রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালায় না

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাজশাহী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় ভাষণ দেন ছবি: পিআইডি

দেশের জয়যাত্রা ধরে রাখতে রাজশাহীবাসীর কাছে নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ কিছু পায়। মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালায় বিএনপি নেতারা। দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। গতকাল বিকালে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জেলা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বলছে, আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন নিয়ে কাজ করেছে। পালায় আপনাদের নেতারাই।

তিনি আরো বলেন, বাংলার মানুষের কথা ভেবেই দেশে এসেছি, পালাতে নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ কিছু পায়। আর বিএনপি তো লুটপাট চালায়। আওয়ামী লীগ জনগণকে দিতে আসে। আমরা চাই, আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। দেশকে আমরা উন্নত করতে চাই, তাই দেশের জয়যাত্রা ধরে রাখতে আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই।

বিএনপির চরিত্র অমানবিক বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা মানুষ চেনে না। তারা মানুষের জন্য কিছু করতে পারে নাই, তাদের কাজ কী? নিজেরা লুটেপুটে খাওয়া। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার গড়ে তোলা সংগঠন। সংগঠন কখনো পিছপা হয় না। আমরা বীরদর্পে এগিয়ে যাই। আমরা পালাব না। আওয়ামী লীগ সরকার থাকতে দেশের কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবেন না। জনগণের পাশে আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় থাকবে। জনগণও আওয়ামী লীগের পাশে আছে।

সময় দেশে ফিরতে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার সময়ের ঘটনা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশে ফিরে এসেছি শুধু বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে। আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানো হয়েছিল। আমি আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি এমন একটি দেশে ফিরে এসেছিলাম, যেখানে আমার কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। জাতির পিতার খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সে অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য।

সময় খাদ্যনিরাপত্তাসহ অন্যান্য ইস্যুতে তার সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। রাজশাহীর জন্য নেয়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা গত ১৪ বছরে ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরি করেছি। একটু আগেই আমরা প্রায় হাজার ৩১৬ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। এর মধ্যে রয়েছে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রমুখ।

স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করছে সরকার

গতকাল সকালে সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করছে সরকার। সংবিধানবহির্ভূত সরকার যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, আমরা সেই চেষ্টা করেছি।

পুলিশের সাহসী ভূমিকায় দেশ আজ জঙ্গি সন্ত্রাস মোকাবেলায় সফল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ বাহিনী। তারা কাজ করেছে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায়। প্রশংসাও কুড়িয়েছে তারা। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তেও কাজ চলছে। সে লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীর জন্য সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে দক্ষতা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবার আগে পুলিশ বাহিনীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দমনে জনগণের ভূমিকা সহযোগিতা প্রয়োজন।

সাইবার ক্রাইম রোধে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে সরকারপ্রধান বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে। দেশের মানুষ এখন ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে। তবে এর ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি অনেক খারাপ দিকও রয়েছে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সাইবার ক্রাইম, জালিয়াতি, জঙ্গিবাদ বাড়ছে। এসব অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ দেশের মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মানুষ নম্বরে কল করে দ্রুত সেবা পাচ্ছে। বিপদে তারা পুলিশের তাত্ক্ষণিক সেবা পাচ্ছে। ফলে তাদের পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়ছে। নারী নির্যাতন রোধ সন্ত্রাস দমনেও তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছে। বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

তবে একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে আবার পিছিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি গোষ্ঠী। পুলিশ বাহিনী পেশাদারত্বের সঙ্গে তাদের সেই অগ্নিসন্ত্রাস, বোমাবাজ, জঙ্গিদের প্রতিহতে কাজ করে যাচ্ছে। মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সময়ও পুলিশ বাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা করেছে। করোনায় মৃত ব্যক্তিকে যখন তার আত্মীয়-স্বজনও দাফন করছিলেন না, তখন পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গিয়েছিলেন।

এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কুচকাওয়াজে প্যারেড অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেন। প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শুভ্র দেব। প্যারেড পরিদর্শন শেষে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন