উন্নয়ন অধ্যয়ন

আমাদের পাঠ্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের

অধ্যাপক . রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন। সম্প্রতি উন্নয়ন অধ্যয়নে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, বিদেশে উচ্চশিক্ষাসহ বিষয়ের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়ে একাডেমিক পড়াশোনা চালু হয়। শুরুর গল্পটা জানতে চাই...

স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু হয়। যাত্রাকাল থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিভাগের ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তিনটি লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয়দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা, নতুন গবেষণা উদ্ভাবন এবং এমন নাগরিক তৈরি করা যারা জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে। তিন লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ সাজিয়েছি। পাঠ্যক্রমকে আমরা আউটকাম বেজড এডুকেশনের ভিত্তিতে গড়ে তুলেছি। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা তৈরিতে এমন শিক্ষা কাঠামো দরকার, যার মাধ্যমে তারা দক্ষ মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। এটি করতে গিয়ে উন্নয়ন অধ্যয়নকে আমরা নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছি। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ এবং পরিবেশ প্রতিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞানই উন্নয়ন অধ্যয়ন। যেটি উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মেলে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন ধারা তৈরি করতে পারে।

একজন শিক্ষার্থী উন্নয়ন অধ্যয়ন কেন পড়বে?

উন্নয়নশীল দেশগুলোয় উন্নয়ন প্রগতি আকাঙ্ক্ষী জনশক্তি দরকার। উন্নয়নের জন্য যেসব জ্ঞান আহরণ করা দরকার, সবই আমরা শিক্ষা দিচ্ছি। রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, পরিবেশ প্রতিবেশ বিদ্যার সমন্বয়ে একটি কমপ্রিহেনসিভ শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। তাই পাবলিক-প্রাইভেটসহ সব সেক্টরের চাহিদার সঙ্গে আমাদের সরবরাহের সম্মিলন ঘটেছে, যার ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের পরিমাণ ঋণাত্মক।

এটি একটি বড় অর্জন। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই বলা হয় বাজারে যে চাহিদা সেই চাহিদার তুলনায় দক্ষতাসম্পন্ন সরবরাহে গরমিল আছে। আমাদের তেমন সমস্যা নেই। বিভাগে একদিকে যেমন তাত্ত্বিক জ্ঞান দেয়া হয়, তেমনি কোনো সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ কীভাবে নিরসন করা যায় সেটাও আমরা শেখাচ্ছি। দেয়া হয় বিভিন্ন ব্যবহারিক প্রায়োগিক জ্ঞান। সবক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা আছে। প্রতিযোগিতায় কীভাবে টিকে থাকতে হয়, তাও শেখানো হয়। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। একটি সমস্যা কীভাবে ক্রিটিক্যালি চিন্তা করা যায়, সমস্যা নির্দিষ্ট করা যায় এবং নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে একটি সমাধান বের করা যায়, তা শিক্ষার্থীরা শিখতে পারে। আমাদের পাঠ্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা উন্নয়ন অধ্যয়নকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছি, তা অনেক দেশের জন্য দৃষ্টান্ত।

বিষয়ে পড়াশোনা করে কোথায় ক্যারিয়ার গড়া যায়?

উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থীদের আমরা যেভাবে গড়ে তুলি, তাতে সরকারি, বেসরকারি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেক্টর, ব্যাংক, বীমা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, থিংক ট্যাংক, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থাগুলোসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করার সুযোগ আছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, সুইসকন্টাক্ট, ব্র্যাক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি), পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), বাংলাদেশ নিউট্রিশাস অ্যাকটিভিটি প্রকল্পসহ দেশ-বিদেশের অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আমাদের শিক্ষার্থীরা সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের গুণ, মান, দক্ষতা এমন পর্যায়ে যে চাকরিজীবনে তাদের প্রমোশনও বেশি।

দেশে মাত্র ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনার সুযোগ আছে। কর্মক্ষেত্রে চাহিদার বিবেচনায় পড়ার সুযোগ পর্যাপ্ত কিনা?

মনে রাখতে হবে আমরা দক্ষ মানুষ তৈরি করতে পারছি কিনা। প্রবৃদ্ধি হতে হবে গুণগত। সে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করতে পারছে কিনা সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের মান নির্ধারণ করতে হবে। আমরা কত গবেষণা করতে পারলাম বা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে পারলাম তা বিবেচনা করতে হবে। গুণগত দিকটি যেমন বেশি দেখতে হবে, তেমনি এটি নিশ্চিত করতে হবে যে মানসম্পন্ন অনুষদ সদস্য আছে কিনা। এছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ভৌত অবকাঠামো লাগবে। কর্মক্ষেত্রে চাহিদা আছে, কিন্তু আমরা যে শিক্ষা দিচ্ছি সেটার মানও নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এমন হতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করে, অনুষদ সদস্যরা নতুন জ্ঞান তৈরি করেন এবং তারা শিক্ষার্থীদের দক্ষ নাগরিক হিসেবে তৈরি করেন। আমাদের যে প্রডাক্ট বাজারে যাচ্ছে তার মান ঠিক রাখতে পারছি কিনা, তার দক্ষতা কতটুকু সেটিই হচ্ছে নির্ণয়ের বিষয়। সংখ্যাগত পরিমাপের চেয়ে গুণগত মান মুখ্য বিষয়।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ কেমন এবং সেখানে কাজের সুযোগ আছে কি?

অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের খ্যাতনামা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি জায়গা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তারা সেখানে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করছে এবং বিশ্বের সেরা প্রকাশনী থেকে বই প্রকাশ করছে। ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর বড়সেসব জার্নালে তাদের গবেষণা প্রকাশ করছে।

কানাডা অভিবাসী পরিষেবা কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞ, অ্যামাজন লজিস্টিকস ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্টার্টআপ বিশ্লেষক, অস্ট্রেলিয়ান সরকারের সোশ্যাল সার্ভিস বিভাগের প্রজেক্ট ম্যানেজারসহ সেখানকার নানা পেশায় তারা যুক্ত হয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যে জায়গাতেই চাকরি করছেন, সেখানে যেমন ওই পেশার চাহিদা পূরণ করতে পারছেন, তেমনি তারা যে কর্মেই থাকুক না কেন স্বমহিমায় ভাস্বর। বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে সেখানে এখন অনেকেই চাকরি করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন