কানাডায় অর্থ পাচার

ফারইস্ট স্টকসের চেয়ারম্যান খালেকের ১৫০ কোটি টাকার বাড়ি সিআইডির হেফাজতে

নিহাল হাসনাইন

বারিধারায় ৬ নম্বর সড়কের ‘কে’ ব্লকে এমএ খালেকের বাড়ি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে থেকে অর্থ আত্মসাৎ কানাডায় পাচারে অভিযুক্ত এমএ খালেকের বাড়ি হেফাজতে নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গতকাল বারিধারার নম্বর সড়কের কে ব্লকে অবস্থিত ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের বাড়িটিতে সিআইডি ক্রোক নোটিস টাঙিয়ে তত্ত্বাবধায়ক-এর দায়িত্ব নেয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কারাগারে থাকা এমএ খালেক গড়ে তুলেছিলেন সিকিউরিটিজ কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, বীমাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে থাকার সুযোগে বড় ধরনের অর্থ আত্মসাতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বাড়ি কেনার আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিজের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে তিনি এটি কিনেছিলেন। আর অর্থ তিনি হস্তান্তর-স্থানান্তর রূপান্তরের মাধ্যমে জোগান দেন। অনুসন্ধান চলাকালে তিনি বাড়িটি বিক্রি করে টাকা পাচার করতে পারেনএমন আশঙ্কা থেকে সেটি জব্দ করতে আদালতে আবেদন জানানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, এমএ খালেকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে কানাডায় ১৩৫ কোটি টাকা পাচার করে বাড়ি কেনার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। আদালতের নির্দেশে বারিধারার বাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। এটি রক্ষণাবেক্ষণে সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আদালত। সে অনুযায়ী গতকাল বাড়িটি হেফাজতে নিয়ে নোটিস টাঙানো হয়েছে।

মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত জানুয়ারি বাড়িটি জব্দ করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিকে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের জন্য পারমিশন পিটিশন জারি করেন। এতে বারিধারার কে ব্লকের চারতলার বাড়ির বর্তমান মূল্য ১৫০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতের আদেশে উল্লেখ রয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে থেকে এমএ খালেক প্রতারণা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩৫ কোটি টাকা আয় করেছেন। এছাড়া কানাডায় পাচার করা অর্থে বাড়ি সম্পদ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া দেশে নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন তিনি। তার স্ত্রী সন্তান কানাডায় বসবাস করছেন।

কারাগারে থাকা এমএ খালেকের বাড়িসহ স্থাবর সম্পদ জব্দের আবেদন করে সিআইডি। সেই সঙ্গে এমএ খালেকের অর্থ আত্মসাতের বিস্তর তথ্য তুলে ধরে একটি প্রতিবেদনও দেয় সংস্থাটি। সেখানে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এমএ খালেক প্রাইম ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ থেকে ৩০৫ কোটি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে ৩৭৬ কোটি টাকা বের করে নেন। এছাড়া প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজের ২০ কোটি, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২০০ কোটি, পিএফআই প্রপার্টিজের ১৫০ কোটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ১৬৭ কোটি, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডের ৫০ কোটি পিএফআই ক্যাপিটালের ১৫ কোটি টাকাও হস্তান্তর-স্থানান্তর-রূপান্তর প্রক্রিয়ায় আত্মসাৎ করেন এমএ খালেক।

এসব অর্থ সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে শেয়ার ব্যবসাকে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। পরিবারের সদস্য কর্মচারীদের নামেও নিয়েছেন টাকা। এর বাইরে ম্যাকসন্স বাংলাদেশ, ম্যাকসন্স বে লিমিটেড, গ্যাটকো, গ্যাটকো এগ্রো ভিশন, গ্যাটকো টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি ঋণ নিয়েছেন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে এসব ঋণ নেন এমএ খালেক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন