রমজানের আগেই অস্থিতিশীল মসলার বাজার

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

সব ধরনের গরম মসলার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫০-৩০০ টাকা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

আমদানি সংকটে দেশের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কমেছে গরম মসলা সরবরাহ। সুযোগে বাড়তে শুরু করেছে দাম। আসন্ন রোজার আগে চাহিদার চাপে প্রায় সব ধরনের গরম মসলার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫০-৩০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিনির্ভর এসব পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে দাম আরো বাড়বে।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে কথা বলে জানা যায়, কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি আমদানীকৃত জিরার পাইকারি দর ছিল ২৮০-৩৫০ টাকা। দুই মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকায় পৌঁছে। তবে সম্প্রতি আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দাম কিছুটা কমেছে, যদিও তা এখনো আগের অবস্থানে যায়নি। একইভাবে শুকনা মরিচের কেজিপ্রতি দাম দেশের ইতিহাসে রেকর্ড ৫০০ টাকা ছুঁয়েছে। এছাড়া সরিষা, ধনিয়াসহ দেশে উৎপাদন হয় এমন মসলা যেমন মৌরির দাম অতীতের যেকোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙে কেজিপ্রতি ২৯০-৩০০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

পাইকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে পাইকারি দামে প্রতি কেজি ভারতীয় জিরা বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ টাকায়, আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়ার জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬৪০, দারচিনি ৩০৫, লবঙ্গ হাজার ৪২০, গোলমরিচ ৬০০, জয়ত্রী হাজার ৭০০ থেকে হাজার ৮০০, জায়ফল ৬০০, এলাচ (এলএমজি ব্র্যান্ড) হাজার ২৭০, মৌরি ২৯০-৩০০, তেজপাতা ৭০-৮০, সরিষা ১১০-১১২, ধনিয়া ১১০, ভারতীয় আস্ত হলুদ ১২৬, দেশী হলুদ ১২২-১২৪, আমদানীকৃত আস্ত মরিচ ৩৭০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এলসি সংকটে চাহিদামতো আমদানি না হওয়ায় গরম মসলা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, রমজানের আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রধান পাইকারি বাজারগুলোয় মসলার চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ রমজানকে সামনে রেখে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে। এবারো চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে, কিন্তু আগের তুলনায় সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় মজুদ পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট আকারে মসলা আমদানির জন্য এলসি খুলছেন। এসব পণ্য দেশে প্রবেশ করলে দাম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হলুদ, মরিচ, মৌরি, মেথি, কালিজিরা, তেজপাতা, আদা-রসুন-পেঁয়াজ, সরিষা ধনিয়াসহ অধিকাংশ গরম মসলার বাজার আমদানিনির্ভর। যার কারণে আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে দেশের বাজারে পণ্যগুলোর দাম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এসব মসলার কিছু অংশ দেশে উৎপাদিত হলেও তা চাহিদা অনুযায়ী অপর্যাপ্ত। ফলে দেশের মসলা বাজারের ৭০-৮০ শতাংশই বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল।

বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক কাওসার আলম বণিক বার্তাকে বলেন, শীত মৌসুমে দেশে বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। তাছাড়া সামনেই রমজান, সে সময়ও চাহিদা বাড়ে। অর্থাৎ চাহিদার মৌসুম শুরু হলেও আমদানি স্বাভাবিক নয়। ফলে কয়েক মাস ধরেই দেশে মসলার দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়ে গেলে দাম সহনীয় হবে। এছাড়া দেশীয় রবি মৌসুমের পণ্য বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করলেও বাজার স্থিতিশীল হতে পারে।

দেশে সবচেয়ে বেশি গরম মসলা আমদানি হয় চীন, ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, মাদাগাসকার, গুয়েতেমালাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। ডলার সংকটে শীর্ষস্থানীয় মসলা আমদানিকারকরা পণ্য বুকিং দিতে পারেননি। কারণে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়ে গেছে। সরবরাহ সংকটের পাশাপাশি ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়াও মসলার বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণ বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন