জাবিতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে

মেহেদী মামুন, জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে পরিযায়ী পাখি ছবি: অরিত্র সাত্তার

পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য হওয়ায় পাখির স্বর্গ নামেও পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরে সেখানে পরিযায়ী পাখি আগমনের হার ক্রমে কমছে। বছর তা আরো ব্যাপক আকারে দৃশ্যমান। প্রথমদিকে দুটি লেকে পাখি এলেও এখন শুধু সংরক্ষিত একটি লেকে পাখি বসছে। পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে উন্নয়ন কার্যক্রম বিভিন্ন ধরনের উৎপাতের বিষয়টি তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিযায়ী পাখির প্রজাতি সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি প্রতি বছর পাখিমেলার আয়োজনে থাকেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান। তার মতে, পরিযায়ী পাখি কমে যাওয়ার মূল কারণ উৎপাত। ট্রান্সপোর্ট-সংলগ্ন লেকের পাশে থাকা চায়ের দোকান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়ক লেকের সঙ্গে হওয়ায় গাড়ির হর্ন এবং সবচেয়ে বড় জলাশয় জয়পাড়া লেকে সীমানা প্রাচীর না থাকায় পরিযায়ী পাখি নানাভাবে উৎপাতের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে ঢিল ছোড়া, পাখি শিকার তালি দিয়ে পাখি ওড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। তাছাড়া জয়পাড়া লেকের কচুরিপানা পরিষ্কার না করার কারণেও সেখানে পাখি বসছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম পাখির আগমনে তেমন প্রভাব ফেলে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে দর্শনার্থীদের উৎপাতের পাশাপাশি আবহাওয়া পরিবর্তনও ভূমিকা রাখছে বলে জানান আরেক পাখি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনিরুল হাসান খান। তিনি বলেন, আবহাওয়ার ওপরই নির্ভর করে তাদের খাবার আসা-যাওয়া। তাই জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় কারণ।

আরেক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মনে করেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সরাসরি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে বিষয়টা এমন নয়। তবে ১০ তলা ভবন করার কারণে পাখির চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। পানি দূষণও পাখি আসা কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ। এর ফলে পাখির জন্য জলজ খাবার প্রস্তুত হয় না। তাছাড়া লেক ইজারা দেয়ার বিপক্ষে অধ্যাপক।

বাবা-মা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে ক্যাম্পাসেই থাকেন অরিত্র সাত্তার। চার বছর ধরে পাখি পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। তার মতে, পরিযায়ী পাখি কমে যাওয়ার মূল কারণ উৎপাত। অরিত্র বলেন, এবার পাখির সংখ্যা অনেক কম। জয়পাড়া লেকের দিকে সীমানা প্রাচীর না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে উৎপাত বেড়েছে। তাই সংরক্ষিত একটি লেক ছাড়া বাকিগুলোয় পাখি নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ লেকগুলো অন্যান্য সম্পদ দেখাশোনা করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ কমিটির প্রধান হয়ে থাকেন। লেক পরিষ্কার না করা, কমিটিতে প্রাণিবিশেষজ্ঞ না রাখা লেকগুলোর ঠিকঠাক তদারকি না করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব জায়গায় সীমানা প্রাচীর নেই সেসব জায়গায় প্রাচীর দেয়ার জন্য আলাদা প্রকল্প নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন।

আশির দশক থেকে জাবিতে পরিযায়ী পাখি আসা শুরু করে। করোনাকালে সেখানে সর্বোচ্চসংখ্যক পাখির দেখা মেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার বিল বাটান, বন বাটান, বড় সরালি, ধূসর বক, ইউরোশীয় চড়ুই শিকরে, সাইবেরীয় শিলাফিদ্দা ইত্যাদি পাখি দেখা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন