নির্বাহী আদেশে গ্রাহক ও পাইকারি পর্যায়ে আবারো বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এবারের দাম সমন্বয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ও পাইকারি পর্যায়ে ৮ শতাংশ মূল্যহার বৃদ্ধির আদেশ দিয়েছে সরকার। বিদ্যুতের মূল্যহার সমন্বয়সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয় সোমবার। গতকাল সকালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। নতুন এ দাম আজ থেকে কার্যকর হবে। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি একইভাবে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর ঠিক ১৯ দিনের মাথায় গতকাল প্রকাশ করা হলো আরেক দফা দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনটি।
এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ১১তমবারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম এতদিন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নির্ধারণ করলেও সম্প্রতি আইন সংশোধন করে সে ক্ষমতা নিয়ে নেয় সরকার। এরই মধ্যে এ আইনের বলে তিন সপ্তাহের মধ্যে দুই দফা বিদ্যুতের দাম এবং এক দফা গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
দাম সমন্বয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, লাইফলাইন গ্রাহকের (৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী) বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ৯৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ১৪ পয়সা। নতুন দাম সমন্বয়ে লাইফলাইন গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ২০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। এর আগের মূল্যবৃদ্ধিতে ইউনিটপ্রতি ১৯ পয়সা বাড়ানো হয়েছিল। দুই দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এ শ্রেণীর গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩৯ পয়সা বেড়েছে। শূন্য থেকে প্রথম ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ১ থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ এবং ২০১-৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬২ পয়সা করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, সেচ বা কৃষিকাজের জন্য ব্যবহূত বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৩৭ থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্পে ৮ টাকা ৯৬ থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৪১, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দাতব্য ও হাসপাতালের ৬ টাকা ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৪, রাস্তার বাতি ও পানির পাম্পের ৮ টাকা ৯ থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৪৯, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের ৮ টাকা ২ থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৪২, বাণিজ্যিক ও অফিসের ১০ টাকা ৮২ থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৩৬ এবং নির্মাণ খাতে ১২ টাকা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে পাইকারি দামের বিষয়ে বলা হয়, ‘সরকার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ অনুযায়ী ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে জনস্বার্থে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো) কর্তৃক বিভিন্ন বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানিকে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।’
নির্বাহী আদেশে জারি করা প্রজ্ঞাপনে পাইকারি পর্যায়ের বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন ভোল্টেজ লেভেলে ৬ দশমিক ৫৭ থেকে ৭ দশমিক ৩৬ ভাগ দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গত ২১ নভেম্বর ১৯ ভাগ পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ায়।
২৩০ কেভি ভোল্টেজ লেভেলে দাম ছিল ৭ দশমিক ৬০৪০ টাকা। এখন প্রতি ইউনিটের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৮ দশমিক ১০৪০ টাকা করা হয়েছে। এতে দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৭ ভাগ। ১৩২ কেভিতেও দাম বেড়েছে প্রতি ইউনিটে ৫০ পয়সা। আগে ১৩২ কেভির গ্রাহকের প্রতি ইউনিটের দাম ছিল ৭ দশমিক ৬৩৩৫ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৩৩৫ টাকা। শতকরা বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫৫ ভাগ।
৩৩ কেভির বিদ্যুতের দাম আগে ছিল ৬ দশমিক ৭৮৯৫ টাকা। এখন তা বেড়ে হলো ৭ দশমিক ২৮৯৫ টাকা। এ ধাপেও ৫০ পয়সা দাম বাড়ানো হয়েছে। এখানে শতকরা বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৩৬ ভাগ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেকর্ড মূল্যস্ফীতির মধ্যে জীবনযাপনের ব্যয় নির্বাহে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এক মাসেই দুই দফা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনসংগ্রামকে আরো কঠিনতর করে তুলবে। এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের এ লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি শিল্প-কারখানার উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। ফলে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ে বেশি হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো আবার মূল্যবৃদ্ধির দাবি তুলতে পারে। খুচরায় দাম আরো বাড়ানো হলে স্বাভাবিকভাবেই তার চাপ পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।