ব্যাংক খাতে গ্রাহক আস্থা প্রতিষ্ঠায় সুশাসনের বিকল্প নেই

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবস্থার যাত্রা। বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ ১৯৭২ এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব তফসিলি ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ তত্ত্বাবধানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। দেশের অর্থনীতির আকার বাড়তে থাকলে আশির দশকের প্রথম দিক থেকেই বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া শুরু হয়। বর্তমানে দেশে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ৪৩টি বেসরকারি ব্যাংক, নয়টি বিদেশী ব্যাংক তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক এবং ৩৪টি দেশী-বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ব্যাংক খাতকে আমি মোটামুটি ৩টা পর্বে ভাগ করি। একটি পর্ব হলো ১৯৭২ থেকে ১৯৮০, দ্বিতীয় পর্ব হলো, ১৯৮০ থেকে ২০০০ এবং ২০০০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। ১৯৭২ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত গুটিকতক কাজের মধ্যে ব্যাংকের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। সব ব্যাংক ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত। কৃষির জন্য সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ শিল্প ঋণের মধ্যেই মূলত ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিত তাই অনুসরণ করত ব্যাংকগুলো। ১৯৮০ সালের দিকে প্রথম বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলো পরিচালনায় কতগুলো নিয়মকানুন তৈরি করে দেয়া হয়। তার ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালিত হতো। নব্বইয়ের দশকে ব্যাংক সংস্কারে কমিশনও গঠন করা হয়। তারা কার্যকর ব্যাংক খাত গড়ে তুলতে বেশকিছু সুপারিশও করে। ব্যাংকের নিয়মকানুন তৈরি করা হলেও সুদের হার, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতেই ছিল। ২০০০ সালের পর থেকে দেশের ব্যাংক খাত বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া শুরু হয়। ২০০৩ সালের দিকে কতগুলো কোর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন হলো। ২০০৯ সালের শেষের দিকে অটোমেটেড ক্লিয়ারিং প্রতিষ্ঠিত হলো। এরপর আরটিজিএস হলো। ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার, আরটিজিএস এগুলোই আধুনিক ব্যাংকিং। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসের যাত্রা হয়। এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হলো। এভাবেই দেশের ব্যাংক খাত এগিয়েছে। সময়ে বেশকিছু সংস্কারও হয়েছে। কিছু সংস্কার ব্যাংক খাতকে সমৃদ্ধ করেছে আবার কিছু সংস্কার এর অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে।

বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে নানা সমস্যা বিদ্যমান। মোটা দাগে বলতে গেলে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পরিচালনা ব্যবস্থাপনা সংকট এবং দুর্নীতি-অনিয়মই বড় সমস্যা। ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা সুশাসন ধরে রাখা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে কোনো বিচ্যুতি হলে তা শক্তভাবে প্রতিরোধ করা। কিছু ঘটলে অতি দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া। অথচ দেখা যাচ্ছে, অনেক ঘটনা চিহ্নিত হওয়ার পরও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভুললে চলবে না ব্যাংক আর দশটি প্রতিষ্ঠানের মতো না। ব্যাংক চলে জনগণের টাকায়। তাই হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনেক পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। ব্যাংকের ওপর জনগণের আস্থায় নড়চড় হলে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের একটি বড় সমস্যা দ্বৈত ব্যবস্থা। ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এখন সরকারি ব্যাংক পরিচালনা করছে, পরিচালক নিয়োগ দিচ্ছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডিও নিয়োগ দিচ্ছে। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় দ্বৈত শাসন সৃষ্টি হচ্ছে। সময় এসেছে সব ব্যাংককে একই ছাতার নিচে আনার, একই নিয়মে পরিচালনা করার। ব্যাংক চলে সাধারণ জনগণের টাকায়। মানুষ বিশ্বাস করে ব্যাংকে টাকা রাখে। সেই টাকায় ব্যাংকগুলো ব্যবসা করে। তাই সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের জন্য দুই ধরনের নিয়ম চালু থাকতে পারে না।

আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা বড় চ্যালেঞ্জ। আর্থিক খাতে, বিশেষ করে ব্যাংক খাতে নিয়ন্ত্রণ, পরিবীক্ষণ আরো সুদৃঢ় করতে হবে। সময় এসেছে ব্যাংক খাতে সময়োপযোগী সংস্কার করার। বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো শক্তভাবে কাজ করতে হবে। ব্যাংকঋণ নিয়ে বাইরে অর্থ পাচারও হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কুটির শিল্প, ছোট মাঝারি শিল্পগুলো তাদের চাহিদা অনুপাতে ঋণ পায় না। এসব সমস্যার সমাধান প্রয়োজন, যা গ্রাহক আস্থা বাড়াতে প্রয়োজন।

অর্থ পাচার বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের আরেকটি বড় সমস্যা। আমদানি রফতানির মাধ্যমেও অর্থ পাচার ঘটছে। এটি রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের আরো সক্রিয়তা প্রয়োজন। গ্রাহক আস্থা বাড়াতে এটিও ভূমিকা রাখবে।

ছোট শিল্পগুলো কর্মসংস্থান বেশি করে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করে। সেটা উৎপাদন খাতে যদি বেশি দেয়া হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতিও কিছুটা হ্রাস হবে। কারণ মূল্যস্ফীতিটা অনেকটা সরবরাহের ব্যাপার। আমাদের পণ্য সরবরাহ যদি বৃদ্ধি পায়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমবে। ব্যাংক খাত অত্যন্ত রক্ষণশীল। তারা সহজে ছোট শিল্পকে ঋণ দিতে চায় না। তাদের পেছনে ব্যাংকের সময় ব্যয় হয় বেশি, সুপারভাইজ করা কঠিন, ছোট অংকের টাকায় মুনাফা কম এসব ব্যাংকের যুক্তি, যেগুলো খোঁড়া যুক্তি। অথচ ছোট ঋণগ্রহণকারীদের পরিশোধের হার সন্তোষজনক। অন্যদিকে, বড় বড় ঋণগ্রহীতার অনাদায়ী ঋণের ভারে দেশের উন্নয়নও ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাংক খাতে বড় বড় শিল্পকে নানা রকম সুবিধা দেয়া হচ্ছে। যারা পণ্য রফতানি করে, তাদের আরো বেশি সুবিধা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ প্রতিরোধে সফল হচ্ছে না, এটি অনেক বড় সমস্যা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সঠিকভাবে কাজটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার কারণগুলো খুঁজলে আমরা দেখি ব্যাংকঋণগুলো আর্থিক শৃঙ্খলার ভিত্তিতে সার্বিকভাবে বিচার করে দেয়া হয়নি। যারা ঋণ নেবে তাদের আগের ট্র্যাক রেকর্ড কেমন তা দেখা হয়নি। ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট যোগ্যতা কেমন, তারা সঠিকভাবে ঋণ ব্যবহার করছে কিনা, ঋণগ্রহীতার ঋণ ফেরত দেয়ার সামর্থ্য আছে কিনা, ঋণগ্রহীতার সঠিক দায়ভার আছে কিনা তাও দেখা হয়নি। তারা ঋণের টাকা ডাইভার্ট অর্থাৎ ভিন্ন খাতে ব্যয় করেছে কিনা তাও দেখেনি ব্যাংক। এসবই ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণ। যদিও এটা সত্যি বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উন্নত বড় দেশগুলোয় যা করা হয় তা হলো বড় ঋণ দেয়ার জন্য বা ঋণ ইস্যু হওয়ার আগে অবশ্যই ব্যাংকের বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত থাকেন এবং তারা তাদের মতামত দিয়ে থাকেন। অপ্রীতিকর হলেও এটা সত্যি বাংলাদেশে তা হয় না। অনেক সময় দেখা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট আসার ছয় মাস পার হয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি হয় না। আবার কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে বলা হয় উচ্চ মহলের অনুমোদন লাগবে। ব্যাপারটা প্রলম্বিত না করে প্রাথমিক পর্যায়ের কর্মকর্তারা তা খতিয়ে দেখতে পারেন। লাইসেন্স বা নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে উচ্চতর মহলের ক্লিয়ারেন্স দরকার হতে পারে কিন্তু মনিটরিং অংশের প্রাপ্ত ফল দেখে সিদ্ধান্ত বা পরামর্শের জন্য ঊচ্চ মহলের দরকার পড়বে কেন, তা বোধগম্য নয়।

নব্বই দশকে এবং ২০০১ সালে আর্থিক সংস্কার প্রবর্তনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কিছুটা হ্রাস করা হয়েছিল। খেলাপি ঋণের নিম্নমুখী প্রবণতা ২০১১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। যা হোক, পরবর্তী বছরগুলোতে, নজরদারির ত্রুটি এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলার অভাবের কারণে খেলাপি ঋণের সঙ্গে জড়িত বড় আকারের কেলেঙ্কারিগুলো চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু দেশে আবারো খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাংক খাতের অবস্থার জন্য ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, পর্ষদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল মনিটরিংই দায়ী। ব্যাংক খাতের দুর্নীতির তথ্য বের করা অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের দায়িত্ব।

আর্থিক খাতের অনেক কাজ অ্যাডহক ভিত্তিতে অর্থাৎ নির্দেশনার মাধ্যমে সম্পন্ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ যখন প্রয়োজন বা দরকার তখনই সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। এটা আরো একটা মারাত্মক ভুল। কারণ অ্যাডহক মানদণ্ডের মাধ্যমে কখনই ভালো সমাধান আসে না। বিশেষ সুবিধা, বিশেষ ক্ষমতা, বিশেষ বিবেচনাএগুলো নয়, বরং ব্যাংক কার্যক্রম হওয়ার কথা ছিল নিয়মভিত্তিক, মান এবং আর্থিক শৃঙ্খলা পেশাদারত্বের ভিত্তিতে। বাংলাদেশে যেসব নিয়ম বিদ্যমান রয়েছে তা আন্তর্জাতিক মানের। তাই সেগুলো যথাযথ পালন করা উচিত। ব্যাংক সেগুলো ঠিকমতো অনুসরণ করছে কি? ব্যাংক এমনভাবে কাজ করতে থাকলে সামনে আরো খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকবে। যত দীর্ঘসূত্রতা থাকবে তত বেশি খেলাপিদের অনৈতিক সুবিধা বাড়তে থাকবে।

সংস্কার সুশাসন ছাড়া ব্যাংক খাত, পুঁজিবাজার, আর্থিক সংস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যাবে। অর্থনৈতিক সংকটের সময় জনগণের অংশগ্রহণ সহযোগিতা পাওয়া মুশকিল হবে। জনগণকে শুধু বলা হবে, কৃচ্ছ্রসাধন করো। জনগণ তো এমনিতেই কষ্ট করে। যখন জনগণ জানবে, শুধু তাদেরই কষ্ট করতে হচ্ছে, অন্যেরা অনিয়ম আয়েশে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে, তখন তারা কষ্ট করতে চাইবে কেন? যদি তারা জানে যে গৃহীত নীতি কর্মপরিকল্পনার পেছনে দেশের কল্যাণ ভবিষ্যতের মঙ্গল রয়েছে, তখন তারা নিজে থেকেই সাময়িক কষ্ট মেনে নেবে। জনগণের কল্যাণ তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বদলে তাদের অন্ধকারে রেখে আর্থিক খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা অগ্রগতি আসবে না।

অসম উন্নয়নের প্রচেষ্টার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। এদিকে আবার খেলাপি ঋণ শোধ করার জন্য বছরের পর বছর সময় দেয়া হয়েছে। তারপর ঋণ পুনঃতফসিল করার সময়ে ডাউন পেমেন্টের পরিমাণও কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। অযাচিতভাবে সুযোগ দেয়া হচ্ছে বড় বড় খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে। এমনিতে অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে, বিশেষ করে আয়ের বৈষম্য। এর সঙ্গে ব্যাংকঋণের অযাচিত সুবিধা এবং সরকারি প্রণোদনার বিশেষ সুবিধা পেয়ে এক শ্রেণি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে, দিন দিন সম্পদের বৈষম্যও প্রকট হচ্ছে। ২০২২ সালে অর্থনীতিতে তিনজন অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের অবদান ব্যাংক খাতের কার্যকলাপ সম্পর্কে। তাদের যুক্তির মূল বক্তব্য হচ্ছে ব্যাংক খাত সমস্যা সংকুলান হলে অর্থনৈতিক মন্দা বেশি প্রকট হবে। আমিও বলেছি, ব্যাংক খাত ঠিক করতে হবে, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে দেশের অর্থনীতির দ্রুত অগ্রগতি হবে না।

জ্যা তিহল, যিনি ২০১৪ সালে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন, তিনি বাজারের ক্ষমতা এবং আর্থিক নিয়ম বিধির ওপর তার গবেষণার জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার কাজ বেশির ভাগ ছিল বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ২০০৭-০৮ সম্পর্কিত। তিনি এবং তার সহকর্মীরা একটা বই লিখেছিলেন ২০১০ সালে, নাম ব্যালান্সিং দ্য ব্যাংক। বইয়ের মধ্যে তিনি অর্থনৈতিক মন্দার জন্য খেলাপি ঋণ, অর্থের অপচয়, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন। সবকিছু পর্যালোচনা করে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ব্যাংক খাতকে যদি যথাযথভাবে পরিচালনা না করা হয়, তাহলে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুরূহ হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছিল, যার পেছনে ছিল কিছু কেলেঙ্কারির ঘটনা। সুদের হারের সীমা ধরে রাখা, খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি এবং পেছনের কারিগরদেরে বিচারের আওতায় না আনা এবং সর্বোপরি তারল্য সংকটের কারণে গ্রাহকদের মনে ভয় প্রবেশ করেছে। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাংকের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। ঘরে নগদ অর্থ রাখা নিরাপদ নয়। ফলে ব্যাংক ছাড়া উপায় নেই। শুধু গ্রাহক নয়, অর্থনীতি সচল রাখতেও ব্যাংকের বড় ভূমিকা রয়েছে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও ব্যাংকের বড় অবদান রয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত ছাড়া বর্তমান সভ্যতাকেও কল্পনা করা যায় না। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যাংক খাতে সুশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

আমরা যদি দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাই, তবে আমাদের আর্থিক খাতে মনোযোগ দিতে হবে। আশঙ্কা ছিল ব্যাংক খাত নিজেই একটি বিপর্যয়কর অবস্থানে চলে যেতে পারে। এজন্য মুহূর্তে সরকারকে বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে। আমরা সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাস্তবে রূপ দিতে ব্যর্থ হব। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সংকট থেকে উত্তরণে ব্যাংক খাতকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাংক খাতে সংস্কার শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুশাসন জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। শক্তিশালী ব্যাংক ব্যবস্থা, স্থিতিশীল অর্থনীতির পরিচয় বহন করে। রুগ্ণ-দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থা রুগ্ণ-দুর্বল অর্থনীতির প্রমাণ দেয়। ব্যাংক বা ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অটল আস্থা অত্যন্ত জরুরি। আস্থা নষ্ট হলে কিংবা না থাকলে গোটা অর্থনীতিতে অন্যান্য ব্যবস্থায় ধস নামতে বাধ্য। তাই ব্যাংককেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি-দুষ্কৃতির প্রতিটি ঘটনার অনুপুঙ্খ তদন্ত করতে হবে। এসবের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

 

. সালেহউদ্দিন আহমেদ: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন