কুষ্টিয়ায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান

৩ মাসে ধান সংগ্রহ হয়নি এক ছটাকও!

শুভব্রত আমান, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় সরকারি ধান-চাল সংগ্রহের আমন মৌসুমে তিন মাসে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি জেলা খাদ্য বিভাগ। তবে নির্ধারিত পরিমাণের অর্ধেক চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে।

গত বছর ১৭ নভেম্বর সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। অবস্থায় ধান সংগ্রহে ব্যর্থতার জন্য সবাই দায়ী করছেন সরকারের নির্ধারিত ক্রয়মূল্য ব্যবস্থাপনাকে। অন্যদিকে আরেকটি সূত্র চালকল মালিকদেরও দায়ী করেছে।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় এবার হাজার ৫৬৮ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল এবং চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৬৩৬ টন, কিন্তু ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলার পাঁচটি খাদ্য গুদামে এক ছটাক ধানও সংগৃহীত হয়নি। সময়ের মধ্যে কেবল সংগ্রহ হয়েছে ১০ হাজার ৫৯৬ টন চাল। মৌসুমে প্রতি কেজি আমন ধানের দাম ধরা হয়েছে ২৮ টাকা চাল ৪২ টাকা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কৃষকের কাছ থেকে কোনো ধান সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। কারণ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন।

জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এবার জেলায় আমন ধান আবাদ হয় ৮৮ হাজার ৯১৯ হেক্টর জমিতে। আর চাল উৎপাদন হয়েছে লাখ ১২ হাজার ৫১৩ টন। গত বছরের চেয়ে বছর প্রায় ১২ হাজার টন চাল বেশি উৎপাদন হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, ২৮ টাকা দরে সরকারিভাবে ধানের সংগ্রহমূল্য প্রতি মণ হাজার ১২০ টাকা। অন্যদিকে হাটবাজারে বর্তমানে প্রতি মণ ধান প্রকারভেদে হাজার ১০০ থেকে হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, কৃষক ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ীরা ধান কিনে রেখেছেন। কৃষকের কাছে ধানই নেই। একদিকে সরকারি মূল্যের চেয়ে ধানের বাজারদর বেশি, অন্যদিকে চালের সরকারি মূল্য প্রতি কেজি ৪২ টাকা হলেও বাজারে দরে কোনো চালই নেই।

সদর উপজেলার কয়েকটি হাটে গত শুক্রবার খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মোটা চালের পাইকারি বাজারদর প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৪৬ টাকা এবং প্রতি কেজি ধানের দর ৩০-৩১ টাকা। বিপরীতে সরকারি সংগ্রহমূল্য প্রতি কেজি চাল ৪২ টাকা এবং প্রতি কেজি ধান ২৮ টাকা।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় বাজার বৃত্তিপাড়া এলাকার কৃষক আসকার হোসেন জানান, সরকারের গুদামগুলোয় নানা ধরনের নিয়ম রয়েছে, সেটাও বাড়তি ঝামেলা। সেখানে গেলেই গুদাম কর্মকর্তাদের ছকবাঁধা একটি কথা হলো, ধানে আর্দ্রতা কম অথবা বেশি। এরপর রয়েছে পরিবহন ব্যয়। খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে যেতে যে বাড়তি পরিবহন ব্যয় সেটা স্থানীয় বাজারে যেতে করতে হয় না। 

খোকসার শোমসপুরের কৃষক মেহের আলী জানান, সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের সময় আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের নিচে থাকার বাধ্যবাধকতা করা রয়েছে। আর্দ্রতার ব্যাপারটি তার বাড়ির পাশে হাট বা আড়তগুলোতে নেই। অনেক সময় বাড়িতে বসেই ধান বিক্রি করা যায় এবং সেটা নগদ টাকায়। অন্যদিকে সরকারি গুদামে বিক্রির পর টাকা পেতেও কয়েক ধাপের প্রক্রিয়া পার করতে হয়। এসব কারণে অনেক কৃষক খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ হারিয়েছেন।

কুষ্টিয়া সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারের কাছে কৃষকরা ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, এটা বলা মুশকিল। কৃষকরা তাদের কাছে আসছেন না।  কৃষকদের প্রায় কমন সমস্যা হলো, ধানের আর্দ্রতার ব্যাপারটি। ১৪ শতাংশের ওপরে আর্দ্রতা গেলে আমরা ধান নিতে পারি না। কিন্তু কৃষকরা ১৮-১৯ শতাংশ আর্দ্রতার ধান নিয়ে আসে। অনেক সময় চিটাও থাকে। অনেক কৃষক ধান পরিষ্কারও করেন না। মাড়াই দিয়েই বাজারে নিয়ে আসেন, যা পাইকাররা কিনে নিয়ে যান। আমাদের পক্ষে তা কেনা সম্ভব হয় না।

চাল সংগ্রহেও রয়েছে একই রকম সমস্যা। বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আব্দুর রশীদ জানান, চুক্তি যখন হয় তখন ধানের দাম এক রকম ছিল। এখন আরেক রকম। মিলমালিকরা কেজিপ্রতি - টাকা বেশি দিয়ে ধান সংগ্রহ করছেন।

যখন চুক্তি তখনই চাল সরকারের গুদামে দিলে কী সমস্যা ছিল? প্রশ্নের অবশ্য তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এক মিলমালিকের হিসাব মতে, বর্তমান বাজারে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে তা থেকে চাল তৈরি করলে সর্বনিম্ন মূল্য দাঁড়ায় ৪৬-৪৮ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারণ করেছে ৪২ টাকা। ফলে কেজিতে - টাকা লোকসান গুনে কীভাবে সরকারকে চাল দেয়া সম্ভব।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী আশবাদী, শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান সফল হবে। তিনি জানান, জেলায় প্রায় ৪০০ মিল রয়েছে। যেগুলো পুরো দেশের চালের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করে।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, বিষয়গুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সব পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন