হেপবার্নের জন্য টিকে গিয়েছিল মুন রিভার

ফিচার ডেস্ক

ছবি: নরম্যান পারকিনসন আর্কাইভ

অড্রে হেপবার্ন অভিনীত ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানি’জ আজ ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পায়। সিনেমাটি সে সময়ই নান্দনিক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। দারুণ সব দৃশ্যের সমারোহ রয়েছে এ সিনেমায়। জর্জ পেপার্ড ও অড্রে হেপবার্নের অভিনয়ও দারুণ প্রশংসিত হয়। হেপবার্ন এ সিনেমার সুন্দরতম সংযোজনের একটি। তবে এ সিনেমা সম্পর্কে আরেক মজার তথ্য হলো সিনেমার বিখ্যাত গান ‘মুন রিভার’ সিনেমা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছিল। হেপবার্নের চেষ্টায় এটি সিনেমায় জায়গা ধরে রেখেছিল। কেবল এখানেই শেষ নয়। সেরা মৌলিক গান বিভাগে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল মুন রিভার।
ব্লেক এডওয়ার্ডস পরিচালিত ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানি’জ থেকে মুন রিভার বাদ দিতে চেয়েছিলেন সিনেমার নির্মাতারা। গানটি লিখেছিলেন জনি মার্সার এবং সুর করেছিলেন হেনরি মানচিনি। তারা দুজনে এক্ষেত্রে নিরুপায় অবস্থায়ই ছিলেন। দুজনেই স্বীকার করেছেন, নির্মাতারা চাইলে সহজেই সিনেমা থেকে গানটি বাদ দিতে পারতেন। এ সময় গানটি সিনেমায় রাখার ক্ষেত্রে হেপবার্নের পক্ষ থেকেই জোর দাবি ওঠে। এমনকি তিনি বলেছিলেন, গানটি ব্যবহার না হলে তিনি আত্মহত্যা করতেও পেছাবেন না।
এরপর এটি সিনেমায় কেবল রাখাই হয়নি, সিনেমার কিছু অংশে আবহসংগীত হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানি’জ এর গল্প ও অভিনয়ের পাশাপাশি দৃশ্যায়ন, চরিত্রায়নের জন্যও বিখ্যাত। অড্রে হেপবার্নের চরিত্রটিকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এর সাফল্যের পেছনেও গানটির অবদান রয়েছে। গানটির মধ্য দিয়ে গোলি গোলিথির চরিত্রের একটি ভিন্ন দিক দেখানো হয়েছে। সেখানে সে কিছুটা কোমল, কিছুটা দুর্বল।
সিনেমায় এ গানের দৃশ্যে হেপবার্নের পাশাপাশি জর্জ পেপার্ডকেও দেখা যায়। পল ভারজাক চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এ গান শেষ হয় একটি সম্বোধনসূচক ‘হাই’-এর মধ্য দিয়ে। জানালায় তাকিয়ে হোলি পলকে দেখে এটি বলে। ফলে সেখানে একটি সুন্দর, রোমান্টিক ও কোমল আবহ তৈরি হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো মুন রিভার গানটি সেখানে না থাকলে এমন হতো না। কোনো সুর বা ইনসস্ট্রমেন্টালের মাধ্যমে একটি আবহ আনা সম্ভব হতো কিন্তু মুন রিভারের যে আবেদন, তা তৈরি হতো না।
জানালায় বসে হোলির গান গাওয়া এবং নিজের জানালা থেকে পলের তা দেখা ও শোনার দৃশ্যটি একটি রোমান্টিক আবহের সৃষ্টি করে। আবার গানের মধ্যে একজন ব্যক্তির নস্টালজিয়ার আবহ আনা হয়।

মার্সার ও মানচিনি অড্রে হেপবার্নের জন্য গানটি লিখেছিলেন। এর মধ্যে মার্সারের ছেলেবেলায় জর্জিয়া, সাভানায় তার জীবনের নস্টালজিয়া এসেছে। হাকলবেরি ফিনের কথার মধ্য দিয়ে ছেলেবেলার নস্টালজিয়ার পাশাপাশি স্বপ্নের কথাও উঠে আসে। গানটি অড্রে হেপবার্ন গেয়েছিলেন সিনেমায়। এ কারণেই হয়তো গানটির প্রতি তার আলাদা আবেগ ছিল। তাই তিনি বলেছিলেন, গান বাদ দিতে হলে আমার লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে।
হেপবার্নের ভার্সনের পাশাপাশি ১৯৬১ সালের শেষের দিকে জেরি বাটলালের গাওয়া ভার্সনটিও জনপ্রিয় হয়েছিল। পরের বছর গ্র্যামিতে ‘সং অব দ্য ইয়ার’ও হয়েছিল। এরপর বহু শিল্পী গানটি গেয়েছেন। তবে হেপবার্নের কারণে ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানি’জ সিনেমায় এ গান ও গানের দৃশ্যায়ন বিশ্বের সিনেমার অন্যতম আইকনিক দৃশ্যের একটি হয়ে আছে।

সূত্র: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন