চিনির বাজার

চার শিল্প গ্রুপের সাড়ে ১০ লাখ টন চিনি খালাস

রাশেদ এইচ চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হচ্ছে অপরিশোধিত চিনি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মাস দুয়েক পর রমজান। আর সময়টায় চিনির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। তার আগেই আরো এক দফা পণ্যটির দাম বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। এর কারণ হিসেবে অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন স্থানীয় পরিশোধনকারী মিল মালিকরা। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে সাড়ে ১০ লাখ টন চিনি খালাস করেছে চারটি শিল্প গ্রুপ।

দেশের চাহিদা পূরণে চিনি আমদানিতে সক্রিয় রয়েছে মূলত পাঁচটি শিল্প গ্রুপ। দেশীয় উৎপাদন তলানিতে নামায় শিল্প গ্রুপগুলোর হাতেই এখন চিনির আমদানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত অপরিশোধিত চিনি দেশে এনে পরিশোধনের পর বাজারজাত করে। আর অপরিশোধিত বা সুগার আনার সময় বন্ড সুবিধা পাওয়া যায়। চলতি অর্থবছরের সাত মাসেই ব্রাজিল ভারত থেকে আনা সাড়ে ১০ লাখ টন চিনির শুল্কায়ন হয়েছে। হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা আমদানি মূল্যের চিনির পুরোটাই এনেছে মেঘনা, সিটি, এস আলম দেশবন্ধু গ্রুপ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে তা জানা যায়।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে চিনি খালাস হয়েছে লাখ ৯৫ হাজার টন। মোট ২১টি জাহাজে আনা হয়েছে পরিমাণ চিনি। এনবিআরের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের সমুদ্র স্থলবন্দর মিলিয়ে সাত মাসে মোট ১০ লাখ ৫৫ হাজার টন চিনির শুল্কায়ন হয়েছে কাস্টমসের মাধ্যমে। রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎপাদন তলানিতে নেমে আসায় খাদ্যপণ্যটির পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধন করা মূল্যের অংকটিও বেশ চড়া। অর্থবছরের ছয় মাসে ব্রাজিল ভারত থেকে আনা খাদ্যপণ্যের মোট আমদানি মূল্য হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। পরিমাণ হিসেবে দেশের ব্যবসায়ীরা ব্রাজিল থেকে চিনি এনেছেন লাখ ৯৫ হাজার ৭২৪ টন। বাকি লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ টন আনা হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে।

এককভাবে সাত মাসে সবচেয়ে বেশি চিনির শুল্কায়ন হয়েছে মেঘনা গ্রুপের। এনবিআরের হিসাবে, দেশে মোট আমদানির ৫০ শতাংশই অর্থাৎ লাখ ২২ হাজার টন চিনি শিল্প গ্রুপের শুল্কায়ন হয়েছে, যার আমদানি মূল্য হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এর পর পরই সিটি গ্রুপের শুল্কায়ন হয়েছে হাজার ১২৮ কোটি টাকা মূল্যের লাখ ৫৭ হাজার ৩৪০ টন (২৪ শতাংশ) এস আলম গ্রুপের অধীনে ৮৪৩ কোটি টাকা মূল্যের লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টন (১৮ শতাংশ) বাকি শতাংশ বা ৮৪ হাজার ২৫০ টন চিনি শুল্কায়ন করেছে দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেড, যার আমদানি মূল্য ৪৩৫ কোটি টাকা। এর বাইরে আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেডের অনুকূলে আমদানি হয়েছে লাখ ২৩ হাজার টন চিনি, যার মূল্য ৬৩৩ কোটি টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানের খাদ্যপণ্যটি এক্স বন্ডে যায়নি।

এদিকে নতুন করে যে দর বাড়ছে তাতে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে কেজিপ্রতি খোলা চিনির দাম টাকা প্যাকেটজাতে বাড়বে টাকা। কেজিপ্রতি খোলা চিনি ১০৭ প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকা নির্ধারণ করে নতুন দাম কার্যকর হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ থেকে ১২ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ১০৭ টাকা। আর প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম বাড়িয়ে করা হয় ১০২ টাকা।

জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর চিনি উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা যাচ্ছে না অপরিশোধিত চিনিও। এদিকে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি আমাদের উৎপাদনকারীদের বড় ধরনের বেকায়দায় ফেলেছে। উৎপাদন বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সংকটের কারণে সৃষ্ট চাপ মোকাবেলায় যেখানে বিভিন্ন পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, চিনির ক্ষেত্রে সেটি দৃশ্যমান হয়নি। ২০০২ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ চিনি খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) এককভাবে চিনি উৎপাদন আমদানি করত। তবে ২০২০ সালে ছয়টি চিনিকল বন্ধ হওয়ার পর বড় ধাক্কা লাগে স্থানীয় উৎপাদনে। চিনিকলগুলোর লোকসানের বোঝা কমাতে ওই সময় বিএসএফআইসি সব চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে চিনি আমদানি করতে গিয়ে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে, যার বোঝা গিয়ে পড়ছে ভোক্তাদের ওপর।

বিএসএফআইসির বাণিজ্যিক পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আনোয়ার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে বছরে ২০ লাখ টন চিনি সরবরাহ থাকলেই চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। চাহিদার এখন পুরোটাই বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা করছেন। তাদের পরিশোধনক্ষমতাও চাহিদা অনুযায়ী বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন