পাতাল মেট্রোর গভীরতম এলাকা মালিবাগ-রাজারবাগ

ঢাকায় মাটির ৭০ মিটার নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ এবার পাতাল মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামীকাল এমআরটি লাইন--এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে করা হবে ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নকাজ। ডিপোটি হবে নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জের হাজার ২১৯ একর জমির ওপর। মেট্রোরেলটির পাতাল অংশ পড়েছে বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ, কমলাপুরের মধ্যে। রুটের বিদ্যমান সড়কের নিচ দিয়ে তৈরি হবে পাতাল রেলপথ। এর বেশির ভাগই মাটির ১০ থেকে ৩০ মিটার নিচ দিয়ে যাবে। তবে সবচেয়ে গভীরতম অংশ হবে মালিবাগ-রাজারবাগের মধ্যবর্তী এলাকা। অংশে মাটির ৭০ মিটার নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে পাতাল মেট্রোরেল মাটির ১০ মিটার নিচ দিয়ে যাবে। কিন্তু ঢাকার রাস্তাগুলো সব জায়গায় এক রকম নয়। কোনো কোনো স্থানে প্রশস্ততা বেশি, কোথাও আবার কম। বিশেষ করে রাজারবাগ মালিবাগের মধ্যবর্তী এলাকায় রাস্তার প্রশস্ততা অনেক কম।

এমএএন ছিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলের জন্য দুটি টিউব করা হবে, যাতে দুটি লাইনে নিরবচ্ছিন্নভাবে ট্রেন চলতে পারে। প্রশস্ত সড়কের নিচে দুটি টিউব সমান্তরালে রাখা যাবে। কিন্তু মালিবাগ-রাজারবাগ অংশে দুটি টিউব পাশাপাশি রাখার মতো জায়গা নেই। কারণে সেখানে একটি টিউবের নিচে আরেকটি টিউব করা হবে। এজন্য সেখানে মেট্রোরেলের গভীরতা হবে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০ মিটার নিচে।

মাটির গভীরে হলেও মেট্রোর টানেলে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে আমাদের স্টেশনগুলো হবে অথবা যেখানে এক্সিট-এন্ট্রি হবে, তার পাশে কতগুলো মেকানিক্যাল শাফট থাকবে। এগুলো পাতাল মেট্রোর স্টেশনে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ করবে।

মেট্রোর টানেলের ভেতরে স্বাভাবিকভাবে পানি যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান এমএএন ছিদ্দিক। বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের বন্যায় ঢাকা মহানগরীর বেশকিছু অংশে পানি উঠে গিয়েছিল। আমরা সেটাকে মাথায় রেখেই পানি যাতে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু এমনও হতে পারে, ১৯৯৮ সালের চেয়েও বেশি বন্যা হতে পারে। সেটার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাতে পানি নিষ্কাশন করা যায়, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে টানেলের ভেতরে একটা লেভেল পর্যন্ত পানি জমলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। তবে যদি বড় ধরনের কোনো বন্যা বা জলাবদ্ধতা হয়, দীর্ঘদিন পানি জমে থাকে, তখন সারা পৃথিবীতে যেভাবে ব্যবস্থা নেয়, জাপানে সুনামির সময় যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, সেগুলোর জন্যও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, পাতাল মেট্রোর জন্য টিউবগুলো তৈরি করা হবে টানেল বোরিং মেশিন বা টিবিএম দিয়ে। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একদিকে মাটি খুঁড়ে টানেল তৈরি করবে এবং একই সঙ্গে টানেলের জন্য প্রিকাস্ট সেগমন্টে (কংক্রিটের কাঠামো) বসিয়ে দেবে। কাজ করার সময় সড়কে যানবাহন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। সড়ক ব্যবহারকারীরা বুঝতেই পারবে না যে মাটির নিচে কাজ হচ্ছে। অন্যদিকে স্টেশনগুলো নির্মাণ করা হবে ওপেন-কাট পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে প্রথমে সড়কের অর্ধেক অংশ খনন করে কাজ শুরু করা হবে। কিছুদিনের মধ্যেই খোঁড়া অংশটি ঢেকে দেয়া হবে স্টিলের পাত দিয়ে। পাতের ওপর দিয়ে ৪০ টন পর্যন্ত ওজনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

এমএএন ছিদ্দিক বলেন, উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের কাজ আমরা তিন ধাপে সম্পন্ন করেছি। কিন্তু এমআরটি--এর কাজ বাস্তবায়ন করব এক ধাপে। কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। আমরা একটা টানেল বোরিং মেশিন দিয়েই পুরো কাজটা করতে পারতাম। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে তিনটা মেশিন ব্যবহার করব। একটা কমলাপুর থেকে, আরেকটা বিমানন্দর থেকে এবং আরেকটা মধ্যবর্তী এলাকা থেকে খননকাজ শুরু করবে।

৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেলটি বাস্তবায়নে খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর সিংহভাগই অর্থাৎ ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে টাকার অংকে এটিই হতে যাচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। লাইনটি অবশ্য দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশ বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত, যাকে বলা হবে বিমানবন্দর রুট। দ্বিতীয় অংশ নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো, যার নাম হবে পূর্বাচল রুট।

বিমানবন্দর রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার। আর রুটেই দেশের প্রথম পাতাল বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মাণ হতে যাচ্ছে। মোট পাতাল স্টেশন হবে ১২টি। সেগুলো হলো বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল পূর্ব, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ কমলাপুর। অন্যদিকে পূর্বাচল রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার। এর পুরোটাই হবে উড়াল এবং স্টেশন সংখ্যা ৯। যদিও নর্দ্দা নতুন বাজার স্টেশন দুটি বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে হবে পাতালে।

এদিকে পাতালরেলের ডিপোর নির্মাণকাজ পেয়েছে জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জয়েন্ট ভেঞ্চার। ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ মেট্রো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় আট লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন