সংকটাপন্ন ঘোষণা

পটিয়ার চার গ্রামে সুপেয় পানি সরবরাহের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্বঘোষিত রায়ের আলোকে চট্টগ্রামের পটিয়ার চারটি গ্রামকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওইসব গ্রামে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়। গতকাল বিচারপতি মাহমুদুল হক বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন। আদালতে পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট এস হাসানুল বান্না। আদেশের বিষয়টি বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেন অ্যাডভোকেট এস হাসানুল বান্না।

ওই চার গ্রামের আশপাশে থাকা আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়ে গ্রামবাসী। অবস্থায় পটিয়ার হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই, হুলাইন, পাচুরিয়া হাবিলাস দ্বীপ গ্রামে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ৩৫০টি টিউবওয়েল স্থাপন করে। তবে একপর্যায়ে এসব টিউবওয়েল বিকল হয়ে পড়লে গ্রামগুলোর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়ে।

বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছিল বেলা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে রিটটি চলমান ঘোষণা করেন বিচারপতি তারিক উল হাকিম বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

ওই রায়ের আলোকে পটিয়ার চারটি গ্রামকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন আদালত। রায়ে প্রদত্ত নির্দেশনাবলি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে বিবাদীদের (সরকারি সংস্থাগুলো) প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে ওইসব গ্রামে সুপেয় পানির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন আদালত।

রায়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক (ডিজি), জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি), পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সহকারী প্রকৌশলীকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রায়ে প্রদত্ত নির্দেশনাবলি বাস্তবায়ন করে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভূগর্ভস্থ পানি তোলার কারণে গ্রামগুলোয় সংকট দেখা দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই এবং বেশির ভাগই বর্জ্য শোধনাগার প্লান্ট ছাড়া পরিচালিত হচ্ছিল। ওইসব প্রতিষ্ঠানের সৃষ্ট দূষণে পাশের বোয়ালখালী, গরুলতা আলমডাঙ্গা খালের পানি দূষিত হয়ে পড়ে। ফলে সুপেয় পানির পাশাপাশি চাষাবাদের পানিরও তীব্র সংকট দেখা দেয়। পরিবেশ অধিদপ্তর তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলেও প্রতিষ্ঠানগুলো আইন অমান্য করে এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরিমানা না দিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।

এমন পরিস্থিতিতে আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে বেলা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি (ফুড প্রডাক্টস), বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি (মিনারেল ওয়াটার), আম্বিয়া নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড, আম্বিয়া পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড, মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্স লিমিটেড, হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড, আনোয়ারা পেপার মিলস লিমিটেড শাহ আমানত নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড।

চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে রিটটি চলমান ঘোষণা করেন। মামলার শুনানিতে পরিবেশ অধিদপ্তর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দূষণ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করে।

শুনানি শেষে আদালত পানি আইন, ২০১৩- ধারা (১৭)-এর অধীনে চরকানাই, হুলাইন, পাচুরিয়া হাবিলাস দ্বীপ গ্রামকে পানি সংকাটাপন্ন এলাকা ঘোষণার বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা প্রশাসককে আটিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দূষণের পরিমাণ যাচাই করে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়েরও নির্দেশ দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, পানি আইনের অধীনে দেশের কোনো এলাকাকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা দাবি জানিয়ে এটিই প্রথম আইনি পদক্ষেপ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন