উন্নয়ন অধ্যয়ন

হতে চাইলে উন্নয়ন গবেষক...

ফিচার প্রতিবেদক

খন্দকার ওয়াহেদুর রহমান

পোস্টডক্টরাল গবেষক

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

নানা দৃষ্টিকোণ থেকে উন্নয়নকে বুঝতে হবে

আমি একজন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। ফলিত অর্থনীতিতে আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক পলিসিতে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে হিউম্যান ক্যাপিটাল প্রডাক্টিভিটি নিয়ে গবেষণা করছি। উন্নয়ন অর্থনীতির গবেষণায় ক্যারিয়ার গড়তে বেশকিছু বিষয় আমাকে সহায়তা করেছে। প্রথমত, একটি চমৎকার একাডেমিক প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক। মাইক্রোইকোনমিকস এবং ইকোনোমেট্রিক্সে প্রশিক্ষণ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনার সময় গবেষণার মৌলিক প্রশিক্ষণ পেয়েছি। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পিএইচডি গবেষণার সময় পেয়েছি আরো উন্নত প্রশিক্ষণ। উন্নয়নের বহুমাত্রিক এবং ঐতিহাসিক বোঝাপড়া থাকাও অপরিহার্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গাণিতিক যোগ্যতা, বিশেষ করে মাল্টিভেরিয়েট ক্যালকুলাস রৈখিক বীজগণিত। দুর্ভাগ্যবশত ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে আমার সময় গণিতের কোনো কোর্স ছিল না। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সময় মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের গণিতের পড়াশোনা এবং বাসায় নিজে নিজে অধ্যয়নের ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল। গবেষণায় আসতে হলে গবেষণাপত্র পড়ার পাশাপাশি নিজস্ব গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। ঢাবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক একটি স্নাতক থিসিস লিখতে হয়। কীভাবে গবেষণা করতে হয় সেগুলো শিখতে সহায়তা করে এটি এবং তারা পরবর্তী সময়ে পেশাদার গবেষক হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যায়। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে পেশাদারদের সঙ্গেও কাজ করতে হবে। আমি সৌভাগ্যবান যে ছাত্র অবস্থায় আইএফসি, আইপিআরআই, সুইসকন্টাক বাংলাদেশে গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে একজন উন্নয়ন অর্থনীতির গবেষক হিসেবে সামনে এগিয়ে যেতে অনেক সাহায্য করেছে।

আদ্রিনা জামিলী আদিবা

পিএইচডি গবেষক

ম্যাসাচুসেটস- অ্যামহার্স্ট ইউনিভার্সিটি

আমরা যা শিখি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে

আমি স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর অর্থনীতিতে পিএইচডি করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। কোয়ান্টিটেটিভ গবেষণার জগতে যুক্ত হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে থিসিসের সুযোগটি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিই। সময়ে আমি যে দক্ষতা অর্জন করেছি তা একজন ভালো একাডেমিশিয়ান হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এবং আমাকে ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। যেটি বিশ্বের প্রচলিত অর্থনৈতিক চিন্তাধারার বাইরে অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রথম দিন থেকেই উন্নয়ন অধ্যয়ন আমাকে শিখিয়েছে আমাদের চারপাশের সবকিছু নানা আঙ্গিকে মূল্যায়ন করা যায়। একজন নবীন গবেষক হিসেবে আমি আধুনিকীকরণের তত্ত্ব থেকে উন্নয়ন-পরবর্তী এবং তার পরও উন্নয়নকে সংজ্ঞায়িত করার বিবর্তন সম্পর্কে পড়ার কথা এখনো স্মরণ করি, যা আমাকে বুঝতে সহায়তা করেছিল যে উন্নয়নের ধারণাটি কতটা গভীর সর্বাঙ্গীণ। নবীনদের প্রতি আমার পরামর্শ উদার মনের মানুষ হতে হবে। আমাদের সামনে যা উপস্থাপন করা হয় এবং আমরা যা শিখি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। প্রচলিত মত-পথের সীমা ছাড়িয়ে যেতে হবে বহুদূর। একই সঙ্গে শেখার চিন্তা করার বিকল্প উপায়গুলোর সঙ্গেও মানিয়ে নিতে হবে। আমার প্রথম থিসিস লেখার শ্রমসাধ্য যাত্রা আমাকে একাডেমিক গবেষণার মূল বিষয়গুলোকেই শুধু শেখায়নি, বরং সত্যিকার অর্থে গবেষক হতে শিখিয়েছে।

লামিয়া মোহসীন

শেভেনিং স্কলার, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স

গণ্ডির বাইরে গিয়ে নিজেকে বদলে ফেলি

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের শেভেনিং বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে মাস্টার্স করছি। এর আগে কাজ করেছি গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায়। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট হিসেবে জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্প ইউএনডিপির বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামেও (সিভিএফ) কাজ করেছি। কপ ২৬ ২৭ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ হয়েছে। উন্নয়ন অধ্যয়নের একাডেমিক পড়াশোনা এবং সহপাঠ কার্যক্রম সমানতালে করতে গিয়ে আমার বহুমুখী কাজের দক্ষতা আয়ত্তে এসেছে, যা কর্মজীবনের যাত্রা অনেকটা মসৃণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকে আমি খুবই অন্তর্মুখী ছিলাম। পরিচিত গণ্ডির বাইরে পা রাখতে যারপরনাই অস্বস্তিতে ভুগতাম। কিন্তু শেষের দিকে নিজেকে অনেকটা বদলে ফেলি এবং কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে শিখি। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন, প্রজেক্টর সঙ্গে জড়িত হওয়ায় নেটওয়ার্কিং এবং কমিউনিকেশনের গুরুত্ব বুঝতে পারি। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার এবং জানার আগ্রহ থাকতে হবে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কাজে অংশগ্রহণ করে কমিউনিকেশন, লিডারশিপ, টিমওয়ার্ক ইত্যাদি সফট স্কিলস আয়ত্তে আনতে পারলে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য অবশ্যই লাভজনক হবে।   

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন