আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পথে বোয়িং ৭৪৭ যুগ

বণিক বার্তা ডেস্ক

বোয়িং ৭৪৭ ছবি: এপি

আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বোয়িং ৭৪৭ যুগের। আকাশপথে ভ্রমণের সুযোগকে সবার জন্য উন্মোচন করে দিয়েছিল উড়োজাহাজটি। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মানুষের উড্ডয়নের ইতিহাসে যুক্ত। সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আকাশভ্রমণকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনেও ভূমিকা ছিল ব্যাপক। পরিবহন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের। বোয়িং ফ্যাক্টরি ওয়াশিংটনের এভরেটে থেকে সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের উপস্থিতিতে বিদায় জানানো হয় একটি বোয়িং ৭৪৭-৮ কার্গো প্লেনকে। পাঠিয়ে দেয়া হয় অ্যাটলাস এয়ারের কাছে।

উড়োজাহাজের আকৃতি, উড্ডয়ন সীমা ও সক্ষমতা বিবেচনায় বোয়িং ৭৪৭ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের মধ্যেও আকাশপথে ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ে। সত্তরের দশকে জ্বালানি সংকটের সময়ও সাফল্যের সূচক ছিল উর্ধ্বমুখী। এআইআর কনসালট্যান্সির উড়োজাহাজ চলাচল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাইকেল মারলুজিয়াউ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‌উড়োজাহাজটি সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত করেছিল।’

বোয়িং মোট ১ হাজার ৫৭৪টি ৭৪৭ উড়োজাহাজ নির্মাণ করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করেছে আকাশপথ। ষাটের দশকে যাত্রা বোয়িং ৭৪৭—এর। তখন আকাশপথের উড্ডয়নের ঝোঁক ছিল ক্রমবর্ধমান। বিমানবন্দরগুলো ক্রমেই ব্যস্ত হয়ে উঠছিল। ঠিক সে সময়েই বোয়িং অধিক যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জেটের ধারণা সামনে আনে। ইঞ্জিনিয়াররা বিমানকে লম্বা করার বদলে প্রশস্ত বানানোর চিন্তা করলেন। তারই প্রমাণ বোয়িং ৭৪৭। উড়োজাহাজটি যাত্রা করে চারটি ইঞ্জিন নিয়ে। শুরু থেকেই মাথায় রাখা হয় পণ্য পরিবহনের বিষয়টিও। এজন্য কিছু বিষয়ে সামঞ্জস্য করে নিতে হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই জন্ম নিয়েছে উড়োজাহাজে হাম্প ব্যবস্থার। ঐতিহাসিক মাইকেল লোম্বার্দি দাবি করেন, ‘উড়োজাহাজটি ছিল আকাশপথের রানীর মতো। ইতিহাসে প্রথম দুই আইল বিশিষ্ট উড়োজাহাজ এটি।’

আশি ও নব্বইয়ের দশকে ৭৪৭ ছিল শিল্পের জন্য প্রধান অনুষঙ্গ। ১৯৯০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরিবহন করত উড়োজাহাজটি। অগুনতি ফ্লাইট চলেছে নিউইয়র্ক, প্যারিস, লন্ডনের মধ্যে। একুশ শতকের প্রথম পর্যন্ত এয়ারবাস ৩৮০ যাত্রার আগ পর্যন্ত বোয়িং ৭৪৭ ছিল সবচেয়ে বড় যাত্রী পরিবাহী উড়োজাহাজ। তবে জ্বালানি বড় উড়োজাহাজের জন্য বড় ধরনের অনুঘটক। ফলে আধুনিক ও সাশ্রয়ী উড়োজাহাজ আবিষ্কৃত হওয়ার পর ক্রমে ম্লান হয় বোয়িং ৭৪৭-এর প্রভাব। পরবর্তী প্রজন্মের উড়োজাহাজ, বিশেষ করে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ও এয়ারবাস ৩৫০ আরো বেশি কর্মক্ষম। মহাদেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করে। আকাশপথে যুক্ত হয় আরো অনেক স্থান। নতুন উড়োজাহাজগুলো আকাশভ্রমণকে সহজ করেছে চাহিদা অনুযায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক বিমানবন্দরগুলো ২০১৭ সাল থেকেই ৭৪৭ উড়োজাহজ উড্ডয়ন বন্ধ করে দেয়।

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বোয়িং ৭৪৭-এর কিছু সীমাবদ্ধতা দেখা যায়, যা নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজগুলোয় নেই। ফলে কমতে থাকে উড়োজাহাজ নির্মাণ। সর্বশেষ ৭৪৭-৮ উড়োজাহাজ উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ২০০৫ সালে। বোয়িং তখন ৪৮টি যাত্রীবাহী ও ১০৭টি পণ্যপরিবাহী উড়োজাহাজ বিক্রি করেছিল।

২০২০ সালে বোয়িং তাদের ৭৪৭ উড়োজাহাজটি নির্মাণ বন্ধের ঘোষণা দেয়। তার পরও বিদ্যমান উড়োজাহাজগুলো আরো কয়েক দশক ধরে উড্ডয়নের কথা। বিশেষ করে কার্গো হিসেবে। বড় বড় শিল্পপণ্য ও যন্ত্র পরিবহনের জন্য ৭৪৭ উড়োজাহাজ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন