টেক জায়ান্টদের কর্মী ছাঁটাইয়ে ক্ষতির মুখে বৈশ্বিক গেমিং খাত

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিভাইসে গেম খেলছেন দর্শনার্থীরা ছবি: এএফপি

কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তি খাতে ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানই কর্মী ছাঁটাই করছে। আয় ব্যয়ে সামঞ্জস্য আনতে কর্মসংস্থানের সুযোগও কমানো হচ্ছে। সর্বশেষ অ্যালফাবেটের গুগল মাইক্রোসফট বড় ধরনের ছাঁটাই করেছে। অন্যদিকে টুইটার অধিগ্রহণ করে কর্মীর বড় অংশকে অব্যাহতি দিয়েছেন ইলোন মাস্ক। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমন পদক্ষেপের কারণে বিশ্বের গেমিং শিল্পও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে রয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনালনিউজ।

একটি পর্যায়ে এসে ভিডিও গেম লে অফস নামের একটি ওয়েবসাইট প্রতি সেকেন্ডে প্রযুক্তি খাতে ছাঁটাইয়ের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। সে সময় চারদিকে গুঞ্জন ওঠে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীরা বড় কোনো পণ্য বাজারজাতের আগে কর্মীদের নিয়োগ দেয়, হাড়ভাঙা খাটুনি আদায় করে। এরপর যখন পণ্য বা গেম প্রকাশ পায়, তখন গণহারে তাদের ছাঁটাই করা হয়।

২০২১ সালের পর ভিডিও গেম লে-অফ ওয়েবসাইটটি আর আপডেট করা হয়নি। তবে এরপর বড় ধরনের ছাঁটাই অব্যাহত ছিল। চলতি সপ্তাহে মাইক্রোসফট ১০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান কমিয়েছে। চীনের টেনসেন্ট হোল্ডিংসের মালিকানাধীন প্লাটফর্ম রায়ট লিগ অব লিজেন্ডস গেমটি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশনা, নিয়োগ এবং -স্পোর্টস বিভাগেও কয়েক ডজন ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। রায়ট ১৫০টি পদে নতুন করে নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। আগে যাদের বাদ দেয়া হয়েছে তাদের বিষয়টি এখন প্রতিষ্ঠানটির মাথাব্যথার কোনো কারণ নয় বলেও জানানো হয়।

গেম ইঞ্জিন সংস্থা ইউনিটি সফটওয়্যার জানায়, এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় প্রতিষ্ঠানটি ২৮৪ কর্মী ছাঁটাই করেছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির বিনোদন স্পোর্টস বিভাগ প্রভাবিত হয়েছে। অন্যদিকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েলের গেমিং কোম্পানি প্লেটিকা হোল্ডিং ৬০০-এর বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে।

বিপুল ছাঁটাইয়ের ঘটনায় আশ্চর্য হওয়ারও কিছু নেই। কেননা গত বছর অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য সবাই উদ্বিগ্ন ছিল। পাশাপাশি ভালো বেতনের আশায় গেমিং খাতের কর্মীরা এক হয়েছেন। ব্যাপারটি শুনতে খারাপ লাগলেও যেসব কারণে কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এক দশক আগেও তা অন্য রকম ছিল। তবে এটা সত্য, একটি গেম বাজারে আসার পর সেটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কিন্তু শুধু একটি গেম উন্মোচনের মাধ্যমে কর্মীদের চাকরির নিরাপত্তা বিষয়টি নির্ভরশীল নয়।

গত কয়েক মাসে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো এক লাখের বেশি কর্মসংস্থান কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। মহামারীর সময় ভালো আয় হলেও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বলে স্বীকারও করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অ্যামাজন, মাইক্রোসফট অ্যালফাবেট মালিকানাধীন গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কাছে অনুশোচনামূলক -মেইল পাঠিয়েছে। ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের একজন বিশ্লেষক মাইকেল প্যাচটার বলেন, আমি মনে করি না, এটি কোনো খেলার জিনিস নয়। এটি একটি প্রযুক্তিগত জিনিস। একটা সময় ছিল যখন গেমিং শিল্পকে মন্দা প্রতিরোধী বলে বিবেচনা করা হতো। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। বর্তমানে কনসোলের পেছনে থাকা মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিজের সহকারী অধ্যাপক লেইন নুনি বলেন, গেমিং শিল্প মন্দা প্রতিরোধী নয়। এটি সত্যিই বাজারে প্রতিক্রিয়াশীল। তবে বিশ্লেষক গবেষকরা আশা প্রকাশ করেছেন, গেমিং শিল্পে মন্দা থাকলেও চলতি বছর ভালো উন্নতি হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন