এশিয়ার শীর্ষ ধনীর অবস্থান হারালেন গৌতম আদানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকা থেকে যে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির অবনমন হয়েছে, সে খবর এখন পুরনো। নতুন খবর হলো, এবার এশিয়ার শীর্ষ ধনীর তকমাও হারিয়েছেন তিনি। তাকে টপকে শীর্ষ এশীয় ধনী হিসেবে নিজের অবস্থান সুরক্ষিত করেছেন আরেক ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি। খবর রয়টার্স।

মূলত মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রকাশিত প্রতিবেদনই গৌতম আদানির অবস্থান পতনের কারণ। প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে আদানি গ্রুপের বাজার মূলধন কমেছে হাজার ৪০০ কোটি ডলার। গতকালও পুঁজিবাজারে বড় আকারের দরপতনের মধ্য দিয়ে গেছে আদানি নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো। একই সঙ্গে গত কয়েকদিনে কমেছে তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণও। ফলে ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় মাত্র একদিনের ব্যবধানে গতকাল অষ্টম থেকে ১৫তম অবস্থানে নেমে এসেছেন তিনি। অথচ গত ২৪ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগ পর্যন্ত তালিকার তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন তিনি।

গতকাল দিনের শুরুতেই আদানিকে টপকে এশিয়ায় ফের শীর্ষে উঠে আসেন মুকেশ আম্বানি। একই সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় উঠেছেন নবম অবস্থানে। ফোর্বসের রিয়াল-টাইম বিলিয়নেয়ার লিস্টের সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধানের আনুমানিক হাজার ৩৮০ কোটি ডলারের ব্যক্তিগত সম্পদ রয়েছে। একই পরিসংখ্যান বলছে, গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ হাজার ৫১০ কোটি ডলার।

২০২২ সালে আদানির সম্পদ বেড়েছিল হাজার ২২০ কোটি ডলার। এর মাধ্যমে তিনি বিল গেটস ওয়ারেন বাফেটের মতো বিলিয়নেয়ারকে ছাড়িয়ে শীর্ষ ধনীর তালিকার প্রথম তিনে জায়গা করে নেন। বছর শেষে আদানির সম্পদ দাঁড়িয়েছিল ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। সেই সাম্রাজ্যে রীতিমতো নাড়া দিয়েছে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে হিনডেনবার্গ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির অভিযোগ আনে। এছাড়া আদানি গ্রুপের ঋণের পরিমাণ তাদের ট্যাক্স হেভেন ব্যবহার নিয়েও তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ট্যাক্স হ্যাভেন ব্যবহারের পাশাপাশি শেয়ারের দাম বাড়াতে নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে আদানির কোম্পানি। বাজারে শেয়ারের দামের মূল্যায়ন বেশি করে দেখানো হয়েছে। 

হিনডেনবার্গের এসব অভিযোগের প্রতিবাদে ৪১৩ পৃষ্ঠার বিবৃতি দেয় আদানি গ্রুপ। সেখানে দাবি করা হয় স্থানীয় আইন মেনেই সবকিছু করেছে আদানি গ্রুপ। এছাড়া আইন অনুযায়ী যেসব তথ্য প্রকাশ করার কথা তাও করা হয়েছে। পাশাপাশি হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে ভারত তার প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার অভিযোগ আনে আদানি গ্রুপ। এর জবাবে হিনডেনবার্গ জানায়, আদানির বিবৃতি মোটামুটি তাদের (হিনডেনবার্গ) দেয়া তথ্যই নিশ্চিত করেছে। এছাড়া আদানি মূল প্রশ্নগুলোর জবাব এড়িয়ে গেছে বলেও মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।

আশির দশকে মুম্বাইয়ে হীরা ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা করেন প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তা গৌতম আদানি। কিছুদিন গুজরাটে ভাইয়ের প্লাস্টিক ব্যবসাও দেখভাল করেছেন স্কুলছুট ধনকুবের। ১৯৮৮ সালে কৃষিপণ্য নিয়ে আদানি এন্টারপ্রাইজেস শুরু করেন তিনি। পরবর্তী দুই দশকে বন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন বিতরণ, বিমানবন্দর পরিচালনা, ডাটা সেন্টার ডিজিটাল পরিষেবায় প্রবেশ করেন।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে আরো কয়েকজন বিলিয়নেয়ারের সম্পদ কমেছে। সম্পদ হারানোয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছেন টেসলা প্রধান ইলোন মাস্ক। চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২১ সালের নভেম্বরের পর থেকে ১৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার খুইয়েছেন টুইটারের বর্তমান প্রধান। মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ এফটিএক্সের স্যাম ফ্রিডম্যান-রিচের ব্যক্তিগত সম্পদও কমেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন