কেন আবার বন্ধ হলো মধুমিতা

সাবিহা জামান শশী

বন্ধ মধুমিতার সিনেমা হল ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রাচীন সিনেমা হলের তালিকায় সবার ওপরেই আছে মধুমিতা। ১৯৬৭ সালে মতিঝিলে এটি নির্মাণ করেছিলেন ঢাকার ব্যবসায়ী সিরাজ উদ্দিন। শুরু থেকেই হলটি ছিল সিনেমাপ্রেমীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ। দর্শকমুখরতায় একসময় গমগম করলেও এখন হতাশায় আছে এ প্রাচীন প্রেক্ষাগৃহ। সময়ের সঙ্গে বর্তমানে আর সে অবস্থান নেই মধুমিতার। দুই মাস বন্ধ থাকার পর জানুয়ারির মাঝামাঝি দেশীয় সিনেমা দিয়ে চালু হয়েছিল মধুমিতা। কিন্তু খোলার কয়েক দিন না যেতেই আবার বন্ধ করা হয়েছে প্রেক্ষাগৃহটি। এ বিষয়ে জানতে কথা হয় মধুমিতার কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‌এখন আমরা মধুমিতা বন্ধ রেখেছি। বন্ধ রাখার মূল কারণ হচ্ছে সিনেমা নেই। এ বছর দুটি সিনেমা এল, আমরা দেখালাম। তবে সিনেমা দুটি হলে দর্শক টানতে পারেনি।’ 

গত ২৭ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে খন্দকার সুমন পরিচালিত সাঁতাও। এ সিনেমা মধুমিতায় দেখানো হলো না কেন, এ প্রশ্নের জবাবে নওশাদ বলেন, ‘‌আমরা চাই সিনেমা দেখাতে, কিন্তু একটা সিনেমার জন্য তো হল খুলব না। নিয়মিত সিনেমা যদি না থাকে, তবে একটা সিনেমার জন্য হল খুলে পরের সপ্তাহে আবারো বন্ধ করতে হবে। এভাবে তো হয় না। আর দর্শক যদি না আসে, তাহলে আমাদের লোকসান গুনতে হয়।’ 

মধুমিতার আসন সংখ্যা ১ হাজার ২০০-এর বেশি। একটা সময় ছিল যখন মধুমিতার শোগুলো দেখতে রীতিমতো হিড়িক পরে যেত। তবে বর্তমানে সে চিত্র পাল্টে গেছে। এ নিয়ে নওশাদ বলেন, ‘মূলত সিনেমার অভাবেই মধুমিতা বন্ধ। ভালো ও উন্নত মানের সিনেমা নেই, যেটা দর্শক টানবে। এখন ওটিটি প্লাটফর্ম আসায় দর্শকের অনেক অপশন তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে মাল্টিপ্লেক্সে হলিউডের সিনেমা চলছে। আমি মনে করি একটি পক্ষ চাইছেন সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যাক। তবে সিঙ্গেল স্ক্রিনেই কিন্তু একসময় আমাদের দেশে টাইটানিক কিংবা বেদের মেয়ে জোসনার মতো সিনেমা চলেছে।’

বর্তমানে ঢাকার বেশির ভাগ সিনেমা হল বন্ধ রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে বলাকা, অভিসার ও রাজমনি। এ বিষয় নিয়ে নওশাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সিঙ্গেল স্ক্রিন কিন্তু কয়েক যুগ ব্যবসা দিয়ে গেছে। এখন হঠাৎ করে শুনতে হয়, এটি রাখা উচিত নয়। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বেশির ভাগ মাসে একটা সিনেমা মাল্টিপ্লেক্সে দেখতে পারে। কারণ এটা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ তাদের জন্য। ঢাকার অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। যে কয়টা আছে, তাদের অনেক লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে।’

অন্যদিকে সাফটা চুক্তির আওতায় শাহরুখ খানের পাঠান মুক্তি দিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন পরিবেশক ও প্রযোজনা সংস্থা ‘অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট’-এর অনন্য মামুন। হল মালিক ও প্রদর্শক সমিতিও চাইছে বাংলাদেশে সিনেমাটি মুক্তি দেয়া হোক। তবে এরই মাঝে দেশে পাঠানের মুক্তি নিয়ে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের মাঝে মতপার্থক্যও তৈরি হয়েছে। অনেকেই চাইছেন সিনেমাটি মুক্তি পাক আর অনেকে বলছেন ভিন্ন কথা। পাঠান বিষয়ে জানতে চাইলে ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘‌আমি অনেক আগে থেকেই বলছি, দেশের সিঙ্গেল স্ক্রিন বাঁচাতে হলে কেবল হিন্দি সিনেমা নয়, বিশ্বের সব দেশের ভালো সিনেমাই আসা উচিত। হলিউডের সিনেমা যদি আসতে পারে, তাহলে অন্যগুলো কেন নয়। মাল্টিপ্লেক্সের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, কারণ হলিউড সিনেমা তাদের বিকল্প। আমাদের দেশে তাই মাল্টিপ্লেক্সে লোকসান গুনতে হচ্ছে না। অন্যদিকে সিঙ্গেল স্ক্রিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

মধুমিতা সিনেমা হল নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে নওশাদ বলেন, ‘‌যদি পাঠান আসে, তাহলে মধুমিতা খুলব। আর নয়তো ঈদের সময় খোলা যাবে। কারণ সামনে ফেব্রুয়ারি, এর কিছুদিন পর রোজা। রমজানের সময় এমনিতেই এক মাস হল বন্ধ থাকে।’

১৯৬৩ সালে নির্মিত হয় প্রাচীন মিসরের শাসক ক্লিওপেট্রার জীবন কাহিনী নিয়ে সিনেমা ‘‌ক্লিওপেট্রা’। এটি ছিল মধুমিতায় প্রথম প্রদর্শিত সিনেমা। ১৯৮২ সালে ফরাসি চলচ্চিত্র উৎসব হয়েছিল মধুমিতায়। এখন সময়ের অপেক্ষা কয়েক প্রজন্মকে আনন্দ দিয়ে আসা সিনেমা হলটির ভবিষ্যৎ দেখার জন্য।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন