একুশে বইমেলা উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী

সাহিত্যকর্ম ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে এলে পাঠক বাড়বে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানা ছবি: পিআইডি

সাহিত্যকর্ম ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে এলে আরো পাঠক বাড়বে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গতকাল অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, আধুনিক যুগ ডিজিটাল যুগ। আমাদের ভাষা, সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারি। বইগুলোকে ডিজিটালাইজ করা। আজকাল অনেকেই পড়তে চায় না। কাজেই বইয়ের অডিও ভার্সন করা যেতে পারে, একটা ফোন কানে দিয়েও যাতে শুনতে পারে। প্রতিটি সাহিত্যকর্ম যদি অডিও ভার্সন করে দিই এবং ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে আসি, তবে আরো পাঠকশ্রেণী পাব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখনকার যুগে কেউ আর বই খুলে পড়তে চায় না। হাঁটতে-চলতে কোথাও যেতে যেতে যাতে পড়তে পারে, তা করে দেয়া উচিত। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এভাবে শুনে ওই তৃপ্তি পাওয়া যায় না, যেটা বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টে পড়তে আরাম, যে স্বস্তি সে অনুভূতিটা এতে পাওয়া যাবে না। বাংলার একটা ঐতিহ্য আছে। বাংলা আমাদের ভাষা, আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলি। পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের অধিকারটুকু কেড়ে নিয়েছিল। অধিকার আমাদের আদায় করতে হয়েছিল বুকের তাজা রক্ত দিয়ে। আমাদের ভাষার অধিকার থেকেই আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার সুফল যেমন ছড়িয়ে দিতে হবে, তেমনি ভাষার উত্কর্ষও ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুলজীবন থেকে আমি বইমেলায় আসি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তো আসতেই হয়। আমি সবসময় বাংলা একাডেমির লাইব্রেরি ব্যবহার করতাম। আজ দীর্ঘদিন পর এখানে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক সাহিত্য মেলার আয়োজন করেছিলেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমি মনে করি, বাংলা একাডেমি ধরনের বিশেষ সাহিত্য মেলার আয়োজন করতে পারে। জেলায় জেলায় এখন বইমেলা হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যের যত বই বের হবে, বিভিন্ন ভাষায় সেগুলো অনুবাদ হবে। সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। বাংলা একাডেমি মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট কাজটা করতে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবির পক্ষে যারা কথা বলছেন সময় তাদের সমালোচনা করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আমাদের দেশে খুব জ্ঞানী-বিজ্ঞানী আছেন। তাদের কাছে আবার এটাও শুনলাম দুই-চার বছরের জন্য যদি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলেও তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। কাজেই কারা এটা বলতে পারে এটাও বোঝা যায়। ২০০৭-০৮ সালে যখন অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন গাছের ছাল গাছের বাকল নিয়ে একটা দল করার চেষ্টা, দল সে দল থেকে ভিড়িয়ে দল করার চেষ্টা হয়। আমরা রাজনীতিবিদরা সব খারাপ; আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে ভরা হলো এবং কিছু সুযোগসন্ধানী তখন মাথা তুলে দাঁড়াল এবং কিংস পার্টি গঠনসহ বিভিন্ন রকম প্রচেষ্টা চালাল।

শেখ হাসিনা বলেন, মহাভারত অশুদ্ধ হবে না এটা ঠিক। কিন্তু অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা এবং এর আট মাসের মাথায় জাতির পিতা আমাদের দিয়েছিলেন সংবিধান। আর অশুদ্ধ হবে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান। কারণ ওই দুই বছরে (২০০৭-০৮) ব্যবসা-বাণিজ্য, সাহিত্যচর্চা, অর্থনৈতিক অবস্থা সবই বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। যখন একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয় তখন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি ৩০টি আসনে এবং বাকি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিজয়ী হয়। এর পর থেকে জনগণের জন্য কাজ করে জনগণের সমর্থন নিয়েই আওয়ামী লীগ পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছিল বলেই দেশে এখন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুরও বক্তব্য দেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।

প্রধানমন্ত্রী সময় বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। যার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি-, কারাগারের রোজনামচা পাঠ বিশ্লেষণ, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ বিশ্লেষণ আমার দেখা নয়াচীন পাঠ বিশ্লেষণ; রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রচিত আমার জীবন নীতি, আমার রাজনীতি জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২ (প্রথম খণ্ড)

এছাড়া বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২প্রাপ্ত ১৫ কবি, লেখক গবেষকের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন ফারুক মাহমুদ তারিক সুজাত (যৌথভাবে কবিতায়), তাপস মজুমদার পারভেজ হোসেন (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ/গবেষণায়), আলম খোরশেদ (অনুবাদ), মিলন কান্তি দে ফরিদ আহমদ দুলাল (যৌথভাবে নাটকে), ধ্রুব এষ (কিশোর সাহিত্য), মুহাম্মদ শামসুল হক (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সুভাষ সিংহ রায় (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), মোকারম হোসেন (বিজ্ঞান/বিজ্ঞান কথাসাহিত্য/পরিবেশবিজ্ঞান), ইকতিয়ার চৌধুরী (জীবনী/স্মৃতিকার/ভ্রমণকাহিনী) এবং আব্দুল খালেক মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (যৌথভাবে লোককাহিনীতে)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন