
বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতিতে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সামিট আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বাড়বে। গতকাল রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘কৃষি খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে অবশ্যই দুই দেশকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতি বছর শিল্পায়ন ও অন্যান্য কারণে ১ শতাংশ করে কৃষিজমি কমছে। অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে উৎপাদনও অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ হলেও কৃষি খাতে এখন শ্রমিকের অভাব রয়েছে। ফলে পুরনো কৃষি পদ্ধতি বদলানোর বিকল্প নেই।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর অনেক ফসল নষ্ট হয় উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সব দিক বিবেচনায় এবং উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে কৃষিকে আধুনিকায়ন করার প্রয়োজনীয়তা খুবই আবশ্যক। বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের শীর্ষে আছে। ভারতে রফতানি আরো বাড়াতে চায় বাংলাদেশ।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে খাদ্য ও শিল্পের উন্নয়নে কৃষি খাতের অবদান ব্যাপক। এ সামিটের মাধ্যমে দুই দেশের কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি আসবে। এতে করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ এখন এশিয়া অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এরই মধ্যে আমরা যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেছি। আশা করছি, আগামী দিনেও এ যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষি খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করবে ভারত। আধুনিক সরঞ্জাম উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করা হবে। দুই দেশই সমান কৃষি জলবায়ু অঞ্চল। এখানে জ্ঞান আদান-প্রদানের একটি অপার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে দুই দেশই লাভবান হবে।’
সামিটের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘আমি মনে করে এটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। এর মাধ্যমে দুই দেশেরই কৃষি এগিয়ে যাবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণেও এটি ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে খাদ্য ও শিল্পের উন্নয়নে কৃষি খাতের ব্যাপক অবদান রয়েছে। এ সামিটের মাধ্যমে দুই দেশের কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি আসবে। এতে করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করতে দুই দেশের মধ্যকার যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ২০২২ সালে আমাদের কৃষিতে রফতানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় চাল উৎপাদনকারী দেশ। আম উৎপাদনে শীর্ষ দশে রয়েছে। অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদনেও বাংলাদেশের অবস্থান শুরুর দিকে। অন্যদিকে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনের দিক থেকে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে একটি ভারত। ভারতের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিয়োগের মাধ্যমে দুই দেশই লাভবান হবে। বাজারের দিক থেকে বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় একটি দেশ।’ তিনি আরো বলেন, ‘তিনদিনের এ সামিট ও কারিগরি সেশনগুলো আমাদের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের কৃষির সম্প্রসারণে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে।’
অনুষ্ঠানে এসিআই মোটরস লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী এবং দ্য মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিল উপস্থিত ছিলেন। এফবিসিসিআই, সিআইআই, ট্রাক্টর অ্যান্ড মেকানাইজেশন অ্যাসোসিয়েশন (টিএমএ) এবং ভারতীয় হাইকমিশনের অংশীদারত্বে আয়োজিত এ এক্সপো চলবে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের শতাধিক স্টল। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রদর্শনী ক্রেতা-দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।