রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ ছাড়াই চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছাঁটাই

এসএম িপয়াল, রংপুর

চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছঁাটাই করা রমেক হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাসহ সেবামূলক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন জনবল নিয়োেগর টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। আবার  নতুন নিয়োগ না হতেই সদ্যবদলি হওয়া পরিচালক আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক প্রায় অর্ধেক কর্মী ছঁাটাই করেছেন। এ অবস্থায় হাসপাতালের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে দীর্ঘদিন ধরে চতুর্থ শ্রেণীর জনবল সংকটে থাকা রমেক হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাসহ সেবামূলক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ শয্যা হাসপাতালে শুরুতে চতুর্থ শ্রেণীর জনবল ছিল ৫৩০ জন। রমেক হাসপাতাল (প্রস্তাবিত ১৫০০ শয্যা) ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও বর্তমানে জনবল কমে ২৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০১২ সালের পর নতুন  কোনো জনবল নিয়োগ না হওয়ায় ৩০০ জনকে পরিচ্ছন্নতাকাজের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। তবে জনবল সংকটের কারণে ৪৭টি ওয়ার্ড, ৪১টি কেবিন এবং ডায়রিয়া, আইসোলেশন ভবন, করোনা ইউনিট, সিসিইউ, আইসিইউ, পথ্য বিভাগ, ডায়ালাইসিস, ব্লাডব্যাংক, বার্ন ইউনিট, এন্ডোসকপি, রেডিওথেরাপি, রেডিওলজি, ডেন্টাল এবং মরচুয়ারিসহ সব বিভাগের বিভিন্ন কাজে তাদের সম্পৃক্ত করা হতো। কিন্তু নতুন জনবল নিয়োগ না দিয়ে সদ্যবদলি হওয়া পরিচালক চুক্তিভিত্তিক জনবলের প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনতে বাধ্য করেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আউট সোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওয়ার্ড মাস্টার, ইলেকট্রিশিয়ান, যানবাহন চালক ও সহকারী, ওয়ার্ড বয়, আয়া, নিরাপত্তাকর্মী, ওটি অ্যাটেনডেন্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং মালি পদে ১৪১ জনকে নিয়োগের জন্য গত অক্টোবরে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। এতে নয়টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। রমেক হাসপাতালের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির (টিইসি) কাছে প্রাথমিক মূল্যায়নে তিনটি প্রতিষ্ঠান এবং কারিগরি মূল্যায়নে তিনটিসহ মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র অগ্রহণযোগ্য হয়। বাকি তিন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। কারিগরি মূল্যায়ন শেষে গ্রহণযোগ্য দরপত্রে নম্বর দেয়া হয়। এতে গোল্ফ সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড সার্বিক বিবেচনায় ১০০ নম্বর পায়। বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান সাকিব ট্রেডার্স লিমিটেড এবং মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড কোং নম্বর পায় যথাক্রমে ৭৮ ও ৬৮ নম্বর। ফলে সফলকাম দরদাতার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের সুপারিশসহ টেন্ডার অনুমোদনের পরবর্তী গ্রহণ ও অন্য কার্যক্রম সম্পাদনে রমেক পরিচালককে অবগত করে টিইসি, কিন্তু সদ্য বদলি হওয়া রমেক পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান বিষয়টি আমলে না নিয়ে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনবল সরবরাহের জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেন। গত ১৭ জানুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিডিউল জমা দেয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। পরে তা সাত দিন বাড়িয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি করে আবার পত্রিকায় সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। অবশেষে সব টেন্ডার প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।

এদিকে গত ২৩ জানুয়ারি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা দুর্নীতিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে রমেক পরিচালক ডা. শরীফুল হাসানের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবি জানান। পরে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অবশেষে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ রমেক পরিচালক ডা. শরীফুলকে প্রথমে রংপুর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) পরে সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হিসেবে বদলি করে। 

বাংলাদেশ (১৬-২০ গ্রেড) সরকারি কর্মচারী রমেক শাখার সভাপতি মো. শাহীনুর ইসলাম শাহীন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর জনবলে চরম সংকট রয়েছে। জনবল বৃদ্ধি না পেলেও হাসপাতালের পরিধি বেড়েছে। প্রতিদিন ২ হাজারের মতো রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকছেন। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছে। পাশাপাশি রোগীর স্বজন, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে প্রতিদিন অনেক মানুষের সমাগম হয় হাসপাতালে। জনবল সংকটে তিন শিফটে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় নাভিশ্বাস উঠেছে কর্মচারীদের। উপরন্তু নতুন জনবল নিয়োগ না হতেই চুক্তিভিত্তিক জনবল হ্রাস করায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নতুন জনবল সরবরাহের জন্য টেন্ডারে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানটির দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) কর্তৃক সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও কাজ না দেয়া সত্যিই দুঃখজনক। তিনি দ্রুত স্থগিত জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানান।

মূল্যায়ন কমিটির সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পর কেন গোল্ফ সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডকে কাজ না দিয়ে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান এবং সর্বশেষ টেন্ডার স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে, টিইসির সদস্য সচিব এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামান বলেন, সদ্যবদলি হওয়া পরিচালক নিজ ক্ষমতাবলে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান ও স্থগিত করেছেন। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক এবং কারিগরি মূল্যায়ন শেষে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত গোল্ফ সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের সুপারিশসহ টেন্ডার অনুমোদনের পরবর্তী গ্রহণ ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদনে রমেক পরিচালককে অবগত করা হয়েছিল। তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে হাসপাতালের পরিধি ও কার্যক্রম অনেক বেড়েছে, কিন্তু জনবল সে তুলনায় অনেক কম। পাশাপাশি নতুন জনবল নিয়োগ না করে চুক্তিভিত্তিক জনবল হ্রাস ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে সদ্যবদলি হওয়া রমেক হাসপাতালের পরিচালককে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পরে একাধিকবার হোয়াটসঅ্যাপে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন