ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন প্রকাশ

দুর্নীতি বাড়ায় এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) করা দুর্নীতি ধারণা সূচকে এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। দুর্নীতি সূচকে এক ধাপ অবনতি হয়ে ২০২১ সালে বিশ্বে ১৩তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ থেকে ২০২২ সালে নিম্নক্রম অনুযায়ী ১২তম অবস্থানে আসে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২- পয়েন্ট কম স্কোর করে ১০০-তে বাংলাদেশের স্কোর ২৫। গতকাল সংস্থাটি একযোগে বিশ্বের ১৮০টি দেশের দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) প্রকাশ করে।

সিপিআই ২০২২-এর বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশের অংশ হিসেবে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক . ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, নভেম্বর ২০১৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ছিল সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা সবচেয়ে আলোচিত মেয়াদ। কিন্তু মেয়াদে ঘোষণাকে চর্চায় রূপ দেয়ার যথাযথ কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। উপরন্তু মেয়াদে দুর্নীতির ব্যাপকতা আরো ঘনীভূত বিস্তৃত হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্কোর অবস্থান বিবেচনায় আফগানিস্তানের অবস্থান সর্বনিম্ন হলেও দেশটির ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর পয়েন্ট বেড়েছে এবং উচ্চক্রম অনুযায়ী ২৪ ধাপ উন্নতি হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট কমেছে এবং উচ্চক্রম অনুযায়ী কোনো উন্নতি হয়নি। নিম্নক্রম অনুযায়ী ১০০-তে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটান ৬৮ পয়েন্ট পেয়ে বিশ্বের ৫০তম অবস্থানে, ভারত ৪০ পয়েন্ট পেয়ে ২৫তম, শ্রীলংকা ৩৬ পয়েন্ট পেয়ে ২২তম, পাকিস্তান ২৭ পয়েন্ট পেয়ে ১৪তম, মালদ্বীপ ৪০ পয়েন্ট পেয়ে ২৫তম, নেপাল ৩৪ পয়েন্ট পেয়ে ২১তম, বাংলাদেশ ২৫ পয়েন্ট পেয়ে ১২তম আফগানিস্তান ২৪ পয়েন্ট পেয়ে ১১তম শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকায় এসেছে।

. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সিপিআই অনুযায়ী শূন্য থেকে ১০০ স্কেলে টানা চার বছর স্কোর অপরিবর্তিত ২৬ থাকার পর ২০২২-এর সূচকে আরো পয়েন্ট কমে ১২তম সর্বনিম্ন ২৫ স্কোর করেছে বাংলাদেশ, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে এবারো বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে চতুর্থ সর্বনিম্ন, যা অত্যন্ত বিব্রতকর। বিষয়টি আরো উদ্বেগজনক কারণে যে ২০১২-২০২২ মেয়াদের দৃশ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে অবনমনের সম্ভাবনার সম্মুখীন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ যারা দুর্নীতির তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী তথ্য প্রকাশ, দুর্নীতিবিরোধী চাহিদা সৃষ্টি এবং তা প্রতিরোধে যারা যুক্ত তাদের জন্য প্রতিকূল ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে কঠোর ভূমিকা গ্রহণের জন্য দুদক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরও নাজেহাল হতে হয়েছে। এমনকি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, এমন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদানসহ বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ফলে দুর্নীতিসহায়ক বিচারহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

২০২২ সালের সিপিআই অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯০ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। ৮৭ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ফিনল্যান্ড নিউজিল্যান্ড এবং ৮৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় স্থানে নরওয়ে। আর ১২ স্কোর পেয়ে তালিকার সর্বনিম্নে সোমালিয়া, ১৩ স্কোর পেয়ে যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দক্ষিণ সুদান সিরিয়া এবং ১৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে ভেনিজুয়েলা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন