উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও ধাপে ধাপে মূল্যবৃদ্ধি চায় বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভ্যন্তরীণ বাজারে তৈরি পোশাকের কাঁচামালের দাম বেড়েছে, বেড়েছে উৎপাদন খরচও। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ব্যাংকঋণের সুদহারও। তা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন পোশাক শিল্পের প্রতিনিধিরা। সার্বিক প্রেক্ষাপটে তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন খাতের ব্যবসায়ীরা। তাই তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদনের স্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ এবং মূল্য ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে পোশাক প্রস্তুত রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা . তৌফিক--ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে ২৪ জানুয়ারি সংগঠনটি পৃথক চিঠি দিয়েছে।

বিজিএমইএ চিঠির শুরুতেই জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে তৈরি পোশাক শিল্প। বর্তমানে দেশের মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশই অর্জিত হচ্ছে শিল্প থেকে। প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে প্রায় চার কোটি মানুষ এর ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া টেরিটাওয়েল, বস্ত্র শিল্প অন্যান্য খাত মিলিয়ে অর্জিত হয় প্রায় ৮৮ শতাংশ রফতানি আয়।

সরকারের আন্তরিক সহযোগিতায় করোনাকালীন সংকট মোকাবেলা করে বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট চলছে। রফতানি আদেশ অনুযায়ী উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনায় জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে অনিয়মিত বিদ্যুৎ গ্যাস সরবরাহের কারণে দেশের পোশাক কারখানাগুলোয় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। পরিস্থিতির মধ্যে সরকার ১২ জানুয়ারি গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর কিছুদিন আগেই বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে এরই মধ্যে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে পোশাক উৎপাদন খরচও। এতে বেড়ে গেছে মূল্যস্ফীতি। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকঋণের সুদহারও বেড়েছে এবং আরো বাড়বে। এভাবে তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অত্যধিক বাড়ায় শ্রমিকরাও চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়বেন এবং তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। তখন সামগ্রিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিজিএমইএ।

পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক না বাড়িয়ে সিস্টেম লস, মিটার রিডিং, অবৈধ সংযোগ, লুজ কানেকশন ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বন্ধ করতে হবে বলে মনে করছে বিজিএমইএ। সিস্টেম লস নামিয়ে আনতে হবে শূন্যের কোঠায়। বৈশ্বিক সংকট লাঘবে সংগঠনটি আগামী এক বছরের জন্য আমদানীকৃত জ্বালানি পণ্যে কাস্টমস শুল্ক ভ্যাট প্রত্যাহারেরও অনুরোধ জানিয়েছে চিঠিতে। বিজিএমইএ বলছে, সরকার তিন পদ্ধতিতে গ্যাস সংগ্রহ করে বিপণন করে। এর মধ্যে একটি দেশীয় ন্যাচারাল গ্যাস, দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিভিত্তিক আমদানীকৃত এলএনজি এবং তৃতীয়টি স্পট মার্কেট থেকে কেনা এলএনজি। তাই তিনটির সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় নিয়ে একসঙ্গে এত দাম না বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে সহনীয় পর্যায়ে বাড়ালে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেতে পারে বলে মত দেয় বিজিএমইএ। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদন কার্যক্রমের স্বার্থে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন