বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি

সেপ্টেম্বরে চালুর প্রস্তুতি, শুরুতে বাসের দায়িত্বে বিআরটিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিআরটি প্রকল্পের টঙ্গী থেকে হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত দুটি লেন খুলে দেয়া হয় গত নভেম্বরে। এখনো প্রায় ১৫ শতাংশ কাজ বাকি ফাইল ছবি: কাজী সালাহউদ্দীন রাজু

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর-গাজীপুর অংশে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে। পথে নির্মিতব্য বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ব্যবস্থা আগামী সেপ্টেম্বরে চালুর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে ঢাকা লাইন নামে অভিহিত বিআরটি ব্যবস্থা চালুর জন্য ১৩৭টি বাস কেনার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী জুলাই বা আগস্টে অন্তত ৫০টি বাস সংগ্রহের আশা করছেন ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা। নিরবচ্ছিন্ন বাসসেবা দেয়া হবে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত। বাস পরিচালন ব্যবস্থাটি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও শুরুতে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন কোম্পানি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনকে (বিআরটিসি)

গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার বিমানবন্দর মোড় থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত গড়ে তোলা হচ্ছে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি করিডোর। ২০১২ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হলেও মাঠ পর্যায়ে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। তবে কাজের ধীরগতি আর নানা অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগ বাড়তে শুরু করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের। এর মধ্যে গত বছরের ১৫ আগস্ট প্রকল্পের নির্মাণকাজে ব্যবহূত একটি গার্ডার ক্রেন দিয়ে স্থানান্তরের সময় চলন্ত প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় প্রাইভেটকারের পাঁচ আরোহীর। দুর্ঘটনার পর বিআরটি প্রকল্পের কাজের নানা অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো নতুন করে আলোচনায় আসে। এরপর বাড়ানো হয় প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিছুটা বাড়ে কাজের গতিও। এখনো প্রকল্পটির প্রায় ১৫ শতাংশ কাজ বাকি।

ঢাকা বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম যদিও চলতি বছরের আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের সার্বিক কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী। বিষয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা ১৩৭টি বাস কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছি। আশা করছি, প্রথম লটে আগামী জুলাই বা আগস্টের মধ্যে অন্তত ৫০টি বাস হাতে পাব। ডিজেলচালিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসব বাস দিয়ে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দেশের প্রথম বিআরটি সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বিআরটি কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা নিজেরা বাস পরিচালনা করবে না। আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেসরকারি কোনো অপারেটর নিয়োগ করবে। যদিও শুরুতে সিদ্ধান্ত সংস্থাটি বাস্তবায়ন করতে পারছে না। বেসরকারি অপারেটরের বদলে তারা বেছে নিচ্ছে বিআরটিসিকে। বিষয়ে জানতে চাইলে সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা অপারেটর নিয়োগের কাজটি একটু সময় নিয়ে করতে চাই। কারণ এখানে মুনাফার একটা বিষয় রয়েছে। অপারেটরের সঙ্গে চুক্তির সময় টাকার অংক সামান্য এদিক-ওদিক হলেও সার্বিক মুনাফাকে তা বেশ প্রভাবিত করবে। এজন্য আমরা চাচ্ছি সময় নিয়ে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে অপারেটর নিযুক্ত করতে। এজন্যই বিআরটিসিকে আপাতত বাস পরিচালনার দায়িত্ব দেব। সময়ে অপারেটর নিযুক্তির কাজগুলোও এগিয়ে নেব। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি নাগাদ অপারেটর নিযুক্ত করে বাস পরিচালনার দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা আমাদের।

বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকারের তিনটি সংস্থা। এর মধ্যে ছয়টি ফ্লাইওভার দিয়ে সাড়ে চার কিলোমিটার উড়াল অংশ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। অংশে স্টেশনের সংখ্যা ছয়। ভূমির সমান্তরালে ১৬ কিলোমিটার অংশ বাস্তবায়ন করছে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, যেখানে ১৯টি স্টেশন রয়েছে। আর বাস ডিপোসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। তিন সংস্থার কাজ সমন্বয় করে ঢাকায় বিআরটি নির্মাণ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেড। দেশের প্রথম বিআরটি করিডোরটি তৈরি করতে খরচ হচ্ছে হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। কয়েক দফা সংশোধন করে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন