আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা

এক বছরে ৫৩২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আশঙ্কাজনকভাবে গত কয়েক বছরে দেশে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার হার বেড়েছে। গত বছর ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে স্কুল কলেজ পর্যায়ের ৪৪৬ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ জন শিক্ষার্থী। অঞ্চল ভিত্তিতে আত্মহননের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ঢাকায় এবং ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি আত্মহত্যা করেছে উল্লেখ করে সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা; সমাধান কোন পথে? শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং সভাপতি তানসেন রোজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুল কলেজ পর্যায়ের ৪৪৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪০ জন স্কুল সমমান প্রতিষ্ঠানের এবং ১০৬ জন কলেজ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ২৮৫ জন ছাত্রী এবং বাকি ১৬১ জন ছাত্র। এদের ৫৪ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী। স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯, মার্চে ৪১, এপ্রিলে ৫০, মে মাসে ৪৫, জুনে ৩১, জুলাইয়ে ৪০, আগস্টে ২১, সেপ্টেম্বরে ৩২, অক্টোবরে ৩০, নভেম্বরে ৪৯ ডিসেম্বরে ৩৪ জন আত্মহত্যা করে। ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।

আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবণী বলেন, সমীক্ষাটি করতে দেশের দেড় শতাধিক জাতীয় স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের যাবতীয় তথ্য নেয়া হয়েছে। তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের আট বিভাগে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগে। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক ১৩, রংপুরে দশমিক ৭৪, বরিশালে দশমিক ৫৩, ময়মনসিংহে দশমিক ২৭ এবং সিলেট বিভাগে দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ছাত্র ৩৬ দশমিক শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ছাত্র ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। একই পথে পা বাড়ানো শুধু কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ছাত্র ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে।

আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, কারণ হিসেবে মান-অভিমানের বশে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, এর হার ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তাদের বড় অংশেরই অভিমান ছিল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। অন্য কারণের মধ্যে প্রেমঘটিত অন্যতম, এর হার ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। এছাড়া পারিবারিক কলহে দশমিক ১৪ শতাংশ, হতাশায় দশমিক শূন্য , মানসিক সমস্যায় দশমিক ৭৯, আর্থিক সমস্যায় দশমিক ৭৯ এবং উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছে দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

তবে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে আরো বেশকিছু কারণের তথ্য পেয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ায় চারজন, শিক্ষক দ্বারা অপমানিত হয়ে ছয়জন, মোবাইল গেম খেলতে বাধা দেয়ায় সাতজন, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭ জন, মোবাইল ফোন কিনে না দেয়ায় ১০ জন, মোটরসাইকেল কিনে না দেয়ায় ছয়জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। এছাড়া অন্য আরো কারণের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না করতে পারা, পড়াশোনা পারিবারিক চাপ।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, জরিপে দেখা যাচ্ছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। অর্থাৎ তারা বয়ঃসন্ধিকালের যে সময় পার করছে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই। বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। বিশেষ করে পরিবার প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন