ছবি : ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে আফগানিস্তানে যুদ্ধে যান। সেখানে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া তাদের সঙ্গে যুদ্ধও করেছেন ফখরুল। এরপর ভারত হয়ে তিনি দেশে ফিরে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) সঙ্গে যোগ দেন।
২০০৫ সালে প্রথম গ্রেফতার হন তিনি। এরপর থেকে পলাতক ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে ফের হুজির হাল ধরেন ফখরুল। সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি ঘরে বসেই বোমা তৈরি করে দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা করেছিল তার নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়া হুজি সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে হুজবির ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
আজ শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) আসাদুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতাররা হলেন ফখরুল ইসলাম (৫৮), মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), দীন ইসলাম (২৫) ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬)। এ সময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানায় সিটিটিসি।
আসাদুজ্জামান জানান, আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় হুজি নেতা ফখরুল একাধিকার আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি ট্রেনিং করার পর আবার পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর আবার করাচিতে ফিরে আসেন। তিনি পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, হুজি সদস্যদের বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিল গ্রেফতাররা। ফখরুল ও তার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যায়। সেখানে রোহিঙ্গাদের মোটা অংকের টাকা অনুদান দেন।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল ‘একটু প্রস্তুতির’ কনটেন্ট হিসেবে ‘একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে’ শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানোর বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করে। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড অ্যাপসের চ্যানেল থেকে প্রাপ্ত কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুই-একজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানায়, তারা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজশে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) আদান-প্রদানও করত তারা।
হুজি সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করায়, তাদের সংগঠনে রোহিঙ্গাদের যুক্ত করতে সফল হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তারা একাধিকবার প্রবেশ করেছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে অর্থও খরচ করেছে হুজি।
নির্বাচন কেন্দ্রিক হুজির কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। আপাতত তাদের পরিকল্পনা এটাই ছিল। মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আমরা পাইনি। কোনো টার্গেট ছিল না। জর্দার কোটা দিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে ককটেল তৈরি করেছিল তারা।
