষ্ঠান উচ্চ সুদহারের বিপক্ষে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ এজন্য চাহিদাও কমে যাচ্ছে।

বন্ডের কারণে চলতি বছর স্টক হার বেড়েছিল। কারণ কম ফলন উচ্চ-মূল্যায়নের শেয়ারগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। আলফাবেট ও মেটা কিছু ক্ষেত্রে তাদের ব্যয় কমিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বিনিয়োগকারীর ধারণা সুদহার বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে চাহিদাও কমছে।

ক্রেসেট ক্যাপিটালের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জ্যাক অ্যাবলিন বলেন, ‘‌অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বেশ কয়েকটি বিষয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছি। এর মধ্যে অর্থনীতিতে উচ্চসুদহার, মূল্যস্ফীতির প্রভাব, আয় ও কর্মসংস্থানের বিষয় রয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন