স্পট থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত

জুন পর্যন্ত ১০-১২ কার্গো কিনতে ব্যয় হতে পারে ১০ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক কার্গো এলএনজি কিনতে বাংলাদেশের ব্যয় হবে ৮০০ কোটি টাকা ছবি: ফাইল

স্পট মার্কেট থেকে আবারো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ক্রয় শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে বিষয়ে নীতিগত অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জুনের মধ্যে স্পট মার্কেট থেকে ১০-১২ কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এলএনজি আমদানিতে অনুমোদিত ব্যয় সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও জ্বালানি বিভাগসংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, ৬২ হাজার টনের এক কার্গো এলএনজি কিনতে ব্যয় হবে ৮০০ কোটি টাকা। অনুযায়ী সরকারের পরিকল্পনার ভিত্তিতে জুনের মধ্যে ১০-১২ কার্গো এলএনজি কিনতে ব্যয় হবে কমপক্ষে হাজার থেকে হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সময়ের মধ্যে বর্ধিত চাহিদার কারণে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে গেলে জুন পর্যন্ত বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ আরো বেড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ওই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, টোটালএনার্জি কোম্পানির কাছ থেকে কার্গো কেনা হচ্ছে। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি কিনতে ১৯-২০ ডলার খরচ হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান গতকাল সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন। এলএনজি আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। স্পট মার্কেট থেকে এসব জ্বালানি কিনবে জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগ। মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ এগ্রিমেন্টের (এমএসপিএ) আওতায় বিদ্যুৎ জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (সংশোধন) আইন ২০২১-এর আওতায় কেনা হবে এলএনজি।

এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ঊর্ধ্বমুখী থাকায় গত বছর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রাখে সরকার। বর্তমানে জ্বালানি পণ্যটির দাম নিম্নমুখী হয়ে ওঠায় স্পট মার্কেট থেকে আবারো এলএনজি ক্রয় শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সামনের মাসগুলোয় স্পট মার্কেট থেকে বাংলাদেশ আরো এলএনজি কিনবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

পেট্রোবাংলার সাবসিডিয়ারি রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) গত সপ্তাহে এলএনজি ক্রয়ের প্রক্রিয়া শুরু করে। বাংলাদেশের সরবরাহ পাওয়ার কথা চলতি মাসের শেষদিকে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কোম্পানিকে এলএনজি সরবরাহের কাজ দেয়া হয়নি। তবে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে টোটালএনার্জি সরবরাহের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এলএনজির সরবরাহমূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৯ ডলার ৭৪ সেন্ট।

বিষয়ে টোটালএনার্জির পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পায়নি রয়টার্স।

বাংলাদেশের মতো এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির বেশ কয়েকটি দেশ গত বছর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয়। তবে বর্তমান মূল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা সবাই এখন স্পট মার্কেটে ফিরে আসছে। বিশেষ করে থাইল্যান্ড ভারত আবারো স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করতে যাচ্ছে। অবস্থায় চাহিদা বেড়ে গিয়ে পণ্যটির মূল্য আবারো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা।

বাংলাদেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় একটি অংশ নির্ভর করে আমদানীকৃত এলএনজির ওপর। যদিও গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে গ্যাস রেশনিংয়ের পথে হাঁটতে হয় বাংলাদেশকে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, আমরা জুনের মধ্যে স্পট মার্কেট থেকে ১০-১২ কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা করছি। এখন দাম কমছে। কিন্তু আমরা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যে মূল্যে এলএনজি আমদানি করছি, স্পট মার্কেটের মূল্য এখনো তার চেয়ে অনেক ওপরে।

তিনি আরো বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়ও সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু মনে হচ্ছে তা বছরেও সম্ভব হবে না। এখন আমরা অন্য উৎসগুলোকেও পর্যালোচনা করে দেখছি।

বাংলাদেশ বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করছে কাতার ওমান থেকে। এর মধ্যে ওমান থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে ১০ বছর মেয়াদি এক চুক্তির অধীনে। কাতার থেকে আনা হচ্ছে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির অধীনে। দুই দেশ থেকে আমদানীকৃত এলএনজির দৈনিক গড় সরবরাহ ৩০-৪০ কোটি ঘনফুট।

পেট্রোবাংলার আরেক কর্মকর্তা বিষয়ে রয়টার্সকে বলেন, অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার এখন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে জোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন