
ব্যাংকের
কাজ কী
বা ব্যাংক
কেন?
ব্যাংকের মূল কাজ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয়া ও দেয়া। এরপর অন্যান্য বাণিজ্য আসে। কিন্তু মূল কাজ হচ্ছে একজন কাস্টোডিয়ানের। আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমরা অন্য গ্রাহকদের ঋণ দিই। আমানতের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে ব্যাংক টিকতে পারে না।
কাস্টোডিয়ান
হিসেবে ব্যাংক
তার আস্থার
জায়গাটা তৈরি
করল কীভাবে?
ব্যাংক তো একটা লাইসেন্স করা প্রতিষ্ঠান। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে সে লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য উদ্যোক্তারা মূলধনের অর্থ জোগান দেন। আস্থার জায়গাটা তৈরি করবে বলেই ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়। ব্যাংকে জমাকৃত আমানতের একটা অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখা হয়। গ্রাহকদের আমানতের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কিছু আইন ও রীতিনীতি অনুসরণ করতে হয়। মানুষের আস্থাটা আসে সেখান থেকে।
টাকা
জমা রাখা
ও তা
ফেরত দেয়া
বা ঋণ
দেয়ার ক্ষেত্রে
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো
কতটা সফল?
দুয়েকটা দুর্ঘটনা ছাড়া আমাদের দেশে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়নি। কিছু ঘটনা ঘটেছে, তবে শতাংশের হিসাবে সেটা বেশি হবে না। বাংলাদেশে ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার তেমন বড় কোনো ঘটনা নেই। কোনো ব্যাংক যেন বন্ধ হয়ে না যায় তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকও যথেষ্ট সহযোগিতা করে। সরকারও আন্তরিকভাবে চায়, দেশে যেন কোনো ব্যাংক বন্ধ না হয়।
পৃথিবীতে
তো অসংখ্য
উদাহরণ আছে
ব্যাংক বন্ধ
হওয়ার। তো
বাংলাদেশ ব্যাংক
যেভাবে সাহায্য
করে তাতে
দুর্বৃত্তদের কোনো
সুবিধা হচ্ছে
কী?
অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত বৃহত্তর স্বার্থের জন্য কাজটা করছে। তারা তো নির্দিষ্ট কাউকে সাহায্য করার জন্য এটা করে না। মানুষের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার জন্য এটা করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু মানুষ অনৈতিক সুযোগ নেয়। এটা সব দেশেই হয়। ডিনামাইট আবিষ্কার হয়েছিল মানুষের কাজের সুবিধার জন্য, কিন্তু সেটা খারাপ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। দুয়েকটি দুর্ঘটনার জন্য পুরো ব্যাংক খাতকে দায়ী করা যায় না।
আস্থার
ঘাটতি তো
কোথাও না
কোথাও তৈরি
হয়েছে। সেটার
শুরুটা কোথা
থেকে?
যখন মানুষ নানা রকম খবর বা গুঞ্জন শুনতে শুরু করে বা সত্যিকার অর্থে এমন কিছু ঘটে, তখনই আস্থার সংকট দেখা দেয়।
কিন্তু
খবর তো
ঘটনার কারণেই
পত্রপত্রিকায় আসে...
মানুষের জন্য সংবাদপত্রই তথ্য জানার মূল উৎস। ভেতরে আর কী হচ্ছে তারা তো সেটা জানে না। ভেতরকার ঘটনা হয়তো দশজন লোক জানবে, দশ থেকে একশ জন জানবে। কিন্তু মানুষের জানার মাধ্যম তো সংবাদমাধ্যম। কোনো ব্যাংকের অভ্যন্তরে সুশাসনের ঘাটতি তৈরি হলে সেটি বেশি দিন চেপে রাখা যায় না। এক-দুটি ব্যাংকের সুশাসনের ঘাটতির সংবাদও পুরো খাতকে নড়বড়ে করে তুলতে পারে।
আস্থার
সংকট কাটাতে
ব্যাংকগুলো কী
পদক্ষেপ নিয়েছে?
প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগিয়ে এসেছিল। এরপর নানা ব্যাংকের কর্ণধাররা এগিয়ে এসেছেন। নানা প্রেস রিলিজ দেয়া হয়েছে। এসবের মাধ্যমে আমরা মানুষের আত্মবিশ্বাস ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি। তাদের বলতে চেয়েছি যে চিন্তার কোনো কারণ নেই। গভর্নর নিজেও বলেছেন প্রয়োজনে সাপোর্ট দেয়া হবে। এখন দেখেন কোনো ব্যাংকই কোনো পেমেন্ট বাতিল করেনি। আতঙ্কিত গ্রাহককে ব্যাংকে গিয়ে টাকা না নিয়ে ফিরতে হয়নি। এর মাধ্যমেও ব্যাংক খাত সম্পর্কে জনগণের কাছে ইতিবাচক বার্তা গিয়েছে।
কিন্তু
আমি জানতে
চাচ্ছিলাম সংকট
যেন না
হয়, এমন
ব্যাংকিং খাত
তৈরিতে কোনো
পদক্ষেপ আছে
কি? সরকার
বা কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের কাছে
এ বিষয়ে
আপনাদের প্রত্যাশা
কী?
আমাদের প্রত্যাশা সুশাসন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। আমরা চাই কোনো শাস্তি হলেও সেটা সবার জন্য একই রকম হোক। আবার আমাকে ক্ষমতা যেমন দেয়া হবে, তেমনি জবাবদিহিতাও রাখতে হবে। ভুলভ্রান্তি হলে পদক্ষেপ নেবে। সেখানে স্বচ্ছতা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন দুর্নীতি করার আগে মাথায় শাস্তি পাওয়ার চিন্তা আসে। সরকারি ব্যাংক হোক বা বেসরকারি, সবার ক্ষেত্রেই যেন স্বচ্ছতা থাকে। মানুষের মধ্যে এটা আসতে হবে যে দলমত যা-ই হোক না কেন, কোনো রকম দুর্নীতি করে ছাড় পাওয়া যাবে না।
মানুষকে
আর্থিক স্বস্তি
বা মুনাফা
দেয়ার ক্ষেত্রে
আপনাদের ব্যাংক
কী করছে?
আমাদের ব্যাংকে সব ধরনের প্রডাক্টই আছে। ইসলামী ব্যাংকিং থেকে শুরু করে সঞ্চয় বা বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের প্রডাক্ট দিয়ে আমরা গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছি। আর আমি এটা জানাতে চাই যে আমরা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছি। আমাদের পরিচালনা পর্ষদ খুবই স্বচ্ছ। একটা সুনাম আমাদের আছে এবং স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে সুনাম ধরে রাখতে হবে। আমরা একটি সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে কাজটা করছি। মুনাফার তুলনায় কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করায় আমরা মনোযোগ দিই। এর সঙ্গে স্বচ্ছতা রাখা হয় যেন গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করা যায়। আমাদের নামেই বিষয়টা আছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট। সে বিশ্বাসটা রাখার চেষ্টা করা হয়। দেশের অনেক ব্যাংক সম্পর্কে নানা কথা শোনা যায়। আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে কখনো আসেনি।
যারা
ব্যাংক থেকে
টাকা নিয়ে
সিন্দুকে রাখছে,
তাদের কাছে
আপনাদের বার্তা
কী?
আমার কথা হচ্ছে ঘরে রাখেন বা যেখানেই রাখেন সেটা বেশ অনিরাপদ। আপনার কাছে মনে হতে পারে আছেই তো আমার কাছে। কোনো ব্যক্তির ঘর ডাকাতি হলে সেটির জন্য অন্য কোনো জিম্মাদার থাকে না। কিন্তু আপনার টাকা ব্যাংকে থাকলে সেটার দায়দায়িত্বও ব্যাংকের। ব্যাংকের কোনো শাখা ডাকাতি হয়ে গেলেও গ্রাহক শতভাগ নিরাপদ। আগুন লেগে সব পুড়ে গেলেও আমানতকারীদের কোনো ক্ষতি নেই। ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা গভর্নর নিজে যেখানে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, সেখানে ব্যাংকই নিরাপদ। আপনাদের টাকা ব্যাংকেই রাখুন।