যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

সেবা খাতে নজরদারিতে আয় বেড়েছে ১ কোটি টাকা

আবদুল কাদের, যশোর

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ক্যাশ কাউন্টার চালু লুটপাট বন্ধ হওয়ায় আয় বাড়ার ক্ষেত্রে উল্লম্ফন ঘটেছে। ২০২১-এর চেয়ে ২০২২ সালে হাসপাতালে কোটি টাকা আয় বেশি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কড়া নজরদারিতে প্যাথলজি বিভাগের দুর্নীতি কমেছে। আগে দায়িত্বরতরা হাতে হাতে টাকা নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। পরীক্ষার জন্য নেয়া সে টাকা প্যাথলজি বিভাগের কেউ কেউ পকেটে ভরতেন। তাদের লুটপাটের কারণে হাসপাতালের আয়ের খাত রুগ্ণ হলেও মোটাতাজা হয়েছেন কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত এক পরিসংখ্যান মতে, ২০২০ সালের জুলাই-ডিসেম্বর কোনো মাসেই ২০ হাজারের ওপরে আয় ছিল না এক্স-রে বিভাগের। ওই বছরে জুলাইয়ে সর্বনিম্ন আয় হয়েছিল মাত্র ৪২০ এবং সর্বোচ্চ নভেম্বরে ১৬ হাজার ৪০০ টাকা।

২০২১ সালের জুলাই-ডিসেম্বরের চিত্র অভাবনীয়। ওই বছরের জুলাইয়ে এক্স-রে বিভাগ সর্বনিম্ন ৮৪ হাজার ৬০০ সর্বোচ্চ সেপ্টেম্বরে লাখ ১৮ হাজার ৬৫০ টাকা আয় করেছে। ২০২২-এর জুলাই-ডিসেম্বরের চিত্র আরো অবাক করার মতো। লাখ টাকা আয়ের অংক বছর পৌঁছে যায় লাখের ঘরে। ওই বছর সর্বোচ্চ আয় এসেছে সেপ্টেম্বরে। সময়ে এক্স-রে  বিভাগ থেকে আয় এসেছে লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এক্স-রে বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মৃত্যুঞ্জয় রায় অবশ্য দাবি করছেন, আগে ফিল্ম সংকট ছিল। রোগীও আসত কম। এজন্য সে সময় আয় কম ছিল। পরে সংকট কেটে যাওয়ায় আয় বেড়েছে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন থেকে হাসপাতালে যোগদান করেন বর্তমান তত্ত্বাধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান। স্বচ্ছতা আনতে তার কড়াকড়িতে দুর্নীতি কমেছে। বেড়েছে রাজস্ব।

সূত্র মতে, বিদায়ী বছর হাসপাতালে লাখ ২০ হাজার ৫৪০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভর্তি থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৭০ হাজার ৩৬৬ রোগী। জরুরি বিভাগ বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন লাখ ৫০ হাজার ১৭৪ জন। সময় বিভিন্ন বিভাগ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে কোটি ৫৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৫ টাকা। ২০২১ সালে রাজস্ব আয় হয় প্রায় অর্ধেক কোটি ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪১০ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে আয় বেড়েছে কোটি লাখ ৯১ হাজার ৪৭৫ টাকা। হাসপাতালের এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটিস্ক্যান, বহির্বিভাগ টিকিট, জরুরি বিভাগ টিকিট, কেবিন, পেয়িংবেড, অ্যাম্বুলেন্স, প্যাথলজিসহ অন্যান্য খাতে সেবা দিয়ে কর্তৃপক্ষ টাকা আয় করেছে, যা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দেয়া হয়েছে।

হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিভাগ হয়েছে সহজ। বেড়েছে স্বচ্ছতা। সাবেক তত্ত্বাবধায়করা চেষ্টা করেছিলেন। বর্তমান তত্ত্বাবধায়কের কঠোরতায় প্রতিটি বিভাগের দুর্নীতি কমিয়ে আনা হয়েছে। এজন্য রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হাতে হাতে টাকা গ্রহণ যাতে না হয় সে বিষয়ে সবাইকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত বছর সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টারের কার্যক্রম ডিজিটাল করা হয়েছে। ক্যাশ কাউন্টারে অর্থ জমা দেয়ার কারণে আর্থিক স্বচ্ছতার পাশাপাশি কমেছে রোগীর ভোগান্তি। জবাবদিহিতা থাকায় বর্তমানে রাজস্ব বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। এখন অনলাইনে কার্যক্রমের তথ্য থাকায় রাজস্ব আরো বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন