বিপর্যয়ের মুখে আদানি গ্রুপ

বণিক বার্তা ডেস্ক

আদানি গ্রুপ গত এক সপ্তাহে সম্পদ খুইয়েছে ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলারেরও বেশি। পুঁজিবাজারে অবাধে কমছে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদর। কমেছে স্বত্বাধিকারী গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণও। এর মধ্যেই আবার ভারতের ব্যাংক আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আদানি গ্রুপের মোট ঋণের হিসাব চেয়ে পাঠিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)

এক সপ্তাহ আগেও বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ছিলেন গৌতম আদানি। নিউইয়র্কভিত্তিক হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদনের জের ধরে তার মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার থেকে আগ্রহ হারাতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা।

সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারমূল্য কমেছে ১০ শতাংশ। এছাড়া আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন, আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি ট্রান্সমিশনের দরপতন হয়েছে ১০ শতাংশ করে। অন্যদিকে আদানি পাওয়ার আদানি উইলমারের দরপতন হয়েছে শতাংশ করে।

এর মধ্যেই ভারতের ব্যাংক আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আদানি গ্রুপের সঙ্গে লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে আরবিআই। আদানি গ্রুপের বর্তমান বিপর্যয় ভারতের ব্যাংক আর্থিক খাতের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশটির ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে। অবস্থায় আদানি গ্রুপের বর্তমান পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাত দিয়ে ইকোনমিক টাইমস (ইটি) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) একাই আদানি কনগ্লোমারেটের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিয়েছে ২৬০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। যদিও নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকটির সর্বোচ্চ ঋণ দেয়ার অনুমোদন রয়েছে এর অর্ধেক পরিমাণ।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ওই সূত্র জানিয়েছে, এসবিআইয়ের ঋণের মধ্যে ২০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ আবার বিদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা রয়েছে।

যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর দাবি, আদানি গ্রুপের ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ধরনের ঝুঁকিতে নেই। বিষয়ে এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান দীনেশ কুমারা খাড়ার বক্তব্য হলো আদানি গ্রুপ ঋণের কিস্তিগুলো ঠিকঠাকভাবেই পরিশোধ করছে এবং পর্যন্ত ব্যাংকটি আদানি গ্রুপকে যে ঋণ দিয়েছে, তা তাত্ক্ষণিকভাবে বড় দুশ্চিন্তায় রূপ নেয়ার কোনো কারণ দেখছেন না তিনি।

এসবিআইয়ের এমন দাবি সত্ত্বেও ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আদানি গ্রুপের শেয়ারগুলোর ক্রমাগত দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে কনগ্লোমারেটটিতে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এমনকি এসব শেয়ার আর্থিক খাতে জামানত হিসেবেও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।

বৈশ্বিক পুঁজিবাজারেও এখন আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতনের প্রভাব পড়েছে ক্রেডিট সুইস গ্রুপ এজি এবং সিটিগ্রুপ ইনকরপোরেশনের ওয়েলথ ইউনিটগুলো এরই মধ্যে মার্জিন ঋণের জামানত হিসেবে গৌতম আদানির কোম্পানিগুলোর শেয়ার গ্রহণ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি ওয়াল স্ট্রিটেও গ্রুপটির বিনিয়োগ এখন নজরদারির আওতায় রয়েছে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকে আদানির কোম্পানিগুলোর ঋণ রয়েছে হাজার কোটির সমপরিমাণ। গত মাসের শেষ দিকে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অতুল গোয়েল স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংকটির দেয়া ঋণের এক-তৃতীয়াংশই ব্যবহার হয়েছে আদানির বিমানবন্দর ব্যবসায়। বাড়তি নগদ প্রবাহের কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির কোনো সমস্যা হয় না।

বেসরকারি ব্যাংক আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাংক লিমিটেডের দাবি, প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণে আদানি গ্রুপের অংশ দশমিক শতাংশেরও কম। ইন্ডাসইন্ড ব্যাংক লিমিটেড নামে আরেকটি ব্যাংক জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণে আদানির অংশ দশমিক শতাংশ।

আদানি গ্রুপের বিপত্তির সূত্রপাত হয় হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর। এতে বলা হয়, আদানি গ্রুপের ঘাড়ে বিপুল ঋণের বোঝা। কনগ্লোমারেটটির হিসাবরক্ষণেও রয়েছে সমস্যা। আদানি গ্রুপ বহু বছর ধরেই অভাবনীয় মাত্রায় শেয়ারবাজার অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতিতে জড়িত। শেয়ারবাজারে তাদের যে অবস্থান, তার অনেকটাই কৃত্রিম।

এই এক প্রতিবেদনে টলে যায় আদানির কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্য। শুরু হয় পুঁজিবাজারে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর দরপতন। আদানি গ্রুপের দাবি, হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সমর্থন আছে তাদের প্রতি।

যদিও কনগ্লোমারেটটির দাবির বিপরীত পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে বাজারে। শেয়ারবাজারে শত বিলিয়ন ডলার হারানোর পাশাপাশি একই সঙ্গে কমেছে গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্যও। গত সপ্তাহের বিশ্বব্যাপী তৃতীয় শীর্ষ ধনী আদানি এখন তালিকার ১৬ নম্বরে। কয়েকদিনে তার ব্যক্তিগত সম্পদমূল্য কমেছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার।

যদিও বর্তমান সংকট নিয়ে চিন্তিত নন বলে জানিয়েছেন গৌতম আদানি। তিনি বলেন, আমাদের ব্যালান্স শিট ভালো আছে, নগদ প্রবাহ এবং সুরক্ষিত সম্পদও শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আমাদের অতীত রেকর্ড ভালো। তাই পরিস্থিতি গ্রুপের বিদ্যমান কার্যক্রম ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন