ভাঙ্গা-কুয়াকাটা ২০৫ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্প

সম্ভাব্যতা যাচাইয়েই ৪ বছর শেষ, জমি অধিগ্রহণ কবে?

এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল

ফরিদপুরের ভাঙ্গা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেল সংযোগ প্রকল্পের ২০৫ কিলোমিটারের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়ন শেষ হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে। ২০১৮ সালে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের বাকি কাজ এক প্রকার থমকে আছে। জমি অধিগ্রহণসহ রেললাইন স্থাপনের কাজ কবে শুরু হবে তা বলতে পারছে না খোদ রেল কর্তৃপক্ষই। ফলে অধিগ্রহণের জন্য যেসব জমি মেপে নম্বর দেয়া হয়েছে, সেগুলোর মালিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তারা অতিপ্রয়োজনেও পারছেন না জমি বিক্রি করতে কিংবা নতুন কোনো স্থাপনা গড়তে। 

বরিশাল নগরীর সাগরদী ব্রাঞ্চ রোডের বাসিন্দা দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু বলেন, ‘গত পাঁচটি বছর আমরা নানা সমস্যায় আছি। আমি অসুস্থ থাকায় চিকিত্সার জন্য টাকা দরকার, কিন্তু জমিটাও এখন আর বিক্রি করতে পারছি না। অনেকে ভাঙা ঘর মেরামত কিংবা নতুন স্থাপনা নির্মাণ করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে আমরা এখন সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে। হয় সরকার রেললাইন করুক, না হয় আমাদের জমি ছেড়ে দিক।’   

রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানায়, প্রথমে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ঢাকা থেকে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে রেল সংযোগের আওতায় আনার জন্য এ প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ও টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত এ রেলপথ, স্টেশন ও জংশন স্থাপনের সমীক্ষাসহ বিস্তারিত নকশা জমা দেয়ার কথা থাকলেও সে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে। প্রকল্প হাতে নেয়ার পর চার বছরে কাজের এমন ধীরগতির জন্য করোনা সংকটকে প্রধান কারণ বলে জানিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তাবিত রেলপথের কয়েকটি স্থানে পুনরায় জরিপ পরিচালনা করে নতুনভাবে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও জানায় একটি সূত্র।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্র জানায়, ২০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথ নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের এ প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, যার মধ্যে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকাই পরামর্শক সেবায় খরচ করার কথা। এছাড়া বিজ্ঞাপনে ৮ লাখ, গাড়িভাড়ায় ৩৩ লাখ ১৫ হাজার, অফিস স্টেশনারি ও অন্যান্য খরচ ৮ লাখ, সম্মানী ৮ লাখ, ভ্রমণভাতা ৪ লাখ এবং প্রকল্প ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের (পিএমইউ) জন্য অফিস উপকরণে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচের সিদ্ধান্ত হয়েছিল তখন। 

সূত্র আরো জানায়, এ রেললাইন নির্মাণে ৫ হাজার ৬৩৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এদিকে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রস্তাবিত সিঙ্গেল লেন ব্রডগেজ রেলপথে মোট ১১টি স্টেশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ রেলপথের জংশন থাকছে ফরিদপুরের ভাঙ্গাতেই। এখান থেকে একটি লাইন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় এবং অন্য একটি লাইন ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল-যশোর হয়ে খুলনা ও বেনাপোল লাইনে যুক্ত হচ্ছে। প্রস্তাবিত ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রেলপথে ভাঙ্গার পরে টেকেরহাট, মাদারীপুর, গৌরনদী, বরিশাল বিমানবন্দর, বরিশাল মহানগর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, আমতলী, পয়রা বিমানবন্দর, পায়রা বন্দর হয়ে সর্বশেষ কুয়াকাটায় স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্টেশনগুলোর ভবন নকশা করা হয়েছে ইলিশের আদলে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বরিশাল স্টেশনে কারশেড ছাড়াও জ্বালানির জন্য পিওএল ডিপোসহ বেশকিছু সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রেললাইন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রকল্প পরিচালক মামুনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রকল্প অনুযায়ী পায়রা বন্দরে রেলওয়ে অর্থনৈতিক জোন, বরিশালে রেলওয়ে মাল্টিমোডাল হাবসহ ১১টি বড় স্টেশন নির্মাণ করা হবে। ১৭ কিলোমিটার নিচু জমিতে হবে উড়াল রেললাইন। কীর্তনখোলা, পায়রাসহ বড় নদীগুলোতে নির্মাণ করা হবে ৪৬টি বড় রেলসেতু। থাকবে ৪৪০টি বক্স কালভার্ট, কোনো লেভেল ক্রসিং ছাড়া ট্রেন চলবে কালভার্টের ভেতর দিয়ে। এর জন্য ১০০ মিটার প্রশস্ত ধরে ২১১ কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। আর রেলপথ হবে ২০৫ কিলোমিটার। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। পুরো নকশা এবং টেন্ডার ডকুমেন্টও সম্পন্ন হয়েছে।’   

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. শহীদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্টাডি ও ডিজাইন বা নকশার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’ তবে বাকি কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময় বলতে পারেননি ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তাও। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন