সংসদে প্রধানমন্ত্রী

সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা যাচাই করবে জনগণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য দেন ছবি: পিএমও

সরকারের ব্যর্থতা থাকলে তা বিরোধী দলকে খুঁজে বের করতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, সততা নিয়ে কাজ করলে কেন ব্যর্থ হতে হবে? জবাবে সংসদ নেতা বলেন, সফলতা কী, ব্যর্থতা কী এটা যাচাই করবে জনগণ। এটা যাচাই আমার দায়িত্ব না। সততা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জনগণের কল্যাণ বিবেচনা করে কাজ করলে ব্যর্থ হব কেন? কোথায় সাফল্য, কোথায় ব্যর্থতা সেটা জনগণই বিচার করবে। মাননীয় সদস্য, আপনার যখন এতই আগ্রহ তাহলে আমার ব্যর্থতাগুলো আপনিই খুঁজে বের করে দিন, আমি সংশোধন করে নেব।

ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কলেজেও রাজনীতি করেছি। রাজনীতি আমাদের পারিবারিক, একেবারে রক্তেই আছে। কিন্তু কখনো এত বড় দায়িত্ব নিতে হবে ভাবিনি। ওই ধরনের কোনো আকাঙ্ক্ষাও ছিল না। সময়ের প্রয়োজনে যখন যা প্রয়োজন হয়েছে, সেই কাজই করে গেছি, করার চেষ্টা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে রাজনীতিতে নিজের পথচলার বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কোনটা সফল হওয়া, কোনটা বিফল হওয়া, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে।

জাতির পিতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি। দেশকে চিনেছি, জেনেছি। সরকার গঠনের পর তৃণমূলের মানুষ যেন ভালো থাকে সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়েই কাজ করেছি। তার সুফল এখন জনগণ পাচ্ছে। ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশে যে আমূল পরিবর্তন সেটা আমরা বয়োবৃদ্ধ যারা আছি তারা জানি। কিন্তু আজকের প্রজন্ম জানবে না।

সংসদ সদস্য একেএম রহমতুল্লাহর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান বন্দি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দিয়েছিলেন। সংবিধানের দুটি ধারায় পরিবর্তন এনে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়, ভোটের অধিকার দেয়া হয়। গোলাম আযমসহ অনেক যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দেয়া, যুদ্ধাপরাধীদের উপদেষ্টা, মন্ত্রী বানানো হয়। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করেছিলেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দেয়া, অপমান করা হয়। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান তারা দিতে চায়নি।

সময় ১৯৭৫ সালের পর মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কথা বলতে ভয় পেত, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের চাকরি দেয়া হতো না, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে নিজের বক্তব্যে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। এসবের বিরুদ্ধে তার সরকারের নেয়া অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, এখানে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে। অনেক সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়ির মুরব্বিকে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু বাড়ির ভেতরে তারা হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, অস্ত্র রাখার ব্যবস্থা করেছেন। যে কারণে জাতির পিতা একটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু যারা গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট নারী ধর্ষণ করেছিল তাদের তিনি বিচার করেছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশে সবকিছু পাল্টে যায়। মনে হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে অপরাধ করে ফেলেছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছে। তবে বর্তমানে সেই অবস্থা নেই।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান সম্পূরক প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনতে আইন প্রণয়ন করা হবে কিনা তা জানতে চান।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ইতিহাস বিকৃত করেছে ইতিহাসই তাদের বিচার করে দিয়েছে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। আমার কাজ হলো মানুষের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরা। যারা ইতিহাস বিকৃত করেছে তাদের চরিত্র মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়েছে। ইতিহাস মানুষের সামনে প্রকাশ পেয়েছে, মানুষ তার চর্চা করছে। আজকের যুবসমাজ ইতিহাস জানতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী, এটাই বড় বিচার। যারা সত্যটাকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে চেয়েছিল তারাই আজকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে চলে গেছে।

জামালপুর- আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু সেখানে টেকনিক্যাল লোক পাওয়া কঠিন। বিদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে কাজ দেয়া হয়। সরকার টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে, যাতে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি হয়। তাদের চাকরির অভাব নেই। পাস করার সঙ্গে সঙ্গে তারা তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় চাকরি পায়।

১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরিতে প্রধানমন্ত্রী: এর আগে গতকাল গাজীপুরের মৌচাকে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩২তম এশিয়া-প্যাসিফিক ১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। উপস্থিত স্কাউটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি প্রতিটি শিশুকে দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। স্কাউটদের নৈতিক জীবনমুখী শিক্ষা দিয়ে, সেবা দেয়ার মানসিকতা সম্পন্ন করে দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই আমাদের দেশটা আরো চমৎকারভাবে গড়ে উঠুক, যেখানে মাদক, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না। দেশ সাম্প্রদায়িকতা সন্ত্রাসমুক্ত থাকবে। কাজেই বাংলাদেশে যে শিশুরা বড় হবে তারা উদার মন নিয়ে বড় হবে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা কাজ করবে।

স্কাউট আন্দোলন আরো ব্যাপকভাবে গড়ে উঠবে, প্রত্যাশা করে দেশে স্কাউট আন্দোলন জোরদার করতে তার সরকারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার প্রতিটি উপজেলা জেলায় স্কাউট ভবন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করবে। বিশ্ব স্কাউটস জাম্বুরি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কাব স্কাউটদের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করেন এবং তার নিজের স্বাক্ষরিত সনদ ১২ জনের হাতে তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ এবং জাম্বুরি আয়োজক কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার . মো. মোজাম্মেল হক খান। প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক জাতীয় স্কাউটদের জাম্বুরি চিহ্নিত করে একটি স্মারক ডাকটিকিটও অবমুক্ত করেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন